মাধুকরীতে সবার প্রথমে একটি থান কাপড় পেয়েছিলেন প্রভু নিত্যানন্দ, সেই থেকে থানই পরানো হয় কলাবৌকে

চারটে তো মোটে দিন! তারপর ফের দৌড়ঝাঁপের রোজনামচায় ফিরে যাওয়া। স্বাভাবিকভাবেই পুজোর নামে উড়ু উড়ু করে ওঠে বাঙালির মন। তবে কেউ কেউ দিনগুলি একটু অন্যভাবেও কাটাতে পছন্দ করেন। তারা ভ্রমণের সঙ্গে সঙ্গে উৎসবের বাঙালিয়ানাটাও চান। এইসকল ব্যক্তিবর্গের জন্য খাস খবরের তরফে থাকছে বাংলার কিছু অভিজাত বাড়ীর ঠিকানা। আজ ষষ্ঠ পর্ব।

0
94

খড়দহের গোস্বামীবাড়ী (উঃ ২৪ পরগণা জেলা):

খাস খবর ডেস্ক: স্বয়ং নিত্যানন্দ মহাপ্রভুর নাম এই বাড়ীর সঙ্গে জড়িয়ে। কারণ তিনিই এ বংশের প্রতিষ্ঠাতা। এবং দুর্গাপুজোর প্রচলক। কথিত আছে, বৈষ্ণব হওয়ার দরুন পুজোর অর্থ সংগ্রহের জন্য মাধুকরীকেই তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ পন্থা মনে হয়েছিল। সেইমত বেরিয়ে পড়লে প্রথমেই একটি থান কাপড় পান এক বিধবা মহিলার থেকে। সেই থেকে আজ পর্যন্ত সপ্তমীর দিন নবপত্রিকাকে থান কাপড়ে সাজানো হয়ে আসছে “কুঞ্জবাটী” নামে পরিচিত গোস্বামীবাড়ীতে।

- Advertisement -

সার্বিকভাবে পুজোটি “নিত্যানন্দের দুর্গোৎসব” নামেই খ্যাত খড়দহ এলাকায়। এবছর যা পা দিচ্ছে ৪৯২ বছরে। আপাতত বংশের মেজো শরিকদের বাসস্থান “মেজোবাটী”তে হয় মা দুর্গার আরাধনা। উল্টোরথের দিন কাঠামোপুজো। অতঃপর দেবীপক্ষের শুরু থেকেই এখানে দেবী কাত্যায়নীরূপে‌ পূজিতা হন মা। অন্যান্য বনেদি পরিবারের মত এই বাড়ীতেও সাবেকি একচালার প্রতিমা, যেখানে সিংহের মুখ ঘোড়ার আদলে। তবে আশ্চর্যের বিষয় হল, লক্ষ্মী-সরস্বতী থাকলেও তাঁদের বাহনদ্বয় অদৃশ্য। সে জায়গায় একটি করে পদ্মফুল। আসলে লক্ষ্মী এবং সরস্বতী এখানে মায়ের দুই সখী জয়া এবং বিজয়া।

আরও পড়ুন: মন্দিরের ফেলে দেওয়া ছোলা বিক্রি করে ধনকুবের দুই ভাই, নয়া ইতিহাস লিখেছিলেন রাণাঘাটের মাটিতে

পুজোর আচারেও বৈচিত্র্য রয়েছে বৈকি। রীতি মেনে এখনও মহালয়ার আগে নবমী তিথিতে “মেজোবাটী”র ৺চন্ডীমাতা নিকটবর্তী শ্যামসুন্দর জিউয়ের মন্দিরে যান। সেখানে চন্ডীপাঠ শুনে প্রতিপদের দিন ফিরে এলে শুরু হয় পুজো। ষষ্ঠীর বোধনে মাকে বেদীতে স্থাপন করা হয়। এছাড়া সপ্তমীর দিন কলাবৌ স্নানের উল্লেখ তো আগেই করা হয়েছে। কলাবৌকে প্রাচীন রীতি মেনে থান পরানো হলেও তাতে সিঁদুরের লম্বা লম্বা দাগ কেটে দেওয়া হয়। বলা হয়, এটি সধবার চিহ্ন।

বৈষ্ণববাড়ী যখন, বোঝাই যাচ্ছে, এখানে পশুবলির চল নেই। কেবলমাত্র মাসকলাই বলি দেওয়া হয়। তাও দেবীর উদ্দেশ্যে নয়। তাঁকে ঘিরে থাকা অপদেবতারা এই বলি পেয়ে থাকেন। দেবীর জন্য আলাদা ব্যবস্থা। নবমীতে তাঁকে ভাত, শুক্তো, মুগঘন্ট, খিচুড়ি, বেগুনভাজা, পোস্ত, ধোঁকা, পরমান্ন, মিষ্টান্ন ইত্যাদি এবং দশমীর দিনে পান্তাভাত আর কচুর শাক ভোগ দেওয়া হয়।

আরো একটা কথা, দশমীর বিসর্জনেই কিন্তু উৎসব এখানে শেষ হয়ে যায় না। বিসর্জন শেষে বাড়ীর সকল সদস্য উপস্থিত হন শ্যামসুন্দর জিউয়ের মন্দিরে। সেখানে মোহন্ত শ্যামের পরিহিত কৌপিনের টুকরো সকলকে বেঁধে দেন। লোকশ্রুতি অনুযায়ী, খোদ নিত্যানন্দ প্রভুই এই প্রথা চালু করেছিলেন। যা তিনি মিলনের প্রতীক হিসেবে দেখতেন। এছাড়া এ পরিবারে ধুনো পোড়াবার প্রথাও চালু।

আরও পড়ুন: গ্রন্থাগার স্থাপন করেছিলেন বিদ্যাসাগর, কার্জন আসতেন বিলিয়ার্ড খেলতে

কীভাবে যেতে হবে: জেলা উত্তর ২৪ পরগণা হলেও খড়দহ কলকাতার একেবারেই কাছে। সুতরাং, যাওয়া আসা কোনও ব্যাপারই না। ট্রেনে যেতে চাইলে শিয়ালদহ থেকে মেইন লাইনের যেকোনও ল্যোকাল ধরে চলে আসুন খড়দহ স্টেশন। তারপর শ্যামসুন্দর ঘাটগামী অটো বা রিকশায় শিবনাথ হাইস্কুলের মোড়। এর কাছেই কুঞ্জবাটী। যদি সরকপথে আসতে চান, তাতেও সমস্যা নেই। বারাকপুর ট্র্যাঙ্ক রোড ধরে প্রচুর বাস খড়দহের ওপর দিয়ে যায়। যে কোনও একটায় চড়ে নামুন খড়দহ থানা স্টপেজে। সেখান থেকে রিকশা কিংবা টোটোতে কুঞ্জবাটী।

পরবর্তী গন্তব্য রাজবলহাটের রাজবল্লভী মন্দির।