আমায় রসেবশে রাখিস, মা: খাদ্যরসিক রামকৃষ্ণ পরমহংস ও কিছু কথা

ঠাকুর রামকৃষ্ণ কতখানি ভোজনরসিক ছিলেন, যাঁরা প্রত্যক্ষদর্শী, তাঁদের বর্ণনা থেকেই জানা যায়। শিষ্য-ভক্তদের সবসময় বলতেন, "খালি পেটে ধর্মাচরণ হয়না।"

0
425

বিশ্বদীপ ব্যানার্জি: ঠাকুর রামকৃষ্ণ কতখানি ভোজনরসিক ছিলেন, শ্রীম-র “শ্রীরামকৃষ্ণ  কথামৃত” এবং প্রত্যক্ষদর্শী, তাঁদের বিবরণ থেকেই জানা যায়। শিষ্য-ভক্তদের সবসময় বলতেন, “খালি পেটে ধর্মাচরণ হয়না।” এদিকে মা কালীর কাছে প্রার্থনা করতেন, “মা আমায় শুকনো সাধু করিসনি। রসেবশে রাখিস, মা।”

আরও পড়ুন: গোবর্ধন পাহাড় কী সত্যিই ধারণ করেছিলেন কৃষ্ণ, পুরাণকে ছাপিয়ে বিজ্ঞান দেয় যে ব্যখ্যা

- Advertisement -

ঠাকুরের খাওয়া দাওয়া নিয়ে অনেক গল্প শোনা যায়। সাধনার মত খাওয়ার ব্যাপারেও একঘেয়েমী ভাল লাগত না তাঁর। বলতেন, ” আমার ভাব কী জান? আমি মাছ সবরকম খেতে ভালবাসি। আমার মেয়েলি স্বভাব। আমি মাছভাজা, হলুদ দিয়ে মাছ, অম্বলে মাছ, বাটিচচ্চড়ি এসব তাতেই আছি আবার মুড়িঘন্ট, কালিয়া, পোলোয়াতেও আছি।”

জিলিপি খেতে খুব ভালবাসতেন ঠাকুর। একদিন হয়ত লাগামছাড়া খাওয়া দাওয়া হয়েছে। পেটে একটা সর্ষের দানা ঢোকার-ও পথ নেই। সেই সময় পর্যন্ত রামকৃষ্ণ বলতেন, “তবে জিলিপির পথ আছে। জিলিপি হলে একখানা খেতে পারি।” এছাড়া সন্দেশ আর সুজির পায়েস খেতেও ভালবাসতেন ঠাকুর। রাতে দু-একটি লুচি দিয়ে সুজির পায়েস আর সকালে প্রসাদী ফল-মিষ্টি ছিল ঠাকুরের নিত্য আহার। ভক্তদের এ প্রসঙ্গে তিনি বলতেন, “মার নাম করি, তাই ভাল খেতে পাই।”

বরফ অর্থাৎ আইসক্রিম ঠাকুরের বড় প্রিয় ছিল। অন্যদিকে নারকেল নাড়ু-ও। মহিলা ভক্ত অঘোরমনি, যিনি “গোপালের মা” নামে পরিচিত, ঠাকুরের সঙ্গে দেখা করতে এলে দেদো সন্দেশ কিনে নিয়ে আসতেন। তাই দেখে ঠাকুর বলেছিলেন, “তুমি পয়সা খরচা করে সন্দেশ আন কেন? নারকেল নাড়ু বানিয়ে, তা-ই আনবে। আলু, বেগুন আর বড়ি দিয়ে লাউশাক বা সজনেডাঁটার তরকারি করে নিয়ে আসবে। তোমার হাতের রান্না খেতে বড় স্বাদ হয়।”

অঘোরমনি ঠাকুরকে নিজ আরাধ্য গোপাল জ্ঞান করতেন। গোপালের মত ঠাকুরকেও সন্তানস্নেহে ভরিয়ে দিতেন। উল্টোদিকে ঠাকুরও তাকে নিজের মায়ের থেকে কম কিছু মনে করেননি কোনওদিন। মা বলতে মনে পড়ল, আমাদের শ্রীমায়ের হাতের পাঁচমিশালি ডালও ঠাকুরের বড় প্রিয় ছিল। এই ডালের ফোড়ন প্রসঙ্গে বলতেন, “এমন সম্বরা দেবে ডালে যেন শুয়োর গোঙায়।”

অথচ এই ঠাকুরের-ই শেষ সময়ে খাওয়া দাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। গলায় ক্যান্সার, তাই কিছুই গিলতে পারতেন না। এদিকে মুখেও অরুচি, তাই প্রায় সর্বক্ষণ আমলকি চুষতেন। বলতেন, “পেটে এত খিদে যে মনে হয় যেন হাড়ি হাড়ি খিচুড়ি খাই। কিন্তু মা খেতে দিচ্ছেন না।”

আরও পড়ুন: বোনকে ফল বিলিয়ে দিয়েছিলেন, জানুন মা সারদার একটি মজার কাহিনী

এ সময় শ্রীমা পাতলা সুজির পায়েস করে খাওয়ানোর চেষ্টা করতেন। গলার ব্যথার জন্য সবসময় খেতে পারতেন না ঠাকুর। তবে একটি জিনিস আজও নিয়ম করে ভোগ দেওয়া হয় ঠাকুরকে। বিভিন্ন মশলা দেওয়া পান। আহারের পর পান এবং তামাকসেবন ছিল ঠাকুরের রোজনামচা। পানের মধ্যে থাকত সুপারি, জোয়ান, মৌরি, এলাচ কাবাবচিনি, লবঙ্গ প্রভৃতি মুখশুদ্ধি মশলা।