Nandigram EXCLUSIVE: ১৪ মার্চ কি হয়েছিল নন্দীগ্রামে, সবটাই কি গট আপ…

‘‘আমি যখন বললাম, মোবাইল নাম্বারটা চেক করুন। তিনি বলেছিলেন, তাহের আমাকে জ্ঞান দিচ্ছো! জলে বাস করে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করা যায় না! আমি আর প্রশ্ন করলাম না।’’

0
135

সুমন বটব্যাল ও মিলন পণ্ডা, কলকাতা ও নন্দীগ্রাম: প্রায় দেড় যুগ আগের ঘটনা৷ ২০০৭ সালের ১৪ মার্চ৷ নন্দীগ্রামে পুলিশের গুলিতে ১৪ জন নিরীহ গ্রামবাসী তথা আন্দোলনকারীর মৃত্যু এক লহমায় নাড়িয়ে দিয়েছিল বাম শাসনের শক্তভীতকে৷ রাত পোহালেই আবার একটা ১৪ মার্চ৷ সেদিনের জমি আন্দোলনের প্রধান মুখ শুভেন্দু অধিকারী এখন বিরোধী দলনেতা৷ অন্যদিকে রাজ্যের শাসনভারে সেদিনের বিরোধী দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এমন আবহে ১৭ বছর আগের ১৪ মার্চ নিয়ে কি বলছেন বাসিন্দারা? চোখ রেখেছিল খাসখবর৷

বস্তুত, একুশের ভোটে নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বনাম শুভেন্দু অধিকারীর লড়াইয়ের সময় থেকেই জমি আন্দোলনের গর্ভগৃহে ঘুরছে একাধিক প্রশ্ন৷ সেই প্রশ্নও আবর্তিত হচ্ছে মমতা বনাম শুভেন্দুর মন্তব্যকে ঘিরে৷ ফ্ল্যাশব্যাকে চোখ রাখলে দেখা যায়, ২০২১ সালের ২৯ মার্চ, নন্দীগ্রামের রেয়াপাড়ায় ভোটের ৭২ ঘণ্টা আগে প্রচার সভা থেকে নন্দীগ্রামবাসীর সামনে বিস্ফোরক তথ্য হাজির করেছিলেন তৃণমূল প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সিপিএম নয়, নন্দীগ্রামের গণহত্যা কাণ্ডের জন্য সরাসরি কাঠগোড়ায় দাঁড় করিয়েছিলেন শুভেন্দু এবং শিশিরবাবুকে৷ দাবি করেছিলেন, “আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আসছে, পুলিশের পোশাক পরে অনেকে গুলি চালিয়েছিল। হাওয়াই চটি পরে এসেছিল। এবারেও সেসব কেলেঙ্কারি করছে। এই বাপ-ব্যাটার পারমিশান ছাড়া সেদিন পুলিশ নন্দীগ্রামে ঢুকতে পারত না, আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি।”

- Advertisement -

যা শুনে সভাস্থলেই শুরু হয়েছিল গুঞ্জন, ‘তাই যদি হবে, তাহলে এতদিন বলেননি কেন মমতা!’ বিষয়টি আন্দাজ করে নেত্রী নিজেই বলেছিলেন, “ফেয়ার এনাফ, ভদ্রলোক বলে কিছু বলিনি। সহ্য করে গিয়েছি।” বস্তুত, সেই ২৯ মার্চ থেকেই ফের সামনে চলে এসেছে জমি আন্দোলনের প্রসঙ্গটি৷ যে প্রসঙ্গকে আরও উস্কে দিয়েছিলেন নন্দীগ্রামের প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা, জমি আন্দোলনের অন্যতম মুখ তথা শুভেন্দুর প্রাক্তন সঙ্গী আবু তাহের৷ নেত্রীর বয়ানের পর আবু তাহের যোগ করেছিলেন একটি তথ্য৷ ২০০৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পঞ্চায়েত অফিস থেকে ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ হয়ে নৃশংস ভাবে খুন হন নিশিকান্ত মণ্ডল। তৎকালীন পুলিশের রিপোর্টে দাবি করা হয়, মাওবাদীরা নিশিকান্ত মণ্ডলকে খুন করে।

