অভাব অনটনে দিন কাটানো নদিয়ার পিতৃহারা সোমের মিলল স্থায়ী ঠিকানা

0
828

নিজস্ব সংবাদদাতা, নদিয়া: আক্ষরিক অর্থেই বাবা মারা যাওয়ার পর রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছিল বছর এগারোর সোম দেবনাথ। কখনও মন্দিরের চাতালে, কখনও বা লোকের বারান্দা। শেষ পর্যন্ত স্থানীয় একটি ক্লাবে। সেই ক্লাবে সাতদিন থাকার পর সদস্যরাই যোগাযোগ করে এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে৷ বুধবার তারাই সোমকে নিয়ে যায়। নবদ্বীপ বুইচারাপাড়ায় ভাড়া থাকত সোম দেবনাথ, তার বাবা ধনঞ্জয় দেবনাথ এবং মা। বাবা বাসের চালক ছিল।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আনুমানিক বছর দেড় আগে সাংসারিক অশান্তির কারণে সোমের বাবা গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হয়। তারপর থেকেই মা প্রায় মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। সোম স্থানীয় একটি নামি স্কুলে ষষ্ঠশ্ৰেণীর ছাত্র ছিল। আর্থিক অনটনের কারণে ভাড়া বাড়ি ছেড়ে সোম এবং ওর মা থাকত শুরু করল মন্দিরের চাতাল বা রাস্তায় বারান্দায়। কথাবার্তা এবং চালচলন খুবই সুন্দর ছিল। সেই কারণে স্থানীয় লোকজন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে তাকে। পিঠে ব্যাগ তাতে বই থাকত। এরপর সকাল সন্ধ্যা দুবেলায় লোকের কাছে হাত পেতে পয়সা চেয়ে নিত।

- Advertisement -

সেই পয়সা দিয়ে নিজেও খেত আবার মাকেও খাওয়াতো। লকডাউনের সময় পেটের খাবার জোগাড় করতে কলাও বিক্রি করেছে। এমনকি লকডাউন এদিক ওদিক থেকে বিভিন্ন সংস্থা বা পুরসভা দুবেলা খাবার দিয়ে যেত সোমকে। তবে মা থাকলেও তেমনভাবে খোঁজখবর নিত না ছেলের। এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াতেন মা। কখনও কখনও আবার দু’একদিন জন্য বেপাত্তা হয়ে যেতেন সোমের মা। সেগুলো পছন্দ ছিল না সোমের। মন মরা হয়ে রাস্তার পাশে চুপচাপ বসে থাকতে। দীর্ঘদিন ধরেই এইভাবে চলছিল। অবশেষে নবদ্বীপ ওলাদেবীতলার সবুজ সংঘ ক্লাবের ছেলেরা বেশ কয়েকদিন তাদেরকে ক্লাবে ঠাঁই দেয়।

বুধবার ক্লাবের সদস্যরা ওই কিশোরকে তুলে দেয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের হাতে। ক্লাব সদস্য সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, রাস্তায় ঘুরে ঘুরে সোম পয়সা তুলত৷ চোখে পড়ত এবং খুব বাজে লাগত। আর সকাল সন্ধ্যা এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াতো। দীর্ঘদিন ধরেই এগুলো দেখার পরে ভাবলাম। ছেলেটাকে যদি কোন ব্যবস্থা করা যায়। তাহলে হয়তো ওর ভবিষ্যত একটু ভালো হবে।

সেইমতো ক্লাবের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় চাইল্ড লাইনের সঙ্গে বুধবার তাদের হাতেই সোমকে তুলে দেয়। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যা মৌসুমী দত্ত বলেন, ‘‘আমাদের নবদ্বীপ বুড়োশিবতলা এই ক্লাবের এক সদস্য জানিয়েছিল। সাতদিন ধরে তাদের কাছে ছিল৷ আমরা এই কিশোরকে উদ্ধার করে নিয়ে যাচ্ছি। আমরাই ওকে চাইল্ড লাইনের হাতে তুলে দেব।’’