সুজয় গুহ: সকাল সকাল কয়েকটা বাচ্চা ছেলে বটলাদার খেলার দোকানের সামনে জড়ো হয়েছে। দোকানী বটলাদার সহযোগী ছোকরা ব্যাট, বল আর যা যা খেলার সরঞ্জাম আছে সেগুলো দোকানের সামনে থেকে পিছনে নিয়ে যাচ্ছিল। ওদের মধ্যে একজন দোকানীকে প্রশ্ন করল, আঙ্কল আমরা তিনটে উইকেট নেব কত টাকা পড়বে? বটলাদা ফোনে কার সঙ্গে উইকেট নিয়েই কথা বলছিলেন। ফোন শেষ করে তিনি হেসে বললেন, তোমাদেরও উইকেট লাগবে! পরে এসো, উইকেট সব শেষ হয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন: ওঠ ছেমড়ি আজ তোর বিয়ে
সবচেয়ে কম বয়সী ছেলেটা বলল, সেকি? বিকেলে আমাদের উত্তর পাড়ার সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি ক্রিকেট ম্যাচ আছে। এই যে কালকে দেখলাম এখানে সার বেঁধে উইকেটগুলো রাখা আছে। এরই মধ্যে এতগুলো উইকেট বিক্রি হয়ে গেল!! কই আশেপাশে তো কোথাও ক্রিকেট ম্যাচ বা টুর্নামেন্ট হচ্ছে না?
বটলাদা বিস্ময় ভরা চোখদুটোকে গোলা পাকিয়ে ছোট ছোট ছেলেগুলোর দিকে তাকালেন। তারপর এদিক-ওদিক তাকিয়ে মাথাটা নিচু করে ফিসফিস করে বলল, কি বলছো তোমরা? রাজ্যজুড়ে মেগা ম্যাচ হচ্ছে। খোঁজখবর রাখো কিছু?
পাশ থেকে পাতলা চেহারার ছেলেটি বলল, কই আমরা তো কিছু জানতে পারলাম না। কেউ তো আমাদের মেগা ম্যাচের আমন্ত্রণপত্র দেয়নি। তাহলে তো আমরাও আমাদের টিমের নাম জমা দিতাম। এন্ট্রি ফ্রিজ কত?
দোকানী বললো, সে তো আমি জানিনা। উইকেট লাগলে তোমরা একটু পরে আসো, আমি দেখছি কি করা যায়। এখনই উইকেটের ট্রাক আসবে।
উইকেট ট্রাকে করে আসবে শুনে ঝাঁকড়া চুলওয়ালা মোটা ছেলেটি বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্ন ছুঁড়ল, আচ্ছা কাকু একটা খেলায় তো মোট ছটা উইকেট লাগে। আমাদের তল্লাটে তো দুটোর বেশি মাঠই নেই। এত উইকেট কে কিনবে?
শোনো এই সকাল সকাল তোমাদের এত কথার আমি উত্তর দিতে পারছি না। এখন কদিন আমি শুধু উইকেট বিক্রি করব। এই দেখছো না দোকানের সামনের যা কিছু অন্যান্য খেলার সরঞ্জাম, সব পিছনে পাঠাচ্ছি। ট্রাকে আসা উইকেট এখানেই জড়ো হবে। আর হ্যাঁ, মনে করে আসার সময় তোমাদের একজনের আধার কার্ডের জেরক্স সঙ্গে এনো।
কেন? উইকেট কিনতে আধার কার্ড কেন লাগবে? সবচেয়ে লম্বা ছেলেটি বেশ রেগে গিয়ে জানতে চাইল। দোকানী একগাল হেসে বলল, প্রশাসনের কড়া নির্দেশ। আধার কার্ড ছাড়া উইকেট বিক্রি করা যাবে না।
হঠাৎই একাধিক মোটরবাইকে চড়ে ধোঁয়া উড়িয়ে আটটা দশটা ষণ্ডা মার্কা লোক বটলাদার দোকানে হাজির। দাদা উইকেট কি এলো? বটলাদার কালো মুখ দেখে আর দোকানে একটাও উইকেট না দেখতে পেয়ে লোকগুলো প্রায় ধমকে সুরে বলল এক ঘন্টা বাদে আসছি। তার মধ্যে উইকেট না পেলে আপনাকেই তুলে নিয়ে যাব। কথাগুলো শেষ হতে না হতেই, ঠিক যেভাবে ঝড়ের গতিতে ওরা এসেছিল সেভাবেই আবার ফিরে চলে গেল।
উইকেটের এত চাহিদা দেখে ছেলেগুলি পর পর প্রশ্ন ছুঁড়ল, আচ্ছা এই কাকুরাও কি মেগা ম্যাচ খেলবে? এরাও কি আধার কার্ড জমা দিয়ে উইকেট কিনবে? আচ্ছা আঙ্কেল তিনটে উইকেট কত পড়বে তুমি তো বললে না? আমরা কি টাকাটা আগে দিয়ে যাব? বটলাদা কপালের ঘাম জামার হাতায় মুছে অস্ফুট স্বরে শুধু বলল, কত টাকা পড়বে বিকেল বেলাতেই বলতে পারব। গতকাল এক একটা উইকেট ২০০ টাকায় বেচেছি। তাও ধরে রাখো আজকে তিনটে উইকেট কম করে ৭০০ টাকা পড়বেই।
বল কি আঙ্কল, এই তো ছমাস আগে আমরা উইকেট কিনলাম এক একটা তিরিশ টাকা করে! তাও এই যে এই লম্বু এত জোরে বল করেছে যে উইকেটটা ভেঙ্গে গেল। না হলে ওই উইকেটগুলো আরো ক’দিন চলত।
দোকানদার বাচ্চা বাচ্চা ছেলেগুলোর হরেকরকমের প্রশ্নে জেরবার হয়ে অধৈর্য হয়ে পড়লেন। বিরক্ত হয়ে বললেন, শোনো, বল লাগলে উইকেট ভাঙবেই। কিন্তু নতুন উইকেট যেগুলো আসছে সেগুলো শাল গাছের ডাল থেকে বানানো হচ্ছে। পিঠে পড়লেও সহজে ভাঙবে না, পিঠ ভাঙ্গলেও হবে না কোন কেস, এই অস্ত্রের প্রয়োজন নেই লাইসেন্সের, তাই এত বিক্রি। আর একটা কথা, তোমাদের এখন খেলবার সময় নয়, এখন খেলবে বড়রা। তোমরা এখন বাড়ি ফিরে মন দিয়ে পড়াশোনা করো। জুলাইয়ের ৮ তারিখের পর আবার খেলা শুরু কোরো।
খাস খবর ফেসবুক পেজের লিঙ্ক:
https://www.facebook.com/khaskhobor2020/
দোকানী বটলাদার উপদেশ ছেলে-পিলেগুলোর মোটেও পছন্দ হলো না। যাবার সময় বলে গেল আমরা কিন্তু দুপুরবেলাতেই আসছি। বিকেলে আমাদের উত্তর পাড়ার সঙ্গে ম্যাচ আছে। প্রেস্টিজ ফাইট। আর আমরা কিন্তু উইকেট কিনব ৩০ টাকা করেই। কোনও আধার কার্ডের প্রতিলিপিও দিতে পারবো না।
বটলাদা এবার হেসেই ফেললেন, নিজের মনেই বললেন সত্যিই তো “প্রেস্টিজ ফাইট”।