মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরেও আতান্তরে ইউক্রেন ফেরৎ একাংশ পড়ুয়া

0
47

সুমন বটব্যাল, কলকাতা: আদৌ ভর্তি হতে পারব তো? কত টাকা দিতে হবে? এমন হাজারও প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে ইউক্রেন থেকে বাংলায় ফেরা প্রথম বর্ষের ৬৯ জন ডাক্তারি পড়ুয়া ও তাঁদের অভিভাবকদের মধ্যে৷

সূত্রের খবর, ন্যাশন্যাল মেডিক্যাল কাউন্সিলের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, ২০২১ সালের ব্যাচে মেডিক্যালের প্রথম বর্ষে সাকুল্যে শূন্য আসন সংখ্যা ১৬টি (২৮.০৪.২০২২)৷ অথচ ইউক্রেন ফেরৎ প্রথমবর্ষের ছাত্র সংখ্যা ৬৯! তাহলে বাকিদের কি হবে? কিভাবে তাঁদের ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে? ঘটনাচক্রে এই পড়ুয়াদের একাংশের অভিভাবকেরা সরকারি কর্মচারী৷ ফলে সরকারের কোপে পড়ার ভয়ে তাঁরা সরাসরি নাম প্রকাশ করছেন না৷ তবে অভি়যোগ করেছেন, ‘‘সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে প্রথম বর্ষের মেডিক্যাল পড়ুয়ারা৷ মুখ্যমন্ত্রী অভয় দিয়েছিলেন, যে সকলের ভর্তির ব্যবস্থা করে দেবেন৷ সেজন্য নবান্নে একজন আইপিএস অফিসারকে দায়িত্বও দিয়েছিলেন৷ পি ভি সেলিম নামে ওই অফিসার প্রতিটি বর্ষের পড়ুয়াদের নিয়ে পৃথক পৃথক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপও খোলেন৷ সেখানে সব ধরণের সাহায্যের আশ্বাস দেওয়া হচ্ছিল৷ কিন্তু আচমকাই বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে সেই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ বন্ধ হয়ে গিয়েছে৷ সেলিম সাহেবের ফোনও বন্ধ৷ ফলে পড়ুয়ারা আতান্তরে পড়ে গিয়েছেন৷’’

- Advertisement -

‘খাস খবরে’র তরফ থেকেও পি ভি সেলিমের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর ফোনটির সংযোগ পাওয়া যায়নি৷ কারণ, ওপাশ থেকে স্বয়ংক্রিয় মাধ্যমে জবাব এসেছে, ‘নম্বরটি উপলব্ধ নয়!’ এক অভিভাবকের কথায়, ‘‘ইউক্রেন ফেরৎ প্রত্যেকটি পড়ুয়া নিট কোয়ালিফাইড৷ ভাল নম্বর থাকলেও এসসি, এসটি কোটার জন্য এখানে ওরা পড়ার সুযোগ পাইনি৷ এদিকে বেসরকারি ক্ষেত্রে অনেক বেশি টাকা দিতে হবে৷ তাই বাধ্য হয়ে গত বছরের ডিসেম্বরে ওরা গিয়েছিল ইউক্রেনে৷ যুদ্ধের কারণে ফেব্রুয়ারিতে ফিরে আসে৷ কাউন্সিলিং চলছিল৷ মাঝপথে ফিরতে হল৷ মুখ্যমন্ত্রীর কথায় আমরা আশায় বুক বাঁধছিলাম৷ উনি বলেছিলেন টিউশন ফিজ দিতে হবে না৷ স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে৷ কারণ, প্রত্যেক পড়ুয়ার অলরেডি ইউক্রেনে খরচ হয়েছে৷ কিন্তু এখন শুনছি টিউশন ফিজ দিতে হবে৷ কিন্তু স্পষ্ট করে সেই টাকার অঙ্কটাও বলা হচ্ছে না৷ ইউক্রেন থেকে আসা পড়ুয়ারা কোন কলেজে যাবে, কোথায় ভর্তি হবে, সেটার কোনও সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই৷ এমনকি পিভি সেলিম যোগাযোগ করছেন না৷ গ্রুপও বন্ধ করে দিয়েছেন৷ স্বাভাবিকভাবে দুশ্চিন্তা বাড়ছে৷’’

বস্তুত, ইউক্রেন ফেরৎ পড়ুয়াদের সঙ্গে নিয়ে প্রথম সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, পড়ুয়ারা চাইলে নিজেদের বাড়ির কাছাকাছি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হতে পারবেন৷ সরকার সেই ব্যবস্থা করে দেবে৷ সূত্রের খবর, ইউক্রেন ফেরৎ দুর্গাপুরের দুই পড়ুয়া তাঁদের স্থানীয় একটি বেসরকারি কলেজে গিয়েছিলেন৷ সেখানে তাঁদের পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়, এব্যাপারে তাঁদের ভর্তি সংক্রান্ত কোনও নির্দেশিকা রাজ্য সরকার থেকে আসেনি৷ একই কথা শুনিয়েছেন শান্তিনিকেতন মেডিক্যাল কলেজের চেয়ারম্যান মলয় পিট৷ তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের এমন কোনও নির্দেশিকা আমরা পাইনি৷’’ যাদবপুরের কেপিসি মেডিক্যাল কলেজের পদাধিকারিক দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমাদের কাছে রাজ্য সরকারের নির্দেশিকা এসেছে৷ তবে আমাদের কলেজে কোনও শূন্য আসন নেই৷ কোনও পড়ুয়াও আসেননি৷’’

ওয়াকিবহাল মহলের মতে, ন্যাশন্যাল মেডিক্যাল কাউন্সিল এবং রাজ্য সরকার পরস্পরের মধ্যে কোনও সমন্বয় না থাকার ফলেই আতান্তরে ইউক্রেন ফেরৎ প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের অভিভাবকেরা৷ কারণ, অথৈজলে তাঁদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ৷

আরও পড়ুন: ‘মুকুল রায় বিজেপিতেই আছেন, তৃণমূলে যোগের কোনও বৈধতা নেই’