মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর দল কি আদৌ আদিবাসীদের কথা ভাবেন, প্রশ্ন তুললেন অনির্বাণ

মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, ওকে বকে দেওয়া হয়েছে! পরের বার হলে অ্যাকশন নেওয়া হবে! অর্থাৎ আদিবাসীদের ক্ষেত্রে এমনটা করা যেতেই পারে, এটাই এদের মানসিকতা!

0
44
Anirban Ganguly

দেবী ভট্টাচার্য, কলকাতা: সাড়ে তিন বছর আগে গরমের এক দুপুরে আচমকা জঙ্গলমহলে শুকিয়ে গিয়েছিল শাসকের মুখের হাসি৷ পরিবর্তে ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার রুক্ষ-তল্লাটে উঠেছিল গেরুয়া আবিরের ঝড়৷ একুশের বিধানসভায় শাসক সেই ড্যামেজ কন্ট্রোলে সক্ষম হলেও এলাকার বর্তমান রাজনৈতিক চিত্র অন্য আভাস দিচ্ছে৷ উনিশের লোকসভা ফলের পুনরাবৃত্তি তেইশের পঞ্চায়েতে হবে কি না, চর্চা শুরু হয়েছে পাহাড়ে জঙ্গলে ঘেরা তল্লাটে৷ ঝটিতি সফরে এরাজ্যে এসে সেই জল্পনাকেই তাতিয়ে গেলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা তথা এরাজ্যের কোর কমিটির অন্যতম সদস্য ড: অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায় (Anirban Ganguly)৷

আইসিসিআরে দলীয় কর্মসূচি শেষে একান্ত সাক্ষাৎকারে ‘খাসখবর’কে অনির্বাণ বললেন, রাষ্ট্রপতি সম্পর্কে তৃণমূলের মন্ত্রী অখিল গিরির করা কুরুচিকর মন্তব্য কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়৷ বরং আদিবাসী জনজাতির সম্পর্কে দলের অবস্থানটাই স্পষ্ট করেছেন অখিল৷ এবং ‘ক্ষমা প্রার্থনা’র মোড়কে আদতে অখিলের পাশে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রীও পরোক্ষে বুঝিয়ে দিয়েছেন, ‘‘এই সরকার আদিবাসীদের ভোট নিয়ে চিন্তিত, কিন্তু তাঁদের জীবন-জীবিকা ও বেঁচে থাকার মানোন্নয়ন নিয়ে ছিটেফোঁটাও ভাবিত না৷’’

- Advertisement -

অনির্বাণের কথায়, ‘‘ভারতের রাষ্ট্রপতি সম্পর্কে পশ্চিমবাংলার একজন ক্যাবিনেট মন্ত্রী (অখিল গিরি) যে মন্তব্য করেছেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, ওকে বকে দেওয়া হয়েছে! পরের বার হলে অ্যাকশন নেওয়া হবে! অর্থাৎ আদিবাসীদের ক্ষেত্রে এমনটা করা যেতেই পারে, এটাই এদের মানসিকতা! জনজাতি সমাজের বিকাশ, তাঁদের উন্নতি, ক্ষমতায়ন সম্পর্কে এই সরকার একেবারেই সিরিয়াস না৷ তৃণমূল আদিবাসী জনজাতির ভোট চায়৷ তারা পিছিয়ে পড়া এই জনজাতিকে নিয়ে রাজনীতি করতে চায়, কিন্তু তাঁদের উন্নয়ন, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের বিষয়ে কিছুই করতে চায় না, সেটা স্পষ্ট৷ তা না হলে তো মুখ্যমন্ত্রী আগে ওই মন্ত্রীকে রিজাইন দেওয়ানো করাতেন!’’

অর্থাৎ রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে অখিলের কুকথা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ক্ষমা চাইলেও সহজে যে এই বির্তকের আগুন নিভবে না, বরং পঞ্চায়েত ভোট যত এগিয়ে আসবে ততই শাসকের বিড়ম্বনা বাড়াতে এই ইস্যুতে গেরুয়া শিবির আন্দোলনের ফলাকে আরও ধারাল করবে, সেটাও পরোক্ষে স্পষ্ট করেছেন ড: শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় রির্সাচ ফাউন্ডেশনের ডিরেক্টর৷ দিল্লি থেকে সটান গ্রাম বাংলার অলিন্দে ঢুঁ মারতে অভ্যস্ত অনির্বাণ (Anirban Ganguly)৷ বলছেন, ‘‘আদিবাসী জনজাতি সমাজের বিকাশে সারা ভারতবর্ষে যে ধরণের পরিকল্পনা, কাজ এবং অগ্রগতি হয়েছে পশ্চিম বাংলায় তার ছিটেফোঁটাও উন্নয়ন হয়নি৷ এই বিষয়ে তৎপর হতে হবে৷’’ যেটা বলেননি,  ইঙ্গিতে স্পষ্ট করতে চেয়েছেন, সেটা হল আদিবাসী প্রশ্নে পঞ্চায়েতে ভোটে শাসকের ব্যাথা বাড়াতে ফের জঙ্গলমহলে ঝাঁপিয়ে পড়বে গেরুয়া শিবির৷

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অনির্বাণের ইঙ্গিত ‘কাজে’ পরিণত হলে শাসকের বিড়ম্বনা আরও বাড়বে৷ কারণ, হাজারও গোষ্ঠী এবং হাজারও কোন্দলে বিদ্ধ শাসকের অন্দরের ফাটল আরও চওড়া হতে পারে, পঞ্চায়েতের প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর৷ সেই অপেক্ষাতেই রয়েছে গেরুয়া শিবির৷ উদ্দেশ্য একটাই, শাসকের ১৬ আনা ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে উনিশের স্টাইলে তেইশেও ১৮ আনা ফসল ঘরে তোলা!

আরও পড়ুন: দিদির জমানা: আতঙ্কের নাম CPM, প্রাণ বাঁচাতে মরা স্বামীকেও অস্বীকার করতে দ্বিধা করেননি বধূ