রোজগেরে ছেলেটা মর্গে, ঘন ঘন মূর্চ্ছা যাচ্ছেন মা

0
497

খাস খবর, বাঁকুড়া: রবিবার বিকেলে শেষবার কথা হয়েছিল ভিডিও কলে৷ নেহাতই ছাপোষা কিছু কথা৷ ছেলে বলেছিল, ‘চিন্তা করো না, সব ঠিক হয়ে যাবে! আমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরব!’

তখনও কে জানতো ওটাই মা- ছেলের শেষ কথোপকথন! সোমবার সকাল ৭টা৷ ফোনের ওপার থেকে ভেসে এল দুঃসংবাদটা! তারপর থেকে ঘন ঘন মূর্চ্ছা যাচ্ছেন বিধবা মা৷ হবে নাই বা কেন! পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ছেলেটার যে ঠাঁই হয়েছে মর্গে৷

- Advertisement -

তিনি আর কোনওদিন শুনতে পাবেন না ছেলের মা ডাক৷ স্ত্রী শুনতে পাবে না স্বামী ডাক, আর তিন তিনটে দুধের শিশু? হারালো পিতার স্নেহ৷ শোক ছাপিয়ে ততক্ষণে পা টিপে টিপে সন্তর্পণে হাজির অনটন- সৎকার হবে কি করে? পাঁচটা পেটই বা চালাবে কে? কাঁদবেন, নাকি কপাল চাপড়াবেন?

চরম অনটন যে টাটকা শোককেও ছাপিয়ে যেতে পারে, চারকোলা গ্রামে পা না রাখলে বোঝায় দায়!
বছর একত্রিশের তরতাজা যুবক মইদুল ইসলাম মিদ্যার মৃত্যু রাতারাতি বিখ্যাত করে দিয়েছে বাঁকুড়ার কোতলপুরের অখ্যাত চারকোলা গ্রামটাকে৷

লালমাটির ধুলো উড়িয়ে সোমবার সকাল থেকে গ্রামে হাজির হাজারো সংবাদমাধ্যম৷ ছুটে এসেছেন বাম নেতারাও৷ কথা বলার অবস্থায় নেই মইদুলের মা তহমিনা বিবি৷ স্ত্রী আলেয়া বিবি বলেন, ‘