হারিয়ে যেতে বসেছে পুতুল নাচ, মোবাইল, ফেসবুকে মগ্ন নব প্রজন্ম

0
234

বসিরহাট: পাশ্চাত্য সংস্কৃতির যাঁতাকলে পড়ে, ঘরে ঘরে বোকা বাক্স ও অত্যাধুনিক মোবাইল সহজেই হাতের নাগালে আসায় আমরা গ্রামবাংলার সুপ্রাচীন ঐতিহ্যকে হারিয়ে ফেলতে বসেছি। এক সময় গ্রাম বাংলার মনোরঞ্জনের প্রধান উৎস ছিল পুতুল নাচ। কবির কবিতায় কলমে ফুটে উঠত পুতুল নাচের ইতিকথা। যদিও তা আজ ইতিহাসে পরিণত হতে বসেছে। গ্রাম বাংলার সুপ্রাচীন ঐতিহ্য পুতুল নাচের সংস্কৃতি ধরে রাখতে বসিরহাটে মহাকুমার স্বরূপনগর ব্লকের চারঘাট এলাকায় অনুষ্ঠিত হল গ্রামীণ সংস্কৃতি বইমেলা ১১। মেলার মূল আকর্ষণ পুতুল নাচ।

আরও পড়ুনঃ School Reopening: স্কুল খোলায় গড়িমসি, রাজ্যের অন্য ‘অভিসন্ধি’ দেখছেন নেটিজেনরা

- Advertisement -

আধুনিক সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে কচিকাঁচারা যখন মোবাইলের ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপ ইউটিউব খুলে সময় কাটাচ্ছে, মনের বিকাশ যেমন প্রতিহত হচ্ছে, শিশুমন মোবাইলের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে একটা জায়গায় সীমাবদ্ধ থেকে যাচ্ছে, ফলে, মানসিক ও শারীরিক জীবনে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে শিশুদের মন। তাই এবার নতুন সংযোজন খোলা আকাশের নিচে পুতুলনাচের আসর। শৈশব কিশোর মনের বিকাশ ঘটানোর মূল লক্ষ্য এদিন দেখা গেল মেলা প্রাঙ্গণে।

আরও পড়ুনঃ রণক্ষেত্র দেউচাপাচামি, খনি এলাকায় পুলিশকে লক্ষ্য করে গ্রামবাসীদের ইটবৃষ্টি

গ্রাম্য মেলা আর গ্রাম্য মেলা মানেই পুতুল নাচ। গানের তালে তালে ঐতিহ্যবাহী ঘটনার সঙ্গে বাদ্যযন্ত্র ও সুরের মূর্ছনায় পুতুলের নৃত্য। নদিয়া থেকে এক ঝাঁক পুতুল নাচের শিল্পী তাদের শিল্পকলা তুলে ধরবে। মোট ৭দিন ব্যাপী পুতুল নাচের আসর চলবে চারঘাট মেলা প্রাঙ্গণে। এই পুতুল নাচ দেখতে সীমান্ত গ্রামবাংলা থেকে কচিকাঁচারা ভিড় জমিয়েছে।

এই পুতুলনাচ দেখতে এসে এক ছাত্রী প্রজ্ঞা ব্যানার্জি বলেন, ‘অনেকদিন পরে পুতুল নাচ দেখতে পেয়ে ভালো লাগছে। পুরনো ইতিহাস শিল্পীরা শিল্পকলাকে পুতুলনাচের মধ্য দিয়ে সামনে থেকে দেখিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছেন।’ চারঘাট বইমেলা রেনেসাঁস সংস্কৃতি চক্রের উদ্যোক্তা ভৈরব মিত্র বলেন, ‘বহু পুরনো সংস্কৃতি ইতিহাস জড়িয়ে আছে এই পুতুলনাচে। এই সংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখার জন্য আমরা এই পুতুল নাচের আসর বসিয়েছি যাতে নতুন প্রজন্ম গর্ভ থেকে বেড়িয়েই মনের বিকাশ ঘটাতে পারে।’

শিল্পীদের কথায়, এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে গেলে আমাদের সরকারি সাহায্যের প্রয়োজন। এই শিল্পকলার সঙ্গে বহু শিল্পীরা জড়িত। নদিয়ার পুতুল নাচ শিল্পী নারায়ণ রায় জানিয়েছেন, ‘গ্রামবাংলায় একসময় এই সংস্কৃতি শিল্পকলা সব সময় দেখা যেত। এখন এই শিল্পের সঙ্গে কেউ আসতে চাইছে না। অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। এত পরিমান মোবাইলের নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে মানুষ, যার কারণে এই সংস্কৃতি প্রায় বিলুপ্তির পথে। আগে কোনও জায়গায় ১০থেকে ১৫, দিন এই পুতুল নাচের আসর বসত। এখন কোনও ক্লাব বা বিয়ে বাড়িতে কেউ ফোন করলে একদিনের জন্য আমরা যাই। যৎসামান্য মূল্য পাই। যত সময় যাচ্ছে ততই এই শিল্প সংস্কৃতি হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম-বাংলার।