ইসরায়েল-প্যালেস্তাইন সংঘাতের নেপথ্যের কাহিনী

ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে সংঘাত বহুদিনের।

0
201
প্রতীকী ছবি

খাস খবর ডেস্ক: করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত গোটা বিশ্ব। প্রতিদিন পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। বিশ্বের তাবড় দেশগুলি যখন করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করছে, সেই সময়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে ইসরায়েল এবং প্যালেস্তাইন। ওই দুই দেশের মধ্যেকার বিবাদ অবশ্য নতুন নয়। তবে গত কয়েক সপ্তাহে সেই বিবাদ চরমে উঠেছে। প্যালেস্তাইনের বিরুদ্ধে বড় সামরিক অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল। এক সপ্তাহে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলায় কমপক্ষে ১৪৯ প্যালেস্টাইনদের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৪১টি শিশুও রয়েছে।

ইসরায়েল এবং প্যালেস্তাইনের মধ্যে সংঘাত বহুদিনের। তবে কয়েক বছর যাবত দু’দেশের মধ্যে বড় কোনও ঝামেলা হয়নি। তবে গত কয়েক সপ্তাহে এই বিবাদ চরমে উঠেছে। নানাবিধ অত্যাধুনিক অস্ত্র ভাণ্ডার মজুত রয়েছে ইসরায়েলে। যা নিয়ে ওই দেশের সেনাবাহিনী পুরোদমে আসরে নেমেছে প্যালেস্তাইনের বিরুদ্ধে। লাগাতার বিমান হামলা, রকেট হামলা চলছে। বড় বড় বিল্ডিং ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। প্রাণ হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। আচমকা এই উত্তেজনার কারণ জানতে হলে মাসখানের আগের একটি ঘটনার চোখ বুলোতে হবে।

- Advertisement -
প্রতীকী ছবি

১৩ এপ্রিল পবিত্র রমজান মাসের প্রথম রাতে জেরুজালেমের আল–আকসা মসজিদ লাগোয়া ওয়েস্টার্ন ওয়ালে ইসরায়েলি প্রেসিডেন্টের বক্তব্য রাখার কথা ছিল। আজানের কারণে ইসরায়েলি প্রেসিডেন্টের বক্তব্যে সমস্যা হতে পারে এমনটা আঁচ করে ইসরায়েলি পুলিশের একটি দল মসজিদে ঢুকে পড়ে লাউড স্পিকারের তার কেটে দিয়েছিল। মসজিদের ৬ জন কর্মীর মধ্যে ৩ জন সেইসময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। এই ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন তাঁরা। তবে ইসরায়েলি পুলিশ অবশ্য এ ব্যাপারে মুখে কুলুপ এঁটেছে। উল্লেখ্য, ১৯৬৭ সাল থেকেই জেরুজালেম দখল করে রেখেছে ইসরায়েল।

জেরুজালেমের গ্র্যান্ড মুফতি শেখ একরিমা সাবরির মতে, ইসরায়েল এবং প্যালেস্তাইনের মধ্যে সপ্তাহখানেক ধরে চলা সংঘর্ষের নেপথ্যে রয়েছে মসজিদে পুলিশি অভিযানের ঘটনা। মসজিদে ইসরায়েলি পুলিশের ওই অভিযানের কারণেই পরিস্থিতি এতটা খারাপ হয়ে যায়। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের মতে, প্যালেস্তাইনের ওপর আধিপত্য বজায় রাখার জন্যই ইসরায়েলি সরকার লাগাতার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে ইসরায়েলের চোখে সন্ত্রাসবাদী দল দল হামাস প্যালেস্তানি আন্দোলনে নিজেদের অবস্থান আরও পাকাপোক্ত করতে চাইছে।

প্রতীকী ছবি

ওয়ার্ল্ড জায়োনিস্ট অর্গানাইজেশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও ইসরায়েলি পার্লামেন্টের সাবেক স্পিকার আব্রাহাম বার্গ বলেন, আল–আকসা মসজিদের ঘটনা ছাড়াও এর পিছনে অন্য কারণ রয়েছে। গাজায় বছরের পর বছর ধরে চলা অচলাবস্থা, পশ্চিম তীর দখল করে রাখা ও আরবদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আচরণের পরিণতিতেই এমন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে বলে মনে করেছেন তিনি। আল–আকসা মসজিদের জনকল্যাণ কর্মকর্তা বলেন, ১৩ এপ্রিল মসজিদের মাইকে আজান বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছিল ইসরায়েল। তবে মসজিদ কর্তৃপক্ষ তাতে রাজি হয়নি। এরপরই মসজিদে অভিযান চালায় পুলিশ।

অন্যদিকে তারও আগে ছয় প্যালেস্তানি পরিবারকে বাড়ি থেকে উৎখাত করার পর প্যালেস্তানি তরুণরা বিক্ষোভ শুরু করেন। জেরুজালেমের অন্যতম প্রবেশদ্বার দামেস্ক গেটের কাছে পপুলার প্লাজা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় পুলিশ। প্যালেস্তানিদের কাছে এটি বিষয়টি অপমানজনক ছিল। এর প্রতিবাদে ইসরায়েলি পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন প্যালেস্তানি তরুণরা। সংঘর্ষের ওই ঘটনার পরের সপ্তাহে প্যালেস্তানি তরুণেরা ইসরায়েলিদের ওপর হামলা শুরু করেন। এরই মধ্যে মসজিদে পুলিশি অভিযানের ঘটনা ঘটে। কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা এই উত্তেজনার চরম পরিণতিই হল ইসরায়েল-প্যালেস্তাইন সংঘর্ষ।