সরকারের হাত খালি, ‘সমব্যথী’র টাকা পেতে বছর ঘুরে যাচ্ছে, বিরক্ত পুরকর্মীরা-ই

0
91

বিশ্বদীপ ব্যানার্জি, খড়দহ: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্যতম স্বপ্নের প্রকল্প ‘সমব্যথী’। যার মাধ্যমে রাজ্যে কোনও দরিদ্র ব্যাক্তির মৃত্যু ঘটলে, সৎকারের খরচ বাবদ তাঁর পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হয় এককালীন নগদ ২ হাজার টাকা। এবারে সেই ‘সমব্যথী’ প্রকল্প নিয়ে একাধিক বিতর্কিত প্রশ্ন ধেয়ে আসছে রাজ্য সরকারের দিকে।

খাস খবর ফেসবুক পেজের লিঙ্ক:
https://www.facebook.com/khaskhobor2020/

- Advertisement -

মৃতের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাতে— তাঁদের পাশে দাঁড়াতেই এই প্রকল্প। আর সে কারণেই নাম, ‘সমব্যথী’। তাই যদি হবে, তাহলে তো প্রিয়জনের মৃত্যুর দিনই না হোক, অন্ততঃ এক সপ্তাহের মধ্যেই পরিবারের সদস্যদের এই প্রকল্পের টাকা পেয়ে যাওয়া উচিৎ। কারণ এরপরই শ্রাদ্ধ ইত্যাদি পারলৌকিক আচার। টাকা তো কার্যত তখনই দরকার। কিন্তু ক’জনই বা সেই সময়ে ‘সমব্যথী’র টাকা পেয়েছেন বা পাচ্ছেন? টাকা আসতে আসতে ঘুরে যাচ্ছে বছর।

খড়দহ পুরসভার অন্তর্গত রহড়ার বাসিন্দা শিখা ব্যানার্জি-ই যেমন। স্বামী কার্তিক ব্যানার্জি প্রয়াত হয়েছেন গত বছর অর্থাৎ ২০২১ সালের ৫ জানুয়ারি। কিন্তু এই পরিবার ‘সমব্যথী’র টাকা পেল বৃহস্পতিবার। প্রায় ১৬ মাস পর। যদিও এ নিয়ে কোনও খেদ নেই শিখাদেবীর। জানিয়ে দিলেন, “টাকা যে পেয়েছি, এ-ই অনেক। অনেকে তো টাকা পানইনি।”

সকলেই যে শিখাদেবীর মত এত সহজে সব মেনে নিচ্ছেন, তা কিন্তু নয়। এমনকি খোদ খড়দহ পুরসভার কিছু কর্মীর গলাতেই এ প্রসঙ্গে বিরক্তি ঝরে পড়তে দেখা গিয়েছে। কেন ‘সমব্যাথী’র টাকা আসতে এত দেরি হচ্ছে? এ প্রশ্নের জবাবে জনৈক পৌরকর্মী জানালেন, “খুব দেরি হচ্ছে। আসলে গোটা ব্যবস্থাটিই অনিয়মিত।” আরেকজন তো রীতিমত বিস্ফোরক, “সরকারের নিজের-ই টাকা নেই, আবার জনগণকে দেয়!”

বাংলার ভাঁড়ে সত্যিই মা ভবানী বাসা বেঁধেছেন। সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ-ই নয়। কিন্তু সে কারণেই যদি ‘সমব্যথী’র টাকা আসতে দেরি হয়, তার থেকে দুর্ভাগ্যের আর কিছু আছে কি? ধরা যাক, যে পরিবারের আর্থিক অবস্থা একেবারেই তলানিতে। কেউ মারা গেলে ন্যূনতম নিয়মটুকু পালন করারও সামর্থ্য নেই। একবছর পর তাদের টাকা পেয়ে লাভ আছে কিছু? ‘সমব্যথী’ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য-ই তো হল, কোনও ব্যাক্তির মৃত্যুর পর তাঁর সৎকার এবং অন্যান্য সমস্ত পারলৌকিক আচারের ক্ষেত্রে যাতে পরিবারের সদস্যরা অন্ততঃ আর্থিক দিক থেকে কোনও সমস্যার সন্মুখীন না হন, এ বিষয়টি নিশ্চিত করা।

আরও পড়ুন: দেশে আর কেউ বেকার থাকবে না, অঙ্গীকার প্রধানমন্ত্রীর

খড়দহ পুরসভায় এদিন ‘সমব্যথী’র জন্য আবেদনকারীদের আনাগোনা ছিল চোখে পড়ার মত। প্রায় প্রত্যেকর-ই প্রিয়জন কমপক্ষে ১০-১১ মাস আগে গত হয়েছেন। শুধু খড়দহ কেন? খুঁজে দেখলে নিশ্চিতভাবেই রাজ্যের সবকটি পুরসভা এবং পঞ্চায়েতে-ই একই চিত্র পাওয়া যাবে। প্রিয়জন চোখ বুজেছেন, বছর ঘুরতে চলল কিংবা হয়ত ঘুরেই গিয়েছে। এখন তাঁরা প্রকল্পের টাকা পাচ্ছেন। তবে হ্যাঁ, পাচ্ছেন অবশ্যই!