ইস্টবেঙ্গল যদি ভারতের ক্লাব না হয়, তাহলে ১৯১১ -ও বিদেশিদের দয়া

0
79

বিশ্বদীপ ব্যানার্জি: এমন দিন এর আগে শেষ কবে দেখা গিয়েছে? একইদিনে জোড়া ডার্বি। একদিকে বাঙালির আবেগ— যুবভারতীতে ইস্টবেঙ্গল বনাম মোহনবাগান। সেই দ্বৈরথ শেষ হতে না হতেই দুবাইয়ে ভারত-পাক মহারণ। ২৮ অগাস্ট, ২০২২। দিনটা চিরকাল মনে থাকবে বাংলার ক্রীড়াপ্রেমীদের।

আরও পড়ুন: “আমার সঙ্গে কথা বলতে সমস্যা নেই তো”, জাদেজাকে খোঁচা মঞ্জরেকরের

- Advertisement -

দিনটা আরও মনে থাকবে সামাজিক মাধ্যমে ক্রমাগত হয়ে চলা বিকৃত মানসিকতায় পরিপূর্ণ নোংরা বিদ্রূপের জন্য। রবিবার কলকাতা ডার্বিতে সুমিত পাসির আত্মঘাতী গোলে জয় পেয়েছে এটিকে মোহনবাগান। অন্যদিকে হার্দিক পাণ্ডিয়ার দুরন্ত অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে চিরশত্রু পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে টিম ইন্ডিয়া। এরপর থেকেই মোহনবাগানের সমর্থকদের দাবি, এদিন দুটো ম্যাচই ভারত জিতল।

অর্থাৎ ইস্টবেঙ্গলকে তাঁরা ভারতের দল বলে মনেই করেন না। যেহেতু ইস্টবেঙ্গল ওপার বাংলা থেকে আসা রিফিউজিদের প্রতিনিধি, কাজেই সেই দল কখনওই ভারতের হতে পারে না। এই তাঁদের মূল বক্তব্য। কতটা সমর্থনযোগ্য এই বক্তব্য? না বলে উপায় নেই, যাঁরা এই ধরণের চিন্তাভাবনা পোষণ করছেন তাঁরা যে কেবল বিকৃতমনস্ক তা-ই নয়; একইসঙ্গে মূর্খের স্বর্গে বাস করছেন এই ধরণের মানুষজন।

বিদ্রূপ করতে আসার আগে একটু পড়াশোনা করে নেওয়া প্রয়োজন। জানা প্রয়োজন, ইস্টবেঙ্গল যখন প্রতিষ্ঠিত হয় তখন ভারত আসলে বিভক্ত-ই হয়নি; দেশ একটাই ছিল। তাছাড়া ইস্টবেঙ্গল প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপটও সম্পূর্ণ আলাদা। ১৯২০ সালে কোচবিহার ট্রফির ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল মোহনবাগান এবং জোড়াবাগান। এই ম্যাচে চূড়ান্ত জাতিবিদ্বেষের মুখে পড়তে হয় পূর্ববঙ্গীয় ফুটবলারদের। নিজেদের পূর্ববঙ্গীয় ডিফেন্ডার শৈলেশ বসুকে এদিন নামায়নি জোড়াবাগান। এরপর ম্যাচটি তারা হেরে গেলে কেবলমাত্র দায়ী করা হয় আরেক পূর্ববঙ্গীয় ফুটবলার নসা সেনকে। এরই প্রতিবাদে জোড়াবাগান ক্লাবের পূর্ববঙ্গীয় সহ-সভাপতি সুরেশচন্দ্র চৌধুরী সেই মুহূর্তে ক্লাব ত্যাগ করে জন্ম দেন ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের।

খাস খবর ফেসবুক পেজের লিঙ্ক:
https://www.facebook.com/khaskhobor2020/

এ বৃত্তান্ত অনেকেরই অজানা নয়। তবু কেউ কেউ এরপরও এঁড়ে তর্ক করতে আসবেন। বলবেন, তবু ইস্টবেঙ্গল ভারতের ক্লাব নয়। সেক্ষেত্রে তাদেরকে কেবল একটি কথাই বলা চলে। ইস্টবেঙ্গল যদি ভারতের ক্লাব না হয়, তাহলে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের অন্যতম অংশ হিসেবে ১৯১১ সালে মোহনবাগানের আইএফএ শিল্ড জয়, যা নিয়ে গোটা দেশের গর্ব— তা কার্যত বিদেশিদের দয়াতে-ই।

কারণ ১৯১১ সালের আইএফএ শিল্ডজয়ী মোহনবাগান দলের সিংহভাগ ফুটবলারই ছিলেন ওপার বাংলার। তাঁরা তো বিদেশি— তাই নয় কি? ভাবতে চাইলে অনেকভাবেই ভাবা যায়। কীভাবে ভাববেন, সেটা আপনাকেই ভেবে দেখতে হবে।