ভাঙড়ের ১০০শতাংশ মুসলিম সমৃদ্ধ বুথে শান্তিপূর্ণ ভোট, অবাক প্রিসাইডিং অফিসার

0
306

খাস খবর ডেস্ক: মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার ভাঙড়। সেখানেরই একটি বুথে প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পেয়েছিলেন শিক্ষক কাজি মাসুম আখতার। যে বুথের তিনি দায়িত্বে ছিলেন সেখানের সকল ভোটার মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ। সেই প্রকারের একটি বুথে সমগ্র ভোট প্রক্রিয়া নির্বিঘ্নে মিটে যাওয়ায় হতবাক হয়েছেন ওই প্রিসাইডিং অফিসার।

আরও পড়ুন- শীতলকুচির ঘটনায় যে কোনও মুহূর্তে পদত্যাগ করতে পারেন অমিত শাহ

- Advertisement -

যাদবপুরের কাটজুনগর হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক হলেন কাজি মাসুম আখতার। সারা বছর স্কুলের পড়ুয়াদের নিয়ে নানাবিধ সমাজসেবামূলক কাজে জড়িয়ে থাকেন তিনি। এছাড়াও সমাজের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লেখালেখিও করেন। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে পেয়েছেন শিক্ষারত্ন পুরষ্কার। গত বছরে পদ্মশ্রী প্রাপকদের তালিকাও জায়গা পেয়েছিলেন তিনি।

আরও পড়ুন- আইএসএফ কর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ, কাঠগড়ায় তৃণমূল

সেই ব্যক্তিকেই প্রিসাইডিং অফিসার করে ভাঙড়ে পাঠিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। ভাঙড়ে নির্বাচন মানেই হিংসা। নির্বাচন ঘোষণা হতেই নানাবিধ হিংসাত্মক মন্তব্যও শোনা যায় ওই এলাকার নেতাদের মুখে। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলের প্রার্থী ঘোষণার পরেই বিক্ষোভ হয়েছিল ভাঙড়ে। তারপরে তৃণমূলের সঙ্গে আইএসএফ কর্মীদের সংঘর্ষে উত্তাল হয়েছিল ভাঙড়।

এরপরেও ভাঙড়ের বুথে নির্বিঘ্নে ভোট সম্পন্ন করে বেজায় খুশি এবং হতবাক প্রিসাইডিং অফিসার কাজি মাসুম আখতার। তিনি বলেছেন, “১০০ শতাংশ মুসলিম ভোটার অধ্যুষিত একটি বুথে প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করে এলাম। যেখানে ভোট পড়েছে ৯১ শতাংশ।অথচ অশান্তি তো দূরের কথা,সারাদিন ধরে সামান্য জোরে আওয়াজ পর্যন্ত কেউ করেনি। ওই বিধান সভা কেন্দ্রের নিরিখে যাকে প্রায় বিস্ময়কর ঘটনা বলা যায়।”

আরও পড়ুন- সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে অগ্নিগর্ভ রাজস্থানের বারন জেলা, জারি কার্ফু

একই সঙ্গে তিনি আরও জানিয়েছেন যে বুথে চারটি প্রধান রাজনৈতিক দলের চারজন দায়িত্বশীল এজেন্ট কোনও রিলিভার না নিয়েই সারাদিন একনিষ্ঠভাবে কর্মরত থেকে আমাদের ভোট পরিচালনায় সাহায্য করে গেছেন। হয়ত সেই কারণেই একজন ভোটারের ভোটদানকে নিয়েও বিতর্ক হয়নি। এমনতর অভিজ্ঞতা সত্যিই বিরল! কাজি মাসুম আখতার বলেছেন, “আমি আরও বিস্মিত হয়েছি রাজ্যব্যাপী অহি-নকুল সম্পর্কে তিক্ত একে অপরকে সদা আক্রমণকারী মূলত তিনটি প্রভাবশালী দলের তিনজন পোলিং এজেন্টদের মধ্যে পারস্পরিক বন্ধুসুলভ ব্যবহার দেখে।”

ভোটের আগে ভাঙড়ের পরিস্থিতি আতঙ্ক ছড়িয়েছিল। সেই কারণে ভোটের দায়িত্ব পেয়ে কিঞ্চিৎ আশঙ্কিত হয়েছিলেন কাজি মাসুম আখতার। তবে বুথের ভিতরের অবস্থা দেখে সেই ধারণা পালটে গিয়েছে, “বলতে ভালো লাগছে প্রিসাইডিং অফিসারের প্রথাগত দায়িত্বের উর্ধ্বে উঠে ভোট শুরুর প্রারম্ভে বন্ধুত্বের ও রাজনৈতিক হানাহানির অসারতার বা লাভ-ক্ষতির কিছু বাস্তব টোটকা বিজ্ঞান সম্মতভাবে তাদের মগজে হয়ত ঢোকাতে পেরেছিলাম। ফল যেন হাতেনাতে পেলাম। ভোটদান আক্ষরিক অর্থেই যেন উৎসবে পরিণত হয়েছিল। ভোটারদের কেউ সমস্যায় পড়লে বা অজ্ঞতাবশত সামান্য বিভ্রান্ত হলেই তারা সকলে মিলে, ভোটার কোন দলের সমর্থক, তার মূল্যায়ণ না করেই তাদের প্রতি সহযোগিতায় হাত বাড়াতে কুণ্ঠা করেনি। যা আমাদের কাজকে অনেক সহজ করে তুলেছিল।”

আরও পড়ুন- ভারতকে ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ ঘোষণার দাবি কেরলের বিধায়ক পি সি জর্জের

এই সুস্থ পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল বলেই ভোটদান আক্ষরিক অর্থেই যেন উৎসবে পরিণত হয়েছিল। ভোটারদের কেউ সমস্যায় পড়লে বা অজ্ঞতাবশত সামান্য বিভ্রান্ত হলেই এজেন্টরা সকলে মিলে, ভোটার কোন দলের সমর্থক, তার মূল্যায়ণ না করেই তাদের প্রতি সহযোগিতায় হাত বাড়াতে কুণ্ঠা করেনি। সেই কারণেই ওই বুথে ৯১ শতাংশ ভোট পড়েছিল। সমগ্র ভোট পরিচালনায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রশংসাও শোনা গিয়েছে কাজি মাসুম আখতারের গলায়।