ময়দানে বার পুজো আছে, তবে অনেক কিছু থেকেও নেই

কলকাতার সেই ফুটবল আর নেই। অনেক কিছু হারিয়ে গিয়েছে, বদলেও গিয়েছে। শুধু রয়ে গিয়েছে কিছু স্মৃতি। যার সরণি বেয়ে বার পুজো নিয়ে অনেক স্মৃতি উঠে এল। আজ শেষ পর্ব।

0
82

শান্তি রায়চৌধুরী: খাঁটি মোহনবাগানি হয়েও অজয় শ্রীমানি ছিলেন ইস্টবেঙ্গলের ফুটবল সচিব। একবার জ্যোতিষ গুহ কোনও একটি কারণে ধীরেন দে-র কাছে তাঁকে পাঠানোর পর ধীরেন দে শ্রীমানিকে বলেছিলেন, “তুমি পুরোদস্তুর ঘটির ছেলে হয়েও ইস্টবেঙ্গল ক্লাব করছ কেন? মোহনবাগানে চলে এস।”

খাস খবর ফেসবুক পেজের লিঙ্ক:
https://www.facebook.com/khaskhobor2020/

- Advertisement -

ইস্টবেঙ্গলকে ভালবাসতেন অজয় শ্রীমানি। আর তা মোহনবাগানের থেকেও বেশি। ধীরেন দে বুঝে গিয়েছিলেন, বৃথা অনুরোধ। এরপর তিনি অজয় শ্রীমানিকে সারাজীবনের সদস্য কার্ড উপহার দিয়েছিলেন। অজয় বাবুর কাছেই ওই সময়কার কংগ্রেস নেতা সোমেন মিত্র পাঠিয়েছিলেন জীবন চক্রবর্তী ও পল্টু দাসকে। ইস্টবেঙ্গলের ওই বিখ্যাত ‘জিপ’ জুটির কেউই আজ বেঁচে নেই।

কিন্তু অজয় শ্রীমানি আছেন। যিনি আজীবন ক্লাবকে দিয়েছেন, এমনকি কয়েক বছর আগেও ইস্টবেঙ্গলের ২২ জন ফুটবলারকে হীরের আংটি উপহার দিয়েছিলেন। যার মধ্যে সুধীর কর্মকার, গৌতম সরকার, হাবিব আকবর অশোক ব্যানার্জিরা ছিলেন। সেই অজয় শ্রীমানী বার পুজো নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কিছুটা নস্টালজিক হয়ে বললেন, “এখন আর আমি ক্লাবে যাই না। যেতেও পারি না। কেউ ডাকেও না। ৬০-৭০ সাল পর্যন্ত বার পুজো দেখেছি। দারুণ উন্মাদনা ছিল। এখন সেসব মনে পড়লে বড় কষ্ট হয়। বর্তমানে তো শুনেছি, কালীঘাটে পূজা দেওয়া হয়। মাঠে পুরোহিতও আসে। জ্যোতিষও আসে। ওসব কথা থাক, সব ভুলে যেতে চাই।”

দিন বদলেছে। গতবছর-ও মোহনবাগান তাঁবুতে বাংলা নববর্ষের দিনে সশরীরে হাজির হয়েছিলাম। সভ্য-সমর্থকদের ভিড়, হইচই, হুল্লোড় সব ছিল। ড্রেসিং রুমের বাইরে লোহার পায়াওয়ালা লম্বা বেঞ্চগুলিতে অনেকেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসে। ক্লাব সচিব অঞ্জন মিত্রের ঘরে অনেক চেনা অচেনা মুখের ভিড়। মুখ বাড়িয়ে শুভ নববর্ষ জানাতেই বললেন, “আরে! খেয়ে যাবে কিন্তু।”

আরও পড়ুন: দ্বিতীয় রাউন্ড থেকেই বিদায় মেসিদের, ট্রফি ব্রাজিলের, ভবিষ্যদ্বাণী ESPN -এর

ভরপুর আন্তরিকতা। ঠিক তার ঘরের বাইরে প্রশস্ত হল ঘরের মাঝে বিশালাকার লম্বা টেবিলের দু’দিকে তখন পাত পেড়ে চলছে খাওয়া-দাওয়া। পাতে গরম লুচি, আলুর দম কমলাভোগ পড়ছে। তার মধ্যেই প্রাক্তন ফুটবলাররা কেউ কেউ আসছেন ,গল্প-টল্প করছেন, আবার চলে যাচ্ছেন। পাশে ইস্টবেঙ্গল ক্লাব। অনেকেই আবার ওখানে ঢুঁ মারবেন, কেউ আগেই ইস্টবেঙ্গলে গিয়ে তারপর আসছেন। একই রকম দৃশ্য ময়দানের পাশাপাশি মাঝারি ও ছোট ক্লাবে। মহমেডান স্পোর্টিং ক্লাবেও বার পুজো হয় বেশ ধুমধামের সঙ্গেই। কামনা এটাই, বছরের বাকি দিনগুলোও যেন সবাই এভাবেই রঙীন হয়ে কাটাতে পারে।

এখন সেদিনের অনেক কিছুই হারিয়ে গিয়েছে। হারিয়ে গিয়েছে ময়দানি জৌলুস। ময়দানের বার পুজো আছে। তবু যেন অনেক কিছুই থেকেও নেই।