করোনায় ব্যবহৃত ভারতে প্রস্তুত টেস্টিং কিটের ব্যবহার প্রশ্নের মুখে

0
266

নয়াদিল্লি: বিশ্বে করোনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক এক অন্য মাত্রায় পৌঁছে গেছে। সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের মাটিতেও থাবা বসিয়েছে এই ভাইরাসের গ্রাস। এই পরিস্থিতিতে এই ভাইরাস পরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত ‘টেস্ট কিট’ নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।

শনিবার দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রী ডা: হর্ষ বর্ধন একটি রূপরেখা জারি করেছেন। সেখানে স্পষ্ট উল্লেখ আছে যে দেশে যেসব ল্যাবরেটরিতে এই করোনা ভাইরাস পরীক্ষা করা হচ্ছে তারা যেন সেই পরীক্ষার জন্য দেশীয় যন্ত্র বা ইন্ডিয়ান টেস্টিং কিট ব্যবহার না করে। অবশ্যই ইউএসএফডিএ (USFDA) বা ইউরোপিয়ান সিই দ্বারা গৃহীত কিট বা যন্ত্রই ব্যবহার করতে পারবে। বর্তমানে কোনো ইন্ডিয়ান টেস্টিং কিটকে করোনা পরীক্ষার ক্ষেত্রে মান্যতা দিচ্ছে না ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ ভাইরোলজি (এনআইভি)। এখানেই দেখা গেছে দেশের একমাত্র কোসারা ডাইয়াগোনোস্টিক কোম্পানির কাছে এই ছাড়পত্র আছে।

- Advertisement -

এখানেই আরও সংশয়ের তৈরি হল। সারা দেশে যদি মাত্র একটি কোম্পানি এই কিট তৈরির বরাত পায় তাহলে তার চাহিদা ও বাজার মূল্য আকাশ ছোঁবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, এতদিন যে কিটগুলোর বাজার মূল্য ৪০০-৫০০ টাকা ছিল তা এখন প্রায় ৪৫০০ টাকায় পৌঁছেছে।

অপরদিকে বিশ্ব পরিস্থিতির যা চিত্র সেখানে বাইরে থেকে এই টেস্ট কিড আসা বন্ধ হয়ে গেছে। সেখানে দাঁড়িয়ে এটা আশা করাই যায় যে এনআইভি অন্য কোনো ভারতীয় কোম্পানিকে এই টেস্ট কিট প্রস্তুত করার অনুমতি দেবে এবং ডিসিজিআই-এর পক্ষ থেকে লাইসেন্স পাবে এবং তা বাজারে ছাড়া হবে। নাহেল এই টেস্ট কিটের বাজারে একচেটিয়া আধিপত্য পাবে কোসারা ডাইয়াগোনোস্টিক।

কি এই কোসারা ডাইয়াগোনোস্টিক কোম্পানি? নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ট ও গুজরাটের শিল্পপতি মেহুল সারাভাই এর পিতা কার্তিকেয় সারাভাই হলেন কোসারা ডাইয়াগোনোস্টিক কোম্পানির কর্ণধার। ট্রাম্পের গুজরাত সফরে তিনি খুব সামনের সারিতে ছিলেন এমনকি ডোনাল্ড ট্রাম্প ও মেলানিয়া ট্রাম্পকে সম্বর্ধনা জ্ঞাপনের সময় উত্তরীয় পড়িয়েছিলেন। এইখানেই প্রশ্ন উঠছে শুধু কি মোদী ঘনিষ্ঠতার সুবাধে কোনো পূর্বতন অভিজ্ঞতা ছাড়াই এই ‘টেস্ট কিট’ তৈরির বরাত পেল? শুধু ভারতে এই একটি মাত্র কোম্পানিরই সামর্থ্য আছে?

কিন্তু বাস্তব চিত্রটা বেশ আলাদা। আইআইটি দিল্লি নিজেদের সামর্থ্যে বর্তমান পরিস্থিতির নিরিখে এই কিট প্রস্তুত করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু নতুন নির্দেশিকার বেড়াজালে আটকে গেছে তাঁদের প্রচেষ্টা। বাজারের চাহিদা মেটাতে আসতে পারছে না সেইসব কিট। সূত্রের খবর, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজি এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় টেস্টিং কিট তৈরির চেষ্টায় আছে। কিন্তু তারপরও কি তারা সেটা বাজারে ছাড়তে সক্ষম হবে? নাকি রাজনীতি ও নির্দেশিকার বেড়াজালে আটকে যাবে তাঁদের প্রচেষ্টা?

প্রশ্ন উঠছে ভারতের বাজারে এই কঠিন পরিস্থিতিতে কি এই মূল্যবান বিষয় নিয়ে ব্যবসা শুরু হয়ে গেল? এইসব প্রশ্ন নিয়ে এবং কিটের বরাত পাওয়ার নিয়মের অস্বচ্ছতা নিয়ে এক জনৈক সাকেত গোখলে আরটিআই (RTI) করেছেন। মনে করা হচ্ছে, এই আরটিআই-এর উত্তর সামনে এলেই কেটে হয়ে যাবে ভারতের আকাশে জমে থাকা মেঘের ঘনঘটা।