রাত পোহালেই অক্ষয় তৃতীয়া, জেনে নিন তিথিটির পৌরাণিক তাৎপর্য

0
288

বিশ্বদীপ ব্যানার্জি: ‘মহাভারতে’ আছে, ১২ বছরের বনবাস এবং ১ বছরের অজ্ঞাতবাস শেষে পঞ্চপান্ডব ঘরে ফিরলে বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের তৃতীয় দিন ঋষি দুর্বাসা এসে তাঁদের কাছে ভিক্ষা চাইলেন। দ্রৌপদী সূর্যদেব কর্তৃক প্রাপ্ত ‘অক্ষয়পাত্রে’ তাঁকে খেতে দেন। এতে ঋষি মুগ্ধ হয়ে বলেন, “আজ অক্ষয় তৃতীয়া। যে এই দিনে বস্ত্র, ফল, ছোলার ছাতু, গুড়, জল এবং দক্ষিণা দিয়ে বিষ্ণু ভজনা করবে, অক্ষয় সম্পদ লাভ হবে তার।”

খাস খবর ফেসবুক পেজের লিঙ্ক:
https://www.facebook.com/khaskhobor2020/

- Advertisement -

‘অক্ষয়’ অর্থাৎ কিনা যা কখনোই ক্ষয়প্রাপ্ত হয়না। বৈদিক বিশ্বাসানুযায়ী, বৈশাখী শুক্লা তৃতীয়ায় অর্জিত ধন বা সৌভাগ্য কোনদিনই ফুরোয় না। অন্য একটি আখ্যান বলে, যুধিষ্ঠির পাশা খেলায় হেরে যাওয়ার পর দুর্যোধনের আদেশে দুঃশাসন দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ করতে চাইলে, শ্রীকৃষ্ণ অনন্ত-অক্ষয় বস্ত্র দান করে তাঁর সম্মান রক্ষা করেন। অতঃপর সেই পবিত্র তিথির নাম হয়ে গেল, ‘অক্ষয় তৃতীয়া’।

নাহ্, এতেই শেষ নয়। আরও একটি মতে, মহাদেবকে তুষ্ট করে যক্ষপতি কুবেরের নিরন্তর লক্ষ্মীলাভের হেতুই তৃতীয়টির নাম ‘অক্ষয় তৃতীয়া’। এবং সে উপলক্ষ্যেই দেবী লক্ষ্মী এবং গণেশকে সিদুঁর, পঞ্চগুঁড়ি, পঞ্চগর্ব্য, তিল, হরিতকী, ফুল, দুর্ব্বা, তুলসি, বিল্বপত্র, ধূপ, প্রদীপ, ধুনা, মধুপর্ক বাটি, আসনাঙ্গুরীয়, দই, মধু, চিনি, ঘি, পুজোর কাপড়, শাড়ি, নৈবেদ্য, কুচো নৈবেদ্য, সভোজ্য জলপূর্ণ ঘট, বস্ত্র, পাখা এবং দক্ষিণা সহকারে পুজো করার পর সোনার গয়না বা রত্ন ক্রয় করার চল হয়েছে।

একটি জনশ্রুতি বেশ জনপ্রিয়। ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার দিন বন্ধ করা কেদারনাথ, বদ্রীনাথ এবং যমুনেত্রী মন্দিরের দ্বার প্রতিবছর এদিনই খুলে দেওয়া হয়। দেখা যায়, যে ‘অক্ষয়-প্রদীপ’ ছয়মাস আগে দ্বার বন্ধের সময় রাখা হয়েছিল, সেটি তখনো জাজ্বল্যমান।

আরও পড়ুন: শ্রমিক দিবসে ১২৫ বছর পূর্তি রামকৃষ্ণ মিশনের, নেপথ্যে যে মনোমুগ্ধকর ইতিহাস

বস্তুতই, তৃতীয়াটির তাৎপর্য বহু। এদিনই জগন্নাথদেবের রথের নির্মাণকাজ শুরু হয়। এছাড়া আর যা যা আছে, প্রসঙ্গটি শেষ করার আগে, আসুন, এক নজরে দেখে নেওয়া যাক্—

(১) পুরাণ মতে, এদিনই সত্যযুগ শেষ হয়ে ত্রেতার শুরু; (২) জন্মগ্রহণ করেন বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার পরশুরাম; (৩) রাজা ভগীরথ গঙ্গাকে মর্ত্যে আনতে সক্ষম হন; (৪) মহাদেবের অহঙ্কার চূর্ণ, তারপর তাঁর ক্ষুন্নিবৃত্তি করতে আবির্ভূত হয়েছিলেন দেবী অন্নপূর্ণা; (৫) সখা সুদামা শ্রীকৃষ্ণের সাথে দ্বারকায় দেখা করেন, এবং কৃষ্ণ চালভাজা দিয়ে তাঁর সমস্ত দুঃখ-দুর্দশা দূর করেন; এবং সর্বোপরি (৬) বেদব্যাসের নির্দেশনায় ‘মহাভারত’ রচনা করতে আরম্ভ করেন গণেশ।