বিজ্ঞান শুধু ‘আশীর্বাদ’ নয়, চরম ‘অভিশাপ’ও- বলছেন ওরা

0
428

তিমিরকান্তি পতি, বাঁকুড়া: ‘বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ?’ এই বিতর্ক দীর্ঘদিনের। একটা সময় মাধ্যমিকস্তরের অগণিত ছাত্র ছাত্রী শুধুমাত্র এই বিষয়টার পিছনে কত কত সময় খরচ করেছে। খরচ করেছে দিস্তা দিস্তা খাতা-তার ইয়ত্তা নেই। কিন্তু বিজ্ঞান শুধু ‘আশীর্বাদ’ নয়, চরম ‘অভিশাপ’ও যে তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন মূলতঃ কৃষিপ্রধান এলাকা হিসেবে পরিচিত বাঁকুড়ার একটা বড় অংশের মানুষ।

গত কয়েক বছর আগেও গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে ছিল গোয়াল ভরা গরু। ধান রোপণের আগে লাঙল, মই দিয়ে জমি তৈরি, ধান পাকার পর তা কেটে জমি থেকে বাড়িতে আনার ক্ষেত্রে গাড়ি টানার জন্য সবেতেই প্রয়োজন পড়ত গরুর। কিন্তু সময়ের দাবি মেনে এখন সেসব অতীত। তার জায়গা নিয়েছে ট্রাক্টর, রোটার সহ অন্যান্য আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি।

- Advertisement -

অন্যদিকে বিজ্ঞানের সৌজন্যে কৃষিক্ষেত্রে কমেছে কর্ম সংস্থানের সুযোগও। গরুর লাঙলে জমি তৈরির পর সেই জমিতে ধান রোপণের কাজ করতেন কৃষি শ্রমিকরা। এমনকি ধান কাটা, বাঁধা ও সবশেষে ঝাড়ার কাজেও ডাক পড়ত তাদেরই। কিন্তু এখন সেই পথও বন্ধ। ধান রোপণ থেকে ঝাড়া এমনকি বাড়ির গোলায় তোলার কাজ পর্যন্ত হচ্ছে অত্যাধুনিক সব যন্ত্রের সাহায্যে। একই সঙ্গে শাক সবজি সহ অন্যান্য চাষাবাদেও এক ছবি। কম সময়ে ও সামান্য খরচে প্রয়োজনীয় কাজ হয়ে যাওয়ায় কাজ হারিয়ে এখন ‘বেকার’ জীবন কাটাচ্ছেন একটা বড় অংশের কৃষি শ্রমিক।

এই জেলারই বাসিন্দা সুব্রত পাল আক্ষেপের সূরে বলেন, আগে প্রায় প্রতিটি বাড়িতে একাধিক গরুর হাল (লাঙল) থাকতো, এখন তার জায়গা নিয়েছে ট্রাক্টর বা পাওয়ার ট্রিলার। আগামী প্রজন্ম হয়তো ‘গরুর হাল’ কি জিনিস জানবেই না। এসম্পর্কে তাদের ধারণা দিতে হলে ছুটতে হবে মিউজিয়ামে। একই সঙ্গে লাঙলে চাষ করলে যেভাবে কৃষি জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায়, ট্রাক্টর বা পাওয়ার ট্রিলারে তা হয় না। ফলে স্বাভাবিকভাবে ফসল উৎপাদনও কম হচ্ছে বলে তিনি জানান।

আরও পড়ুন: দুয়ারে টর্নেডো, দিঘায় বাঁধ ভেঙে প্লাবিত একাধিক গ্রাম, গৃহহীন শতাধিক পরিবার