মুশারফের ‘নায়ক’ তালিবান এখন পাকিস্তানের ‘খলনায়ক’

0
124

খাস ডেস্ক: বেহাল অর্থনৈতিক অবস্থা! খাদ্যের অভাব, রান্নার গ্যাসের অভাব! ডিম সেদ্ধ করার পর্যন্ত গ্যাস নেই। পাকিস্তানের এহেন চিত্র আন্তর্জাতিক স্তরে সমালোচনার ঝড় তুলেছে। এর মধ্যেই পাকভূমির অন্যতম বৃহৎ শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে তালিবান। এমন একটি দল যার জন্মদাতাওই পাকিস্তান, আশ্রয় দিয়েছে পাকভূমি অথচ সেই পাকিস্তানই এখন তাঁর জন্ম দেওয়া সন্তানকে যেন সামলে উঠতে পারছে না। শুধু তাই নয়, পাকিস্তানই নয়, তালিবানদের(Taliban) সূচনায় বড় ভূমিকা পালন করেছে আমেরিকাও। ১৯৮০-এর দশকের ইতিহাসে নজর রাখলে জানা যাবে, পাকিস্তান এবং আমেরিকার মিলিত কূটনৈতিক ফলই হল এই তালিবান। আর বর্তমানে এই দুই দেশেরই বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলছে তালিবান। একদিকে আফগানিস্তানের ২০ বছর ধরে থাকা আমেরিকার সেনাদের বিরুদ্ধে সংঘর্ষে জয় লাভ করে আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল আর অন্যদিকে এখন পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলা।

তালিবানের(Taliban) জন্ম কিভাবে? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে আগে ১৯৮০র দশকের ইতিহাস ঘাঁটতে হবে। এই সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তানকে দখল করার চেষ্টায় মত্ত। এই ঠাণ্ডা যুদ্ধে সামিল ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও। মার্কিন মুলুক এই সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নকে আটকাতে আফগানিস্তানের ভূমিতে সেনা পাঠায়। সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে পাকিস্তান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নয়া কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়। আর সেই সিদ্ধান্তের বীজই হল তালিবান। এই দুই দেশ সিদ্ধান্ত নেয়, তাঁদের নিজেদের সেনা না পাঠিয়ে তারা একত্রে মুজাউদ্দিন সেনাদের অর্থ এবং অস্ত্র দিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করে। কারণ আমেরিকার সেনাদের এই দেশে পাঠানোর চেয়ে স্থানীয় এই মুজাউদ্দিন সেনাদের পিছনে অর্থ ব্যয় অনেক কম হত। তাছাড়া ব্যর্থতার দায়ভারও ঘাড়ে চাপত না আমেরিকার সেনাদের। অর্থাৎ নিজেদের ভাবমূর্তি এবং অর্থনীতি দুদিকে সামাল দিতেই এই মুজাউদ্দিন সেনাদের তৈরি করা হয়। এরপরে সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যায় তখনই এই মুজাউদ্দিন সেনারা একটি দল গঠন করে যার নাম হয় তালিবান। শুধু তাই নয়, আফগানিস্তানকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য পাকিস্তান ও আমেরিকা এমন প্রচুর দলের ফান্ডিং একত্রে করে। এরকমই কিছু তথ্য প্রাক্তন পাক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশারফ নিজে মুখে একটি সাক্ষাৎকারে দিয়েছিলেন। বহু পুরনো এই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, সোভিয়েত ইউনিয়নকে তাড়ানোর জন্য পাকিস্তানের পক্ষে মুজাউদ্দিনকে তৈরি করা হয়েছে, তালিবানদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, অস্ত্র দেওয়া হয়েছে এবং আফগানিস্তানে পাঠানো হয়েছে। ‘তালিবানরা আমাদের নায়ক, ওসামা বিন লাদেন আমাদের নায়ক’। এরকমও মন্তব্য করতে শোনা যায়।

- Advertisement -

তবে এখন প্রশ্ন হল, এই তালিবান(Taliban) নায়ক থেকে খলনায়ক হল কিভাবে? মার্কিন মুলুকে ৯/১১ এর হামলার পরে আফগানিস্তানে আমেরিকা সেনা পাঠায় এবং আল কায়দা ও তালিবানের বিরুদ্ধে হামলার সূচনা করে। এরপরেই মার্কিন সেনারা তালিবানের বহু সেনাকে ধ্বংস করে বলেও জানা যায়। আগামী ২১ বছর ধরে মার্কিন সেনারা আফগানিস্তান দখল করে তালিবানদের বিরুদ্ধে এই অভিযান চালাতে থাকে। কিন্তু অবশেষে মার্কিন সেনাদের আমেরিকায় ফিরে যাওয়ার পরেই তালিবানরা আফগানিস্তানে শরিয়া নিয়মের অধীনে ক্ষমতা দখল করে সরকার গঠন করে। একদিকে মার্কিন মুলুক অন্যদিকে পাকিস্তানের সঙ্গেও এখন শত্রুতার সম্পর্ক তালিবানদের। তবে আফগানিস্তানের তালিবান(Taliban) এবং তেহরিক-এ তালিবান বা পাকিস্তানি তালিবানদের মধ্যে পার্থক্য বর্তমান। কিন্তু আফগানিস্তান তালিবানের থেকেই জন্ম এই পাকিস্তানি তালিবানের। এইকদিকে আফগানে যেমন শরিয়া আইন জারি করে ক্ষমতা দখল করে ফেলেছে তালিবানরা। অন্যদিকে পাক তালিবানরাও পাকিস্তানের ভূমিতে শরিয়া আইন জারি করে দখল আনতে চাইছে। এই দুই তালিবান গোষ্ঠী আদতে আলাদা হলেও এদের শত্রু কিন্তু একই। যেমন আমেরিকার সেনাদের বিরুদ্ধে যে দলই হামলা চালিয়েছে তাদের আশ্রয় দিয়েছে এই দুই গোষ্ঠী। তবে বর্তমানের পটভূমিতে পাকিস্তানি তালিবান এবং আফগানিস্তানের তালিবান সরকার দুইয়েরই শত্রু খোদ পাকিস্তান।