রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর বিশ্বভারতীর আশ্রমিক সংঘের সভাপতিও নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি

0
172

তিমিরকান্তি পতি, বাঁকুড়াঃ ব্রিটিশের বিরুদ্ধে তাঁর কলম ছিল অক্লান্ত। বাংলায় ‘প্রবাসী’, ইংরেজীতে ‘মডার্ন রিভিউ’ আর হিন্দিতে ‘বিশাল ভারত’ সম্পাদনা করেছেন তিনি। তিনি আর কেউ নন বাঁকুড়ার ভূমিপুত্র, বিশ্ব বরেণ্য সাংবাদিক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়। গত তিন দশকেরও বেশী সময়কার ধারাবাহিকতা মেনে সোমবার সকালে বাঁকুড়া জেলা প্রেস ক্লাবের উদ্যোগে ভারতীয় সাংবাদিকতার অগ্রপথিক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের ১৫৯ তম জন্মদিবস ও ‘সাংবাদিক দিবস’ যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে পালিত হল।

 ১৮৬৫ সালের ২৯ মে বাঁকুড়া শহরের পাঠক পাড়ার রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবা শ্রীনাথ চট্টোপাধ্যায় ও মা হরসুন্দরী দেবী। ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি বাঁকুড়া জেলা স্কুল থেকে এন্ট্রান্স, পরে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ, কলকাতা থেকে এফএ এবং সিটি কলেজ থেকে ইংরাজীতে অনার্স সহ বিএ পাশ করেন। ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাশ করেন। যদিও  তার আগেই ১৮৮৯ খ্রীস্টাব্দে রামানন্দ ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষিত হন। পরে ১৯১০ সালে তিনি ব্রাহ্ম সমাজের সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজের সভাপতি হয়েছিলেন। এছাড়াও তাঁর সঙ্গে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সুসম্পর্ক ছিল। পরে ১৯৪১ সালে রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর তিনি বিশ্বভারতীর আশ্রমিক সংঘের সভাপতিও নির্বাচিত হয়েছিলেন।

- Advertisement -

‘ধর্মবন্ধু’, ‘দাসী’,’ প্রবাসী’, ‘বিশাল ভারত’ ছাড়াও ১৯০৭ সালে তিনি প্রকাশ করেন ভারতবর্ষের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইংরাজি সাময়িক পত্রিকা ‘দ্য মডার্ন রিভিউ’। ১৯২৭ সালে হিন্দি মাসিক ‘বিশাল ভারত’ নামে আরো একটি পত্রিকা।  সাংবাদিক হিসাবে নির্ভীক, নিরপেক্ষ এবং দৃঢ়চেতা ছিলেন রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়। আর ঠিক সেই কারণেই তৎকালীন ইংরেজ সরকারের কাছে তাঁকে বহুবার জরিমানা দিতে হয়েছে। সমসাময়িক রাজনৈতিক নেতারা ছাড়াও রবীন্দ্রনাথ, আচার্য যদুনাথ সরকার প্রমুখরা নানান বিষয়ে পরামর্শ নিতেন। সাংবাদিকতা ও সম্পাদনা, সংবাদপত্র প্রকাশ ছাড়াও তিনি সাহিত্যিক হিসেবেও তৎকালীন সময়ে সমান জনপ্রিয় ছিলেন।

এদিন বাঁকুড়া শহরের পোদ্দার পাড়ায় রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের মূর্তিতে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ ভট্টাচার্য,  বাঁকুড়া পৌরসভার উপপৌর প্রধান হীরালাল চট্টরাজ সহ উপস্থিত বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত সাংবাদিকরা। পরে উপস্থিত সকলে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা সহকারে তাঁর পাঠক পাড়ার বাড়িতে গিয়ে পুস্পার্ঘ্য নিবেদন করে শ্রদ্ধা জানান।

  বাঁকুড়া জেলা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ ভট্টাচার্য বলেন, রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের জন্মদিনটি বাঁকুড়ার সাংবাদিকরা সাংবাদিক দিবস হিসেবে পালন করেন। ইতিমধ্যে তাঁর বসতবাড়িটি হেরিটেজ কমিশনের সদস্যরা ঘুরে গেছেন। এই অবস্থায় অবিলম্বে দ্রুততার সঙ্গে রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের বসত বাড়িটিকে হেরিটেজ ঘোষণার দাবি জানান তিনি। উপস্থিত বাঁকুড়া পৌরসভার উপ পৌরপ্রধান হীরালাল চট্টরাজ বলেন, ‘‘রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় সাংবাদিক-সম্পাদকের পাশাপাশি তিনি ছিলেন একজন প্রথম সারির স্বাধীনতা সংগ্রামীও।’’ তাঁর জন্মভিটেকে ‘হেরিটেজ’ ঘোষণার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলেও তিনি জানান।

আরও পড়ুন: ৮ জুন বাংলা বনধ! জঙ্গলমহলে পাল্টা আন্দোলনে আদিবাসী সমাজ

আরও পড়ুন: পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলা সাজানোর গুরুতর অভিযোগ, হাই কোর্টে যাচ্ছেন আন্দোলনকারী শিক্ষকেরা