আধুনিকতার যুগে বাতিলের তালিকায় নহবৎ সংস্কৃতি, উৎকণ্ঠায় ভুগছেন সানাই বাদকরা

0
3790

তিমিরকান্তি পতি, বাঁকুড়া: সানাই আজও বাজে। তবে আর ডাক পড়ে না সানাই বাদকদের। নব্য বিনোদনের ইঁদুর দৌড়ে হারিয়ে যেতে বসেছে বাঙালির নহবৎ সংস্কৃতি। বাঙালির আরও অনেক কিছুর সঙ্গে ‘বাতিলের তালিকা’য় পড়ে গিয়েছেন সানাই বাদকরাও।

একটা সময় ছিল যখন বিয়ে বাড়ি থেকে যেকোন মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান সানাইয়ের সূর মূর্ছণা ছাড়া যেন তা সম্পূর্ণ হতো না। এখন সে সব অতীত। সানাইয়ের সূর আছে, তবে আর ডাক পড়ে না সেই সব সানাই বাদকদের। যাদের ফুঁয়ের জাদুতে বাওরাঁ, সোহিনী বা সাহানার মিঠে মাদকতায় সূচনা হত নানা মঙ্গলকার্যের। আজ বিয়ে বাড়ি সহ অন্যান্য প্রায় সমস্ত মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানে তারাই যেন ব্রাত্য৷ তার জায়গা দখল করে নিয়েছে সস্তার সিডি এমপিথ্রি।

- Advertisement -

এখনও আছেন সানাই বাদকরা। তবে তাদের তেমন আর ডাক পড়ে না। এর মধ্যেও গত কয়েক বছরে খুচরা খাচরা কিছু ডাক যদি আসছিল, এবছর করোনা নামক এক ভিলেনের উপস্থিতির সৌজন্যে সে সুযোগও বন্ধ। ফলে একাকি ঘরে কিম্বা বাড়ির উঠোনে সানাইয়ে ফুঁ দিয়ে সূরমূর্ছণার ঝড় তোলেন নিঃসঙ্গ এক শিল্পী বাঁকুড়া শহরের উপকন্ঠে বিকনা গ্রাম পঞ্চায়েতের সেন্দড়া গ্রামের বছর পঁয়ষট্টির রঞ্জিত কালিন্দী।

একটা সময় ছিল যখন জেলার উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম এমনকি ভিন জেলার মানুষও যুবক রঞ্জিত কালিন্দীর কাছে। কারণ মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানে তার সানাইয়ের সূর ছাড়া অনুষ্ঠানটাই মাটি যে৷ এখন বয়সের ভারে অনেকটাই ন্যুব্জ সানাই বাদক রঞ্জিত কালিন্দী, সব কথা স্পষ্ট করে বলতেও পারেন না। যা বলেন তা পুরোটা বুঝে ওঠাও অসম্ভব।

তবে আমাদের ক্যামেরার মুখোমুখি হয়ে অনেক চাপা দুঃখকে চেপে রেখে সারল্যের হাসি ফুটে উঠল মুখ জুড়ে। তিনি যা বলেন তার সারমর্ম করলে দাঁড়ায় এখন আর তেমন ডাক আসে না। চলতি বছরে যে কটি বায়না হয়েছিল করোনার জেরে সেকটিও বাতিল। নতুন করে এই পেশাতে কেউ আসতে চাইছে না। বর্তমান যুব সমাজ জীবিকা নির্বাহের জন্য অন্য পথ খুঁজে নিচ্ছে বলে তিনি জানান। রঞ্জিত কালিন্দীদের হাত ধরেই হয়তো শেষ হয়ে যাবে একটা যুগের। আগামীর জন্য রেখে যাবেন শুধুই স্মৃতি। ভাবী প্রজন্ম বঞ্চিত হবে সানাই বা নহবৎ চাক্ষুষ করার মুহূর্তটিকে।