কাশ্মীরে জঙ্গির গুলিতে শহিদ নদিয়াবাসীর খবরে শোকের ছায়া এলাকায়

0
107

নিজস্ব সংবাদদাতা ,নদিয়া: কাশ্মীরে পাকিস্তানে জঙ্গিদের গুলিতে শহিদ হন নদিয়ার তেহট্ট থানার রঘুনাথপুরগ্রামের সুবোধ ঘোষ (২৪)। শুক্রবার বিকেলে গ্রামের বাড়িতে খবর আসতেই দীপাবলীর আলোর রোশনাই যেন নিমেষেই অন্ধকারে পরিণত হল।

৪০ দিনের ছুটি কাটিয়ে গত জুলাই মাসেই কর্মক্ষেত্রে ফিরে গিয়েছিল গ্রামের ওই মিশুকে ছেলেটি। ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে আর্মিতে চাকরি পেয়েছিল সে। পাঞ্জাবে ট্রেনিং শেষ করে তার পোস্টিং হয়েছিল কাশ্মীরে। রঘুনাথপুর গ্রামের গৌরঙ্গ ঘোষ ও বাসন্তী ঘোষের একমাত্র সন্তান সুবোধ।

- Advertisement -

চাকরি পাওয়ার পরে টিনের ঘর পাকা হয়েছে, তবে তা এখনও অসম্পূর্ণ। আর এই একমাত্র ছেলে মৃত্যু সংবাদ যেন তাদের স্বপ্নকে নিমেষেই চুরমার করে দিয়েছে। গত নভেম্বর মাসে ১৯ তারিখে সুবোধের অনিন্দিতা ঘোষের সঙ্গে বিয়ে হয়। তাদের তিন মাসের একটি কন্যা সন্তানও আছে।

ডিসেম্বর মাসে বাড়ি ফিরে মেয়ের অন্নপ্রাশন দেওয়ার কথা বলেছিল সুবোধ। কিন্তু শুক্রবার ফোনে এই দুঃসংবাদ শোনার পরে মুহূর্তের মধ্যে যেন সবকিছু শেষ হয়ে গেল। একমাত্র ছেলের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে সুবোধের বাবা-মা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন।

মা বাসন্তীদেবী বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার রাতে ফোন করে সবার খোঁজ খবর নিয়েছিল। আমরা ঠিকমত চিকিৎসক দেখিয়েছি কিনা? সব কিছুরই খোজ খবর নিয়ে ছিল সুবোধ। আমরা চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলাম কি না? সেখানে কি হল, তাও জানতে চেয়েছিল। আমাদের বলেছিল শরীরের যত্ন নিতে এদিন সকাল থেকে ফোনে রিং হয়ে গেলেও কেউ ফোন তোলেনি। পরে সুইচ অফ হয়ে যায়।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘কাশ্মীর থেকে মেজর ফোন করে বৌমাকে দুঃসংবাদটা জানায়। বৌমার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে আমি শুনি এই দুঃসংবাদ। টালির ঘর ছিল আমাদের। ওর চাকরি পর দোতলা বাড়ি হচ্ছিল। কিন্তু সেটা এখানো অসম্পূর্ণ রয়ে গেল। সব কিছুই শেষ হয়ে গেল।’’

সুবোধের স্ত্রী অনিন্দিতার কথায়, ‘‘বৃহস্পতিবার রাতে ফোনে আমার সঙ্গে অনেক কথা হয়েছিল। মেয়ের ঠাণ্ডা যেন না লাগে।ওকে সোয়েটার কিনে দিতে হবে। ওর যেন শরীর খারাপ না হয়। মেয়েকে সব সময় চিকিৎসক দেখিয়ে নিও। ডিউটির শেষে প্রতিদিনই ফোন করতো। এদিন সকাল থেকে ফোন করলেও ও আর ফোন ধরেনি। পরে বিকালে একজন ফোন করে বলে আমার স্বামী শহিদ হয়েছেন।’’

তাঁর মতে, ‘‘খুব মিশুকে স্বভাবের৷ ছুটিতে বাড়ি আসলে গ্রামের সকলের সাথে সময় কাটাত। ও যে এভাবে চলে যাবে মেনে নিতে পাচ্ছেন না গ্রামের মানুষজন। সকলেই একটা প্রশ্ন এই ঘটনার দায় ভার কে নেবে। গ্রামবাসীরা চান যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে যারা আমাদের গ্রামের ছেলের অমূল্য জীবন কেড়ে নিয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সরকার উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।’’