বহুচর্চিত বাঁকুড়ার মেয়ে আকাঙ্খা শর্মা খুনের রায় ঘোষণা জেলা আদালতের

0
215

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাঁকুড়া: বহুচর্চিত আকাঙ্খা শর্মা খুনের ঘটনার রায় ঘোষণা করল বাঁকুড়া জেলা আদালত। মূল অভিযুক্ত উদয়ন দাসের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ওই ঘটনায় অভিযুক্ত উদয়ন দাসকে বাঁকুড়া পুলিশ ভোপাল থেকে গ্রেফতার করে।

পরে ওই বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি উদয়নকে বাঁকুড়া আদালতে তোলা হয়। তারপর থেকে জেলেই ছিল ওই অভিযুক্ত। উদয়ন দাসের বিরুদ্ধে বাঁকুড়া ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্টে অপহরণ,  খুন ও প্রমাণ লোপাটের অভিযোগ আনা হয়। মোট ১৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করে আদালত।

- Advertisement -

অবশেষে বুধবার ৩০২ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাস জেলে ঘোষণা করে আদালত। ২০১ ধারায় দুবছরের জেল দুহাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক মাসের জেলের সাজা ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

প্রসঙ্গত, সোশ্যাল নেট ওয়ার্কিং সাইটে ২০০৮ সালে বাঁকুড়ার আকাঙ্খা শর্মা ও ভোপালের সাকেতনগরের উদয়ন দাসের আলাপ হয়। তৈরি হয় ঘনিষ্টতা। ২০১৪ সালে দিল্লিতে আকাঙ্খা-উদয়নের প্রথম দেখা হয়। নিজেকে আমেরিকায় কর্মরত দাবি করা ভোপালের সাকেতনগরের ওই যুবক প্রেমিকা আকাঙ্খাকে সেই দেশের ইউনিসেফে চাকরির ভুয়ো নিয়োগপত্র পাঠায় ও পরে ২০১৬ সালের ২৩ জুন দিল্লিতে পৌঁছান আকাঙ্খা।

পরের দিন উদয়নের সঙ্গে তার ভোপালের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন। পুলিশি জেরায় উঠে আসা তথ্যানুযায়ী ২৭ জুন ওখানকার এক কালী মন্দিরে তারা বিয়ে করেন। এরপর আমেরিকায় নিয়ে না যাওয়া নিয়ে আকাঙ্খার সঙ্গে উদয়নের অশান্তি শুরু হয়। এই অবস্থায় ১২ জুলাই বাঁকুড়ায় ফেরার টিকিট কাটেন আকাঙ্খা।

বিষয়টি বুঝতে পেরে ১৫ জুলাই আকাঙ্খাকে শ্বাসরোধ করে খুন করে দেহটি একটি টিনের বাক্সে ভরে সিমেন্টের বেদী তৈরি করে উদয়ন। এতো সবের পরেও ৫ অক্টোবর উদয়ন বাঁকুড়াতে আকাঙ্খার বাড়িতেও আসে। আর মাঝে মধ্যেও আকাঙ্খার ফোন থেকে ম্যাসেজ আসত। এমনকি উদয়ন খুন হয়েছে সে বাড়ি ফিরছে এমন ম্যাসেজও আসে বলে খবর।

দীর্ঘদিন খবর না পেয়ে ৫ ডিসেম্বর বাঁকুড়া সদর থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন আকাঙ্খার পরিবার। পুলিশ ওই মোবাইল নম্বরের টাওয়ার লোকেশানের সূত্র ধরে জানতে পারে সাকেতনগরের ঠিকানা। সেখানে গিয়ে তদন্তকারী পুলিশ অফিসাররা দেখেন দিব্যি বেঁচে আছেন উদয়ন। ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি উদয়নের নামে বাঁকুড়া সদর থানায় অভিযোগ জমা পড়লে ১ ফেব্রুয়ারি বাঁকুড়া থেকে ভোপাল গিয়ে পুলিশ ২ ফেব্রুয়ারি অভিযুক্ত উদয়ন দাসকে গ্রেফতার করে।

ওই দিনই ভোপালের গোবিন্দপুরা থানার সাকেতনগরের উদয়নের বাড়ি থেকেই কার্যত সিমেন্টের মমি হয়ে যাওয়া আকাঙ্খার দেহাবশেষ উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনার পর তীব্র আলোড়ন তৈরি হয়। পুলিশি জেরায় উদয়ন স্বীকার করে আকাঙ্খাকে খুনের পাশাপাশি নিজের বাবা মাকেও খুন করে মাটিতে পুঁতে ফেলেছে সে।

৫ ফেব্রুয়ারি ছত্তিশগড়ের রায়পুরের সুন্দরগড়ের বাড়ির বাগান খুঁড়ে উদয়নের বাবা বীরেন্দ্র দাস ও মা ইন্দ্রাণী দাসের কঙ্কাল উদ্ধার হয়। নিজেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ দাবি করলেও আদপে মাধ্যমিক পাশ উদয়ন সম্পত্তির লোভেই মা বাবাকে খুন করে বলে পুলিশ জানতে পারে। এমনকি বাবা মায়ের জাল ডেথ সার্টিফিকেট তৈরি করে ছত্তিশগড়ের রায়পুরের তাঁদের নামে থাকা সম্পত্তি বিক্রিও করে ফেলে।

এছাড়াও ফেসবুকে উদয়নের দশ বারোটি ভুয়ো আইডির সন্ধান পান তদন্তকারী পুলিশ অফিসাররা। ৭ ফেব্রুয়ারি বাঁকুড়া আদালতে তোলা হয় উদয়ন দাসকে। সেই থেকে জেলেই ঠিকানা হয় তার। ৩০ এপ্রিল চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ। টানা তিন বছর বিচার পর্ব শেষে বাঁকুড়া আদালত বুধবার উদয়ন দাস দোষী সাব্যস্ত করে। এদিন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়।

এই রায় ঘোষণা হওয়ার পর আকাঙ্খার বাবা শীবেন্দ্রনাথ শর্মা সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মহামান্য আদালতের রায়কে সম্পূর্ন সন্মান জানিয়ে বলেন, ‘‘ওই ব্যক্তির সর্বোচ্চ সাজা হলেই ভালো হত। কারণ ওই রকম ভয়ঙ্কর মানুষ মুক্তি পেল আবার বহু বহু মনুষের ক্ষতি করতে পারে।’’

মা শশী শর্মা বলেন, ‘‘আমরা তো ফাঁসিই চেয়ে ছিলাম৷ কিন্তু জজসাহেব যে সাজা দিয়েছেন তাকে আমরা সন্মান জানাচ্ছি। আদালতের উপর তাদের বিশ্বাস রয়েছে৷’’ সরকারি পক্ষের আইনজীবি অরুণ চট্টোপাধ্যায় জানান, সর্বোচ্চ সাজা চেয়েছিলাম। বিচারক যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন। আসামী পক্ষের উকিল অভিষেক বিশ্বাস উদয়ন দাসের সঙ্গে আলোচনা করে তারা পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেবেন বলে জানান।