মোহভঙ্গ, বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ফেরার আবেদন আরও এক হেভিওয়েটের

0
240

খাস খবর ডেস্ক: দলবদলের সময় কেউ বলেছিলেন, ‘ওখানে দমবন্ধ হয়ে আসছিল’৷ কেউ বা বলেছিলেন, ‘যোগ্য মর্যাদা পেলাম না’৷ কারোর আক্ষেপ ছিল, ‘পছন্দমতো আসনে প্রার্থী করেনি তৃণমূল।’ এবার সেই দলবদুলরাই ফের পুরনো দলে ফেরার প্রক্রিয়া শুরু করলেন৷ শনিবারই তৃণমূলে ফিরতে চেয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে আবেগঘন টুইট করেন সাতগাছিয়ার প্রাক্তন বিধায়ক তথা বিধানসভার প্রাক্তন ডেপুটি স্পিকার সোনালি গুহ।

সোনালি গুহর পর এবার বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ফেরার ইচ্ছাপ্রকাশ করলেন আরও এক হেভিওয়েট নেত্রী। তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় নাম ছিল, তা সত্ত্বেও মালদহ থেকে কলকাতায় এসে বিজেপিতে নাম লেখান মালদহের হবিবপুরের জোড়া-ফুল প্রার্থী তথা মালদহ জেলা পরিষদের সদস্য সরলা মুর্মু। পরে ওই কেন্দ্রে প্রদীপ বাস্কেকে প্রার্থী করে তৃণমূল। বিজেপিতে যোগদানের সময় সরলার দাবি ছিল, বহুবার দলকে জানিয়েছিলেন, পুরাতন মালদহে প্রার্থী হতে চান তিনি। কিন্তু তৃণমূল তাতে কর্ণপাত করেনি। হবিবপুরের প্রার্থী করা হয়েছিল তাঁকে। সেই কারণেই দলত্যাগের সিদ্ধান্ত।

- Advertisement -

সেই সরলাই এবার অভিমান ভুলে তৃণমূলে ফেরার আবেদন জানালেন। একটি সংবাদমাধ্যমকে সরলা জানিয়েছেন, ভুল বুঝিয়ে তাঁকে বিজেপিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তিনি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছেন এবং সেকারণেই পুরনো দল তৃণমূলে ফিরে আসতে চান। জেলা নেতৃত্বকে সেকথাটাই জানিয়েছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীর বক্তব্য, সরলা মোটেই ভুল করে বিজেপিতে যায়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হেয় করা উদ্দেশ্যেই বিজেপিতে গিয়েছিল। ওকে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে রাজ্য নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নেবেন। আমাদের এই বেইমানদের সম্পর্কে আপত্তি আছে।

যুব তৃণমূলের জেলা সভাপতি প্রসেনজিৎ দাস বলেন, দলে ফিরতে চেয়ে সরলা আমাকে তাঁকে ফোন করেছিলেন। কৃষ্ণেন্দুর সুরেই সরলাকে দলে ফেরানোর ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে তিনি বলেন, কঠিন সময়ে যাঁরা দলকে ছেড়ে যায়, তাঁদেরকে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে কিন্তু দলের অনেক ভাবনাচিন্তা করা উচিত। এদিকে বিজেপির জেলা সভাপতি গোবিন্দচন্দ্র মণ্ডল বলেন, এবারের নির্বাচনে সরলা বিজেপির হয়ে যথেষ্টই পরিশ্রম করেছেন। তারপরেও উনি কেন এমন বললেন জানি না। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব। সরলার সঙ্গে কথা বলতে হবে।

উল্লেখ্য, কংগ্রেসের প্রতীকে মালদহ জেলা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন সরলা মুর্মু। তবে ২০১৮-র পঞ্চায়ের ভোটের পরপরই তৃণমূলে যোগ দেন তিনি। এবার তাঁকেই হবিবপুরে প্রার্থী করে তৃণমূল। যদিও ওই কেন্দ্রে লড়তে চাননি সরলা। হবিবপুরের বদলে পুরাতন মালদহ থেকে লড়াইয়ের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন তিনি। পুরাতন মালদহের টিকিট না মেলায় বেঁকে বসেন সরলা। তারপরই দলবদলের সিদ্ধান্ত নেন। প্রসঙ্গত, হবিবপুরে গেরুয়া শিবিরের প্রভাব ভালো। এবারের নির্বাচনেও এই আসন বিজেপিই পেয়েছে।

এর আগে বিধানসভার প্রাক্তন ডেপুটি স্পিকার সোনালি গুহও বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ফেরার আবেদন জানান। সাতগাছিয়ার প্রাক্তন বিধায়ক শনিবার টুইটারে তাঁর প্রিয় দিদির উদ্দেশ্যে লিখেছেন, “সম্মানীয়া দিদি, (Mamata Banerjee) আমার প্রণাম নেবেন। আমি সোনালি গুহ, অত্যন্ত ভগ্ন হৃদয়ে বলছি যে আমি আবেগপূর্ণ হয়ে চরম অভিমানে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে অন্য দলে গিয়েছিলাম। যেটা ছিল আমার চরম ভুল সিদ্ধান্ত। কিন্তু সেখানে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারিনি। মাছ যেমন জল ছাড়া বাঁচতে পারে না, তেমনই আমি আপনাকে ছাড়া বাঁচতে পারব না।’’

ওই একই চিঠিতে সোনালি লেখেন, “দিদি আমি আপনার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী, দয়া করে আমাকে ক্ষমা করে দিন। আপনি ক্ষমা না করলে আমি বাঁচব না। আপনার আঁচলের তলে আমাকে টেনে নিয়ে, বাকি জীবনটা আপনার স্নেহতলে থাকার সুযোগ করে দিন। ধন্যবাদান্তে, আপনার স্নেহের সোনালি গুহ (Sonali Guha)৷’’ সোনালি গুহ-র তৃণমূলে ফেরার আবেদনের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় কটাক্ষ ছুঁড়ে দিয়েছেন অনেকেই। এদিকে এই দুজনের পুরনো দলে ফেরা নিয়ে অবশ্য এখনই কোনও মন্তব্য করতে নারাজ তৃণমূলের নেতারা৷

এখানে উল্লেখ করা থাক, মোদী-শাহর বঙ্গ বিজয়ের রথকে ৭৭ থামিয়ে দিয়ে ২১৩টি আসন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ( Mamata Banerjee) হিসেবে হ্যাটট্রিক গড়ার মূহূর্তেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে দলবদলুদের প্রসঙ্গে শোনা গিয়েছিল, ‘‘যাঁরা ফিরে আসতে চান আসুন না, আপত্তি কিসের৷ সবাই একসঙ্গে কাজ করব৷’’ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তখন থেকেই শুধু সোনালি-সরলা নন, অনেকেই বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলের দিকে পা বাড়িয়ে রয়েছেন। এবিষয়ে বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যর কটাক্ষ, ‘‘ওরাই বলেছিলেন, ওখানে দম বন্ধ হয়ে আসছিল৷ আবার ওরাই ওখানে (তৃণমূল) ফিরতে চাইছেন৷ ভাল!’