যৌন তৃপ্তি ও কামসূত্র  

0
1437

খাস ডেস্ক : যৌন সঙ্গম নয় যৌন তৃপ্তি নিয়েই কামসূত্র। সঙ্গম একটি শারীরিক ক্রিয়া, যেকোনো কেউ তাতে লিপ্ত হতে পারেন। কিন্তু তৃপ্তি বা pleasure হল এমন এক জিনিস যা মানুষের মনে প্রবেশ করে। যৌন তৃপ্তি অনেক বেশি স্থায়ী এবং সকলের জন্যই ভীষণভাবে উপযোগী। যৌন তৃপ্তি এমনই এক আনন্দ যা মনকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যেতে সাহায্য করে। কামসূত্রের লেখক বাৎসায়ন এই বইয়ের ভূমিকাতেও এই যৌন তৃপ্তির প্রেক্ষাপট তুলে ধরেছেন। বর্তমানের সমাজে আমরা যা সঙ্গম বুঝি তা কিন্তু সম্পূর্ণ আলাদা কামসূত্রের ব্যখ্যার থেকে।

- Advertisement -

কামসূত্রের বর্ণনা অনুসারে, নারী পুরুষের মধ্যে অন্তরঙ্গতা এবং তৃপ্তিই এনে দিতে পারে স্থায়িত্ব। আর সম্পর্কের স্থায়িত্ব এলেই সমাজে স্থিতি আসা সম্ভব। প্রাচীনকালে বিশ্বাস করা হত, যৌন উত্তেজনা বা তৃপ্তি যে পরিমাণ মেটাবলিজম তৈরি করে তা খেলাধুলার সময়ে তৈরি হওয়া মেটাবলিজমের চেয়ে অনেক বেশি। কারণ যৌন উত্তেজনার সময়ে শরীরের সব অঙ্গই কাজ করতে শুরু করে, হৃদস্পন্দন থেকে নিশ্বাস প্রশ্বাস এবং হরমোন সবকিছুই ক্রিয়াশীল হতে থাকে। আর এই উত্তেজনাকেই অন্তিম পর্বে বা ক্লাইম্যাক্সে নিয়ে যেতে পারলে জীবনবোধ তৈরি হতে পারে। তাই এই শক্তিকেই সর্বোচ্চ শক্তি হিসেবে গণ্য করা হয়েছে কামসূত্রতে। প্রাচীনকালে সমস্ত শাস্ত্রই ভগবানকে উৎসর্গ করে লেখা হত। তাই এই কামসূত্রও লেখা হয়েছে ঈশ্বরকে উৎসর্গ করেই।

কামসূত্র বা অন্যান্য প্রাচীন পুঁথি রুপক অর্থে এবং ছন্দ ও কাব্যের মাধ্যমে লেখা। তাই তাকে বুঝতে হলে অনেক গবেষণার প্রয়োজন। এমনকি অনেকের মতে, এই শাস্ত্র সাধারণ মানুষের বোঝার বাইরে। তবে কামসূত্রের ছবিগুলো সহজেই বুঝে যান সকলেই যেখানে বিভিন্ন ধরনের সেক্স পজিশনের ছবি দেখতে পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে অনেকেরই ভুল ধারণা হয় যে, কামসূত্র লেখা হয়েছে আসলে সেক্স পজিশনের ব্যাখ্যা দিতেই। আদতে তা একেবারেই ভ্রান্তধারণা। কারণ কামসূত্র যৌন তৃপ্তির উল্লেখ করে। বোঝানো হয় কিভাবে ঈশ্বরকে পাওয়া যেতে পারে তৃপ্তির মাধ্যমে। পাশাপাশি আরও একটি বিষয় জানা জরুরি, কামসূত্র কখনোই নির্দিষ্ট লিঙ্গের কথা বলে না অর্থাৎ এই শাস্ত্র বলে না যে একজন নারীই পুরুষকে তৃপ্ত করবে অথবা পুরুষই তৃপ্ত করবে নারীকে। শুধুমাত্র তৃপ্তি বা যৌন সন্তুষ্টিই এই শাস্ত্রের মুখ্য আলোচ্য বিষয়।

যৌন তৃপ্তি কি এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ তাই কামশাস্ত্রের মুখ্য বিষয়। এমনকি শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গকেও ব্যাখ্যা করা হয়েছে রূপক নাম ধরে। যেখানে নারীদের যৌনাঙ্গকে বলা হয়েছে চন্দন মহল এবং ক্লিটোরিস কে উল্লেখ করা হয়েছে মদন ছতরি বা The Umbrella of the Love God নামে। এই শাস্ত্রের সমস্ত পাতাতেই মহিলাদের ওপর জোর খাটানোর বিরধিতা করা হয়েছে। এখানে সমানাধিকার দেওয়া হয়েছে মহিলাদের। বলা হয়েছে, একজন মহিলার ওপর নির্ভর করছে কতটা যৌন উত্তেজনা সে নিতে সক্ষম। আরও একটি বিষয় উল্লেখ্য, কামসূত্রে যে ঈশ্বরকে আরাধনা করা হয় তা কিন্তু কামদেব নয়। জানলে অবাক হবেন, কামসূত্রের আরাধ্য দেবতা হলেন সরস্বতী। সরস্বতী হলেন সাহিত্য-সংস্কৃতির দেবী। তাই কামসূত্র মতে, একজন সাহিত্য-সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ পুরুষই সব থেকে বেশি মহিলাকে তৃপ্তি এনে দিতে পারে। কামসূত্র লেখা হয়েছে, নারীদের যৌন তৃপ্তি শেখানোর জন্য নয় বরং বলা আবশ্যক যে এই শাস্ত্র লেখার মুখ্য উদ্দেশ্যই হল নারীকে কিভাবে যৌন তৃপ্তি দেওয়া যায় তা পুরুষকে শেখানো। তাই এই শাস্ত্র আদতে পুরুষদের জন্যই লেখা।