Durga Puja: উচ্চশ্রেণীকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এগিয়ে চলেছে সোনার বেনেদের পুজো

মা কী কেবল উচ্চবংশীয়র? তিনিই তো সকল জীবকে সৃষ্টি করেছেন। তাহলে কেন তাঁর কাছে যেতে পারবেন না সুবর্ণ বণিকেরা? শুভমবাবু জানালেন, ১৯৮৯ সালে এই জেদ থেকে ১৫৬টি পরিবার মিলে নিজেরাই শুরু করে দিল মাতৃ আরাধনা। যার অন্যতম স্থপতি ছিলেন কালীপদ দে, স্বর্গীয় শচীনন্দন দে, স্বর্গীয় রঞ্জিত সেন প্রমুখ।

0
309

বিশ্বদীপ ব্যানার্জি: সোনার বেনে, জাতে শূদ্র। তাই অধিকার ছিল না উঁচু বামুন-কায়েত আয়োজিত দুর্গাপুজোয় অংশগ্রহণের। বলতে গেলে এক প্রকার নিষিদ্ধই করা হয় মন্ডপ প্রাঙ্গণে প্রবেশ। ৩২ বছর আগে তাই ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙেছিল। এবং অবশ্যই খুশীর বাঁধও।

বাঁকুড়ার পাত্রসায়রে সেই থেকে শুরু সুবর্ণ বণিক সম্প্রদায়ের দুর্গোৎসব। যার শরিক মোট ১৫৬টি পরিবার। জানালেন উক্ত এক পরিবারেরই সদস্য শুভম দে। তাঁর কথায় গোটা ইতিহাসই উঠে এসেছে।

- Advertisement -

এ ইতিহাস শুরু মল্লবংশের অন্যতম নৃপতি জয় মল্লের মাধ্যমে। বাঁকুড়ার পাত্রসায়র সে সময় মল্লভূমের অন্তর্ভুক্ত। রাজা জয় মল্ল জনাকয়েক ব্রাহ্মণকে এ অঞ্চলে হাজার বিঘা জমি দিয়ে তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব দেন। এই হাজার বিঘে থেকে কালে কালে পরিবারটির নামই হয়ে যায়, ‘হাজরা’। এরা ছাড়াও আরও দুই জমিদার পরিবার ছিল। ব্রাহ্মণ— ঘোষাল এবং গন্ধবণিক— দত্ত।

আরও পড়ুন: মহিষাসুরমর্দিনী নয়, খানাকুলের জলকর রায়েরা মাতেন মা অভয়ার আরাধনায়

এই তিন পরিবার মিলে শুরু করে দুর্গাপুজো। যে পুজোতে অংশ নেওয়ার অধিকার ছিল না সেন, দে, পাল, পাইন, শীল, মল্লিক, আঢ্য, ধর, পাইন ইত্যাদি সুবর্ণ বণিক সম্প্রদায়ভুক্ত পরিবারের। এরা একই অঞ্চলে থাকত, তবু বিন্দুমাত্র মানবিকতা দেখানো হয়নি এদের প্রতি। পুরাকালে শূদ্রদের অস্পৃশ্য মনে করা হত। এখানেও ঠিক তেমনটাই ঘটেছিল। এদের বাড়ীর মেয়ে-বউদের ছিল না বরণসহ নানাবিধ স্ত্রী আচার পালনের উপায়।

এ কেমন বিচার! মা কী কেবল উচ্চবংশীয়র? তিনিই তো সকল জীবকে সৃষ্টি করেছেন। তাহলে কেন তাঁর কাছে যেতে পারবেন না সুবর্ণ বণিকেরা? শুভমবাবু জানালেন, এই অসহনীয়তা থেকে এক তীব্র জেদের জন্ম নেয়। আর ১৯৮৯ সালে এই জেদ থেকে ১৫৬টি পরিবার মিলে নিজেরাই শুরু করে দিল মাতৃ আরাধনা। যার অন্যতম স্থপতি ছিলেন কালীপদ দে, স্বর্গীয় শচীনন্দন দে, স্বর্গীয় রঞ্জিত সেন প্রমুখ।

বর্তমানে উদ্যোক্তাদের নাম পাল্টে গেলেও ঐতিহ্যের ধারাটি একইরকম রয়ে গিয়েছে। বর্তমানে গৌতম সেন, গোপাল দে, মেঘনাদ সেন, অরূপরতন দে, সোমনাথ দে, চন্ডীদাস দে, দিব্যেন্দু বিকাশ দে, প্রিয়নাথ সেন, সারথী সেন প্রমুখরা দায়িত্বে। পুজোর যা যা উপাচার, সব যথাযথ নিয়ম মেনেই হয়। মহালয়ায় চক্ষুদান, ইতিপূর্বে জন্মাষ্টমীতে কাঠামো পুজো দিয়ে শুরু। একচালার প্রতিমা না হলেও এখানে দেবীর সাজসজ্জায় সাবেকিয়ানার ছোঁয়া পাওয়া যায়। এ পুজোয় কোনও পশুবলি হয়না। এমনকি আখ বা চালকুমড়ো ইত্যাদিও না। কেবল মন্ত্র পড়ে মাষকলাই ছড়িয়ে দেওয়া হয়, বলা হয় সেটিই একপ্রকার বলি।

আরও পড়ুন: খচ্চরবাহিনী মহামারী: মল্লভূমের এক লৌকিক দুর্গার উপাখ্যান

দ্রোণ পুষ্প এবং চন্দন কাঠ সহযোগে সন্ধিপুজো আর নবমীতে হোমের রীতিও রয়েছে এ পুজোয়। শুভমবাবুর কথা অনুযায়ী, এরপর দশমীতে ঘট বিসর্জন শেষে ১৫৬টি পরিবারের সকল সদস্যরা একটি প্রীতিভোজে অংশ নেন। অতঃপর সন্ধ্যায় প্রতিমা নিরঞ্জনের মাধ্যমে উৎসবে বছরখানেকের বিরতি।