Durgapuja: এখনও লন্ডনের ‘ক্যামডেনের’ মিত্তলদের পুজোর ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন

0
43

ব্রিটেন: তখন ১৯৬৩ সাল। সেদিনের সময়গুলো হোক কিংবা আজ অবধি লন্ডনের “ক্যামডেন” প্রাঙ্গনের পুজো হোক না কেন। পুজোর আমেজর ছবিটা বদলায়নি এতটুকু।

তৎকালীন লন্ডনে বসবাসকারি কয়েকজন প্রবাসী বাঙালির হাত ধরে শুরু হওয়া এই প্রাচীন পুজোটা ৫৬টি শরৎ পেরিয়ে গেলেও ভালোলাগার স্মৃতিতে আজও ভরপুর। মহামারীর গ্রাসে গোটা পৃথিবী যখন টলোমলো ঠিক তেমন দিনেও “ক্যামডেন” পুজো কমিটির উদ্যোক্তারা উমার আরাধনায় বিন্দুমাত্র খামতি রাখেনি বরং বিশ্বকে রক্ষা করার প্রার্থনা জানিয়েছেন বারংবার।

- Advertisement -

আরও পড়ুন-ফাইনালে দলে ফিরতে পারেন রাসেল, সম্ভবত বাদ পড়ছেন সাকিব

সেদিন ইংল্যাণ্ড, নর্দান আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড যুক্তরাজ্যের এক এক করে অনেক পুজো মণ্ডপের অন্দরে বইছিল অতিমারীর অন্ধকার। স্তব্ধ ব্রিটেনে তখন কৈলাশ থেকে সপরিবারে মা উমা পা রেখেছিলেন টেমসের ধারে সুইস স্কটিশ লাইব্রেরির “ক্যামডেনের “সাজানো মাটিতে।

একথা সঠিক, “ক্যামডেনে” পুজো মণ্ডপের আভিজাত্যের গরিমার বর্ণনা শুধু তারাই দিতে পারে, লক্ষী মিত্তলদের পুজোর এমন আভিজাত্যের টানেই দেশ বিদেশের মিডিয়া ছুটে আসে এই লন্ডনে। পর্দায় সে দৃশ্য চোখেও পরে বারবার। পঞ্জিকা মতে “টেমসের” তীরের খুঁটি পুজো দিয়েই প্রতিবছর “ক্যামডেন” পুজো কমিটির যাত্রা শুরু হয় ষষ্ঠীর দিন।

সেদিন সকালে ” সুইস স্কটিশ লাইব্রেরির ” মণ্ডপে মায়ের বোধনের পদচিহ্ন আগমনীর বার্তা নিয়ে আসে সুদূর এই লন্ডনের মাটিতে। যুক্তরাজ্যের ৬৪টি পুজোর রেষারেষির মধ্যেও স্কটিশ লাইব্রেরির পূজামণ্ডপের ছত্রে বয়ে চলা সাবেকিয়ানা ভাবায় বাংলার কথা, শেখায় বাঙালি সংস্কৃতির কথা। একে একে ষষ্ঠী, সপ্তমী অষ্টমী নবমী পেরিয়ে দশমী এবারেও পুজোর পাঁচ দিনই মায়ের বরণ, অঞ্জলি, সন্ধিপুজো,কুমারী পুজো অবশেষে মায়ের বিসর্জনের বিদায়বেলায় মনখারাপের পালা। পুনরায় একবছরের অপেক্ষা।

এবারেও পূজামণ্ডপের অন্দরে থাকবে লালপাড় শাড়িতে বঙ্গতনয়া, ছেলেদের পরনে ধুতি -পাঞ্জাবী। ঢাক, ধুনোর গন্ধ ধুনুচি নাচ, শঙ্খ উলুধ্বনি সিঁদুর খেলা নিয়ে “সুইস স্কটিশ লাইব্রেরির” অন্দরে বইবে উৎসবের আনন্দধারা যার মেজাজটাই হবে পুরোপুরি অন্যরকম। একঝলকে দেখলে মনে হবে আহা ! এতো আমাদের সেই পুরোনো কলকাতা, লন্ডন তো নয়।

আরও পড়ুন-Russia’s invite: স্বীকৃতির চৌকাঠে তালিবান সরকার, রাশিয়ার আমন্ত্রণে সাড়া ভারতের

শুধু কি উৎসবের আনন্দ? প্রত্যেক বারের মতো এবারেও গানে গল্পে খাওয়াদাওয়ার আসর সাজিয়ে নিয়ে স্কটিশ লাইব্রেরির অলিন্দে ভারতীয় বাঙালির কব্জি ডুবিয়ে চলবে ভুরিভোজের পালা। এবছর “ক্যামডেন” মণ্ডপের সাংস্কৃতিক সন্ধ্যাগুলোকে মাতিয়ে রাখবে হাজার বছরের পুরোনো মনমাতানো বাংলার গান আর পন্ডিত সুব্রত মুখোপাধ্যায় এর কণ্ঠে মহিষাসুরমর্দিনীর সুরধ্বনির ঝংকার, চণ্ডালিকার আগমন ভানুসিংহের পদাবলীর পর্ব শেষ হয়ে হালফিলের বাংলা ব্যান্ডের মেহেফিল মন কাড়বে মণ্ডপের প্রতিটা দর্শকের। ষষ্ঠী থেকে দশমী লন্ডনের “সুইস স্কটিশ লাইব্রেরি “তখন ভালোবাসার ভাগ বসাবে এখানকার প্রত্যেক বাঙালির মনে।

লন্ডনের সর্বপ্রথম “ক্যামডেনে” দুর্গা পুজো বিশ্বের নজর টানে প্রতিবার প্রেসিডেন্ট ডক্টর আনন্দ গুপ্তের কথায়, “এতো বছর ধরে একইভাবে আমরা রীতি এবং পঞ্জিকা মতে পুজো করে আসছি, মায়ের আশীর্বাদ নিয়ে বাংলার শ্রেষ্ঠ উৎসব এবং সংস্কৃতির যুগলবন্দী এক সঙ্গে বেঁধে রেখেছে আমাদের। আমাদের বর্তমান এই প্রচেষ্টা আগামী প্রজন্মের হাত ধরেও বইতে থাকবে বছরের পর বছর।”

আরও পড়ুন-Atmanirbhar Bharat: বিজয়া দশমীতেই ৭ টি নতুন প্রতিরক্ষা সংস্থার উদ্বোধন করবেন মোদী

ভাবতেও বেশ লাগে কত ভালো কত খারাপ পেরিয়েও কলকাতা থেকে হাজারো মাইল দূরে কোনো এক শহরের দুর্গাপুজোর এমন ধরণের ছবিগুলোই বলে দেয় বাঙালি রয়েছে আজও তেমন, তা সেকালই হোক কিংবা একাল যা ব্যাকুল করে সব বাঙালিকে। “ক্যামডেনের” মিত্তলদের পুজো নিজের ধারাবাহিকতায় অক্ষুন্ন। এখন সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে ভালোবাসার উৎসবে সামিল হবার পুজোর আনন্দ বইছে ব্রিটেনের আকাশে বাতাসে।