নন্দীগ্রাম জমি আন্দোলনের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই শুভেন্দুর: বিস্ফোরক সুফিয়ান

0
1931

রানা দাস, নন্দীগ্রাম: জমি আন্দোলনকে হাতিয়ার করে রাজ্যের ক্ষমতায় এসেছিল তৃণমূল। হুগলির সিঙ্গুরে টাটাদের ন্যানো কারখানার বিরোধের পাশাপাশি রক্তাক্ত জমি আন্দোলন হয়েছিল নন্দীগ্রামে। এখানে সালিম গোষ্ঠীর কেমিক্যাল হাবের প্রতিবাদে জমি বাঁঁচাও আন্দোলন ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছিল বাংলার বাম শাসনের বিরুদ্ধে৷ লাগাতর আন্দোলনের জেরে পুলিশের গুলিতে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। যদিও সরকারি হিসেবে পুলিশের গুলিতে প্রাণ খোয়াতে হয়েছে ১৪জনকে৷ বরাবরই নিজেকে নন্দীগ্রামের সেই আন্দোলনের কাণ্ডারি এসেছেন শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। যদিও নন্দীগ্রামের তৃণমূল নেতা শেখ সুফিয়ান (Sk Sufiyan) দাবি করছেন,‘ নন্দীগ্রামের আন্দোলনের সঙ্গে কোনও সম্পর্কই ছিল না শুভেন্দুর।’

২০০৬ সাল থেকে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার নন্দীগ্রামে জমি আন্দোলন শুরু হয়। যদিও আন্দোলের সুচনা হয়েছিল এস ইউ সি আই এবং জমিয়তে উলামে হিন্দের হাত ধরে৷ পরে তা হ্যাইজাক করে তৃণমূল কংগ্রেস৷ যার নেত্বত্বে ছিলেন শুভেন্দু অধিকারি৷

- Advertisement -

২০০৭ সালের ৩ জানুয়ারি প্রথম গুলি চলে নন্দীগ্রামে। ৭ জানুয়ারি ভাঙাবেড়ায় সিপিএমের হার্মাদ আর জমি আন্দোলনকারীদের গুলির লড়াইয়ে নন্দীগ্রামের চার কিশোর-যুবককে প্রাণ হারাতে হয়৷ অপর দিকে জীবন্ত অগ্নিদ্বগ্ধ হয়ে মারা যান সিপিএম নেতা শঙ্কর সামন্তকে৷ তার পরবর্তী দুই মাসের মধ্যে আরও রক্তাক্ত হয় নন্দীগ্রাম। সেই সময়ে ওই এলাকার তৃণমূলের নেতা ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। কাঁথির বাসিন্দা শুভেন্দু নিয়মিত নন্দীগ্রামে যোগাযোগ ছিল। রাজ্যে পালাবদলের পরে নন্দীগ্রাম থেকে বিধায়ক হন তিনি। প্রতি বছর শহিদ দিবস পালন করেন শুভেন্দু। বিধায়ক হিসেবে প্রতি সপ্তাহে নন্দীগ্রামে যেতেন।

বরাবরই নন্দীগ্রামের আন্দোলনের কৃতিত্ব নিজের বলে দাবি করেছেন শুভেন্দু। পড়ে জানান যে, নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলন ছিল মানুষের আন্দোলন। এতদিন একথায় বলত নন্দীগ্রামের আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা৷ কিন্তু, তৃণমূলের সঙ্গ ত্যাগ করে শুভেন্দু গেরুয়া নামাবলি গায়ে চড়াতেই, সূর বদলেছে নন্দীগ্রাম৷ নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী এজেন্ট সেখ সুফিয়ানও এখন ভিন্ন সূরে কথা বলেছে৷ তৃণমূল নেতা শেখ সুফিয়ানের দাবি করলেন, নন্দীগ্রামের আন্দোলনকারীই ছিলেন না শুভেন্দু। তাঁর কথায়, “শুভেন্দু অধিকারী নন্দীগ্রামে কোনও আন্দোলন করেননি। জমি আন্দোলনের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক ছিল না তাঁর। কেবলমাত্র কোনও মানুষের মৃত্যু হলে, লাশে মালা দিতে আসতেন।”

এখানেই শেষ হয়ে যায়নি নন্দীগ্রামের প্রাক্তন বিধায়ক শুভেন্দু সম্পর্কে তৃণমূল নেতা সুফিয়ানের আক্রমণ। তিনি বলেছেন, “বাম জমানায় নন্দীগ্রামের আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল। সেই অভিযুক্তদের তালিকায় কোথাও শুভেন্দু অধিকারীর নাম নেই। তাহলে উনি আন্দোলনকারী হলেন কোন উপায়ে।” আন্দোলন নিয়ে শুভেন্দু অধিকারী কেবলমাত্র রাজনীতি করে গিয়েছেন বলে দাবি করেছেন সুফিয়ান।

নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে চালু হওয়া মামলায় বহু মানুষ সমস্যায় পড়েছিলেন। সেই সকল মানুষকে আরও বিপাকে ফেলেছিলেন শুভেন্দু। এমনই দাবি করেছেন তৃণমূল নেতা শেখ সুফিয়ান। তিনি বলেছেন, “তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকার আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে থাকা সেই সকল মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। শুভেন্দু আবার সেই মামলা চালু করিয়েছেন।” একই সঙ্গে সুফিয়ানের আরও প্রশ্ন, “যদি আন্দোলনকারীদের প্রতি শুভেন্দুর দরদ থাকত, তাহলে কী ওই কাজ করতে পারতেন?”

কাঁথির শুভেন্দু বিজেপি শিবিরে নাম লেখাতেই তাঁর গায়ে লেগেছে বিশ্বাসঘাতকের তকমা। যদিও তা মানতে নারাজ শুভেন্দু। এই বিতর্কের মাঝেই নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা ঘোষণা করাছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই কেন্দ্র থেকেই বিজেপি প্রার্থী করেছে শুভেন্দু অধিকারীকে। নন্দীগ্রাম কার পক্ষে রায় দেবে তা জানা যাবে আগামী মে মাসের দুই তারিখে।