আবু তাহেরের দাবি, ‘‘নিশিকান্ত মণ্ডলকে খুনের ঘটনায় পরবর্তীকালে আমরা জানতে পারি শুভেন্দু অধিকারীর লোক লাগিয়ে গুলি করে মেরে ছিল। কেন বলছি? নিশিকান্ত মণ্ডলের কাছে যে মোবাইলটা ছিল লাস্ট কল কে করেছিল? সেই নম্বর ছিল। সেই মোবাইল নম্বর ধরে খুনী কে খুঁজে পাওয়া যেত। তিনি (শুভেন্দু) মোবাইলটা নিয়ে নিয়েছিলেন। আমি যখন বললাম, মোবাইল নাম্বারটা চেক করুন। তিনি বলেছিলেন, তাহের আমাকে জ্ঞান দিচ্ছো! জলে বাস করে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করা যায় না! আমি আর প্রশ্ন করলাম না। শুধু তাই নয়, নন্দীগ্রামে বয়ালে সমর মাইতিকে লোক লাগিয়ে খুন করা হয়েছে। আনিসুর রহমানকে ফাঁসানো হয়েছে। এইভাবে একটার পর একটা খুন করে যাচ্ছে। এত বড় ভিলেন ভারতবর্ষে কোথাও দেখিনি। দেখতে সুন্দর, মিষ্টি মিষ্টি কথা। কিন্তু তার উপরে উঠে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে!’’

২০০৭ সাল৷ সিপিএমের দাপট তখন রাজ্য জুড়ে৷ সালিম গোষ্ঠীর কেমিক্যাল হাবের জন্য হলদি নদীর পাড়ে নন্দীগ্রামকে চিহ্নিত করেছিলেন সিপিএমের ডাকাবুকো নেতা-সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠ৷ জানুয়ারি থেকে তপ্ত হয়ে ওঠে নন্দীগ্রামের জমি৷ গড়ে ওঠে নন্দীগ্রাম ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি৷ রাস্তা কেটে শুরু হয় আন্দোলন৷ ওই বছরেরই ১৪ মার্চ পুলিশ জোর করে নন্দীগ্রামে ঢুকতে গেলে নিহত হন ১৪ জন গ্রামবাসী৷ অভিযোগ, পুলিশের সঙ্গে ছিল ‘চটি পরা পুলিশ’ও৷ ঘটনাচক্রে সে সময় শুভেন্দু অধিকারী, আবু তাহের এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তিনজনই ছিলেন একই শিবিরে৷ শুভেন্দু অনুগামীরা বলছেন, ‘‘একুশের বিধানসভা ভোটে নন্দীগ্রামের ফলই প্রমাণ করে দিয়েছে, এখানকার মানুষ কার সঙ্গে আছেন৷ ফলে দাদার নামে অকারণ কুৎসা করে কোনও লাভ হবে না৷’’

 স্বভাবতই প্রথমে দিদি, পরে তাহেরের মন্তব্যকে কেন্দ্র করে দু’বছর পরেও নন্দীগ্রামের বাতাসে ভাসছে নানা কথা৷ সবটাই তবে কি গটআপ? পুলিশ ঢোকার অনুমতি দেননি বুদ্ধবাবু? সিপিএমের রাজ্য কমিটির অন্যতম সদস্য তথা নন্দীগ্রামের নেতা হিমাংশু দাস ‘খাস খবর’কে বললেন, ‘‘নন্দীগ্রামে ওই সময় গণ আন্দোলনের নামে এলাকা দখল, ভাঙচুর, লুঠপাট, খুন খারাপি সব করা হয়েছিল৷ শিল্প হবে কি হবে না সেটাই ঠিক হল না, তার আগেই সব নিয়ে নেওয়া হবে, সব ভেঙে দেওয়া হবে বলে ওরা বিভ্রান্তি ছড়িয়ে মানুষকে ভয় ধরিয়েছিল৷৷ ওই সব পাপ এখন ওদের মুখ দিয়েই বেরুচ্ছে৷ সব একদিন সামনে আসবে, প্রমাণিত হবে আমরা নয়, ওরাই দায়ী ছিল৷’’ ১৭ বছরের ব্যবধানে তাই নতুন করে উত্তর খুঁজছেন একদা জমি আন্দোলনের গর্ভগৃহের বাসিন্দারা৷

আরও পড়ুন: ‘চাকরি দেব বলে টাকা নিয়েছি’ জনতাকে সাক্ষী রেখে স্বীকারোক্তি তৃণমূলের মন্ত্রীর