প্রমোশন না ডিমোশন, ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না ঘোষবাবুর অনুগামীরা

নিছকই কাকতালীয়! কেউ বলছেন, হতে পারে, তবে যা হয়, তা ভালর জন্যই হয়! কেউ বা পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছেন, ছাল, মাস খুইয়ে কি পরে থাকে! রবিবারের পর সোমবার৷ বৃষ্টিস্নাত বঙ্গের উঠোনে ফের আরও একটা রাজনৈতিক বিস্ফোরণ৷- বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা৷

0
219

সুমন বটব্যাল, কলকাতা: নিছকই কাকতালীয়! কেউ বলছেন, হতে পারে, তবে যা হয়, তা ভালর জন্যই হয়! কেউ বা পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছেন, ছাল, মাস খুইয়ে কি পরে থাকে! রবিবারের পর সোমবার৷ বৃষ্টিস্নাত বঙ্গের উঠোনে ফের আরও একটা রাজনৈতিক বিস্ফোরণ৷- বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা৷

আরও পড়ুন: EXCLUSIVE: বাবুলের তৃণমূলে আসার সঙ্গে মুকুলের বিজেপিতে যাওয়ার মিল দেখছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা

- Advertisement -

ওই অংশের তরফে সামনে আনা হচ্ছে একাধিক প্রশ্ন: সাংগঠিক নিয়ম অনুযায়ী আর তো মাত্র দু’মাস পরেই পদ থেকে সরে যেতেন তিনি৷ তাহলে আচমকা কেন রদবদল? কেন এত তাড়াহুড়ো? এমন একটা সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে এই সিদ্ধান্ত সামনে আনা হল, যার ২৪ ঘণ্টা আগে মোদী-শাহের ঘনিষ্ঠবৃত্তে থাকা বাংলার তরুণ নেতা বাবুল জার্সি বদলেছেন? তাহলে কি বাবুলের দলত্যাগ ফ্যাক্টর কাজ করে গেল? নাকি বঙ্গের মাটিতে দলের ভঙ্গুর দশাটা আরও ভঙ্গুর হওয়ার আগেই সময় থাকতে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতেই এই তৎপরতা?

আরও পড়ুন: BREAKING: সমস্ত জল্পনার অবসান, বিজেপির নয়া রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার

বিজেপির রাজ্য সভাপতি পদ থেকে দিলীপ ঘোষকে সময়ের আগে সরিয়ে দেওয়া নিয়ে এমনই হাজারো প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে ঘোষবাবুর অনুগামীদের অন্দরে৷ তাঁরা বলছেন: দিলুদা কিন্তু খড়গপুরের চাচা, জ্ঞানসিং সোহন পালের মতো কংগ্রেসের অপরাজেয় বিধায়ককে পরাজিত করে বিধানসভার অলিন্দে প্রবেশ করেছিলেন৷ পরে মেদিনীপুর থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিলেন সিপিআইয়ের পৈত্রিক সম্পত্তিতে পরিণত হওয়া মেদিনীপুরের সাংসদ আসনটি৷ পাল্টা মতও উঠে আসছে৷ দিলীপ বিরোধীরা বলছেন, ‘‘কবে কোনগাছের আম খেয়েছেন, সেটা স্মৃতি হতে পারে, বাস্তব নয়৷ লিভ ইন অ্যা প্রেসেন্ট, লিভ ইন অ্যা মোমেন্ট!’’

স্বভাবতই একান্ত আলাপচারিতায় অনুযোগের সুরে অনুগামীরা বলছেন, এটা কিন্তু ঠিক হল না৷ কারণ, সহ-সভাপতির পদটি নিতান্তই একটি পদ মাত্র৷ কিন্তু সেই অর্থে নেই কোনও ক্ষমতা৷ তাই তো রাহুল সিনহা থেকে মুকুল রায় কেউই এই পদে বেশিদিন থাকতে চাননি৷ সম্প্রতি রাজ্য থেকে চারজনকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় ঠাঁয় দেওয়া হয়েছে৷ আলোচনায় উঠে এসেছিল দিলীপদার নামও৷ কিন্তু সে গুড়ে বালি!

কেন? দলের একাংশ এক্ষেত্রে ‘অধিকারী’র ‘প্রভাব’ দেখতে পাচ্ছেন৷ তাঁদের মতে, বাবুল পরবর্তী বাংলার বিজেপির মধ্যে যে সন্দেহ-অবিশ্বাসের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে অবিলম্বে তা থেকে দলকে ‘রক্ষা’ করতে হলে প্রয়োজন একটা শক্ত খুঁটি৷ তাঁকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে৷ কিন্তু ঘোষ-অধিকারীর ঠাণ্ডা লড়াইয়ে কেউই স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছিলেন না৷ এদিকে দল ভাঙন রোখার কিংবা সংগঠনকে ঘুরে দাঁড় করানোর যোগ্যতার প্রমাণ ইতিমধ্যেই প্রাক্তন দলে থেকে বারে বারে দিয়েছেন শুভেন্দু৷ লক্ষ্ণণ শেঠের মতো দুর্ভেদ্য বাম দূর্গকে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছেন তিনি৷

অন্যদিকে বালুরঘাটের বিজেপি সাংসদ সুকান্ত মজুমদারকে রাজ্য সভাপতির পদে বসিয়ে একই সঙ্গে দ্বিমুখী বার্তাও সামনে আনা হল বলে মত ওই মহলের৷ দক্ষিণের তুলনায় উত্তর ভাল ফল করেছে৷ সেদিক থেকে উত্তরবঙ্গে দলকে আরও সুসংবদ্ধ করার বার্তা দেওয়া অন্যদিকে বয়সে তরুণ, ‘লো-প্রোফাইল’ মেনটেন করে চলা সুকান্তর সঙ্গে অধিকারীর কোনও বিরোধ নেই৷ ফলে সংঘাতের পরিবর্তে দলের অন্দরে ঐক্যবদ্ধ পরিবেশের আবহ গড়ে তুলতেই তড়িঘড়ি এই সিদ্ধান্ত বলে দলেরই একটি অংশের অভিমত৷

সেকারণেই শুভেন্দুকে ‘ওপেন গ্রাউন্ড’ দিতেই দিলীপ ঘোষকে ‘অফিসিয়ালি’ প্রমোশন দেওয়া হল, যা আদতে ডিমোশনেরই নামান্তর! আপাতত এই আলোচনায় সরগরম বঙ্গ রাজনীতির কারবারীরা৷ দিলীপবাবুর খাসতালুক মেদিনীপুরের এক বিজেপি নেতার সহজ সরল ব্যাখ্যা, ‘‘অফিসিয়ালি পুলিশ সুপারের থেকে ডিআইজির পদটি অনেক বড়৷ কিন্তু কার্যক্ষেত্রে কার ক্ষমতা বেশি থাকে বলুন তো! এক্ষেত্রেও তেমনটাই হয়েছে!’’