‘বিষ্ণুমাতা’ কি নিছকই মুখ ফসকে বেরিয়ে যাওয়া শব্দ, পুরাণ কিন্তু অন্য কথা বলছে

0
139

বিশ্বদীপ ব্যানার্জি: হিন্দু দেবদেবীদের নাম করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নাম করেছিলেন বিষ্ণুমাতার। যা নিয়ে কম বিতর্কের সৃষ্টি হয়নি। এমনকি আজও সময়ে অসময়ে চর্চার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে মমতা উচ্চারিত এই শব্দটি। যদিও সমর্থক-বিরোধী, সকলেই একমত। মুখ্যমন্ত্রীর জিভ পিছলে বেরিয়ে গিয়েছিল শব্দটি।

আরও পড়ুন: দেবী মাতঙ্গী: এক সবুজ সরস্বতীর উপাখ্যান

- Advertisement -

সত্যিই কি তাই? বিষ্ণুমাতা কি সত্যিই নিছক মুখ ফসকে বেরিয়ে যাওয়া একটি শব্দ? হিন্দু পুরাণ কিন্তু অন্য কথা বলছে। অবশ্য এক্ষেত্রে সবার আগে একটি বিষয় পরিষ্কার করে দেওয়া প্রয়োজন। অনেকেই বিষ্ণুমাতা বলতে বৈষ্ণোদেবীকে মনে করছেন। কিন্তু নাঃ বৈষ্ণোদেবীর কথা বলা হচ্ছে না। বলা হচ্ছে, খোদ জগত-পালক বিষ্ণুর কথা-ই।

হিন্দু পুরাণ অনুসারে, বিষ্ণু একবার নারীরূপ ধারণ করেছিলেন। এই রূপ বিষ্ণুর মোহিনী অবতার নামে খ্যাত। সমুদ্র মন্থনের পর এই অবতার ধারণ করেছিলেন বিষ্ণু। মন্থনে উত্থিত অমৃত অসুরদের সাহায্য ছাড়া তোলার ক্ষমতা ছিল দেবতাদের। এদিকে অসুরদের ভাগও দেওয়া যাবে না। উপায়ান্তর না দেখে বিষ্ণু ‘মোহিনী’ নামের এক অপরূপ সুন্দরীর মূর্তি ধারণ করেন। যার সাহায্যে অসুরদের মোহিত করে অমৃতকুম্ভ ছিনিয়ে আনেন।

তারপর সেই অমৃত দেবগণের মধ্যে বিতরণ করতে থাকেন। একমাত্র স্বরভানু ওরফে ‘রাহু’ নামক অসুরই বিষ্ণুর ছল ধরতে পেরেছিল। সেও ছলের দ্বারা দেবতার রূপ নিয়ে অমৃত পান করতে বসে যায়। কিন্তু কপাল মন্দ! সূর্যদেব আর চন্দ্রদেব তাকে চিনতে পেরে জানিয়ে দিলেন বিষ্ণুকে। বিষ্ণু তৎক্ষণাৎই সুদর্শন চক্র দ্বারা রাহুর শিরোচ্ছেদ করেন।

কিন্তু এখানেই শেষ হয়ে যায় না বিষ্ণুর একমাত্র নারী অবতার— মোহিনী’র অধ্যায়। একাধিক পুরাণে কথিত, দেবাদিদেব মহাদেব মোহিনীর রূপে এতটাই মোহিত হন যে বিষ্ণুর কাছে এসে অনুরোধ করেন যাতে তিনি আবার মোহিনী রূপ ধারণ করেন। মহাদেব সেই রূপের সঙ্গে সঙ্গমে ইচ্ছে প্রকাশ করেন। এ সময়টা তিনি কার্যত নিজের স্ত্রী পার্বতীকে-ও ভুলে গিয়েছিলেন।

খাস খবর ফেসবুক পেজের লিঙ্ক:
https://www.facebook.com/khaskhobor2020/

সুতরাং, বিষ্ণুর এই মোহিনী অবতারকে বিষ্ণুমাতা বললে খুব ভুল হবে কি? এখানে যে বিষয় উল্লেখ না করলেই নয় তা হল, পশ্চিম ভারতে মোহিনী অবতার নিয়ে একটি ধারণা প্রচলিত। শিবের একটি স্থানীয় অবতার খাণ্ডবে’র সঙ্গিনী মহালাসা রূপে ধারণা করা হয় মোহিনীকে। অর্থাৎ বিষ্ণু পুরুষ আবার নারী-ও। এছাড়া পুরাণে তো একাধিকবার-ই বলা হয়েছে, কালী আর কৃষ্ণ আসলে আলাদা নন। একই‌। কাজেই, বিষ্ণুমাতা শব্দটি বোধহয় ভুল নয়।