ভারতীয় পরিচয়ে রেল কর্মচারীকে বিয়ে, গ্রেফতার বাংলাদেশি

0
537

নিজস্ব সংবাদদাতা, খড়গপুর: রীতিমতো ভারতের আধার, ভোটার ও প্যান কার্ড, স্কুল ছাড়ার সার্টিফিকেট দেখিয়ে তৈরি করেছিলেন ভারতীয় পাসপোর্ট। আর তার ভিত্তিতেই নিজেকে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে পরিচয় দিয়ে বিয়েও করেছিলেন এক রেল কর্মচারীকে। সংসারও চলছিল জমজমাট৷ কিন্তু আর শেষ রক্ষা হল না।

গোপন সূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ গ্রেফতার করল ভারতীয় নাগরিকের ছদ্মবেশে থাকা এক বাংলাদেশি ললনাকে। যা নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনাটি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়গপুর পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড ভবানীপুর এলাকার দেবলপুরে।

- Advertisement -

পুলিশের হাতে আটক হওয়া ওই বাংলাদেশি ললনার নাম জুলি দাস। পুলিশ ১৯৪৬ সালের বিদেশী নাগরিকত্ব আইন এবং ১৯৬৭ সালের ১২ পাসপোর্টে আইন সহ আরও কয়েকটি ধারায় মামলা রুজু করে তাকে আদালতে পেশ করার পর আরও জিজ্ঞাসাবাদ করার উদ্দেশ্যে পাঁচ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে নেয়।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃত ওই বাংলাদেশি জুলি দাসের বিয়ের আগে পদবি ছিল দে। সে ২০১৮ সালের আগে ভারতে আসে তারপর এখানেই থেকে যায়। তাঁর একটি বাংলাদেশি পাসপোর্ট ছিল যার মেয়াদ ২০১৮ সালের জুলাই মাসেই শেষ হয়ে যায়।

ইতিমধ্যেই ভবানীপুরের দেবলপুরের বাসিন্দা দেবাশিস দাস নামে এক যুবককে বিয়ে করে জুলি। দেবাশিস খড়গপুরে রেলের ওয়ার্কশপে কাজ করে। এরপর একে একে ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড, প্যান কার্ড, আধার কার্ড এমনকি স্কুল ছাড়ার সার্টিফিকেট নিজের নামে বানিয়ে ফেলে সে। তদন্ত এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে থাকায় সব তথ্য এখনি পুলিশের হাতে আসেনি।

জুলির মা বিধবা জ্যোৎস্না রানী দে সম্ভবত বাংলাদেশেই থাকে৷ মায়ের সঙ্গে দেখা করা কিংবা অন্য কোনো কারণে বাংলাদেশ যেতে চাইছিল জুলি৷ আর সেই কারণে সে একটি ভারতীয় পাসপোর্ট বানানোর উদ্যোগ নেয়। ওই সমস্ত নথিপত্রের ভিত্তিতে জুলি সেই পাসপোর্ট পেয়েও যায়৷ যদিও ভারতের পাসপোর্ট পরিষেবার কলকাতা আঞ্চলিক কেন্দ্র জুলির দেওয়া তথ্যগুলি তখনও ভেরিফেকশন করে যাচ্ছিল।

এই ভেরিফেকশন পর্বেই পাসপোর্ট অফিসের কর্তারা জুলির দেওয়া নথিগুলি সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করে। ২০১৯-এর অগাস্ট মাসে এই ভেরিফিকেশন পর্বেই বোঝা যায় নথিগুলি নিয়ে সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। তাঁরা বিষয়টি পশ্চিম মেদিনীপুর গোয়েন্দা পুলিশ ডিআইবিকে জানান। তদন্ত শুরু করে ডিআইবি৷

প্রাথমিক তদন্ত করে নিশ্চিত হওয়ার পর ২০২০ জানুয়ারি মাসে ডিআইবির এক সাব ইন্সপেক্টর অমিত অধিকারী একটি মামলা দায়ের করেন খড়গপুর পুলিশের কাছে। খড়গপুর পুলিশ বিস্তারিত তদন্ত ও খোঁজ খবর নিতে থাকে। এরই মধ্যে করোনা এবং লকডাউন শুরু হয়ে গেলে পুলিশ ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এরপর অবস্থা কিছুটা স্বাভাবিক হলে ফের মামলাটি নিয়ে নড়েচড়ে বসে পুলিশ। অবশেষে গ্রেফতার করা হয় জুলিকে।

পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, বাবার মৃত্যুর পর মায়ের সঙ্গে ভারতে আত্মীয়দের কাছে এসেছিল জুলি। তারপর এখানে বিয়ে দিয়ে মা বাংলাদেশ চলে গিয়েছেন বা এদেশেরই অন্য কোথাও রয়েছেন। পুলিশ সেটাও খতিয়ে দেখছেন। ২০১৫ সালে বিয়ে হয়েছিল তার। তাকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে এই সমস্ত কিছুর হদিস পেতে চাইছে পুলিশ। কীভাবে কোন পথে জুলি ভারতীয় পরিচয় পত্র জনিত নথিগুলি জোগাড় করেছিলেন তাও খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন এক পুলিশ আধিকারিক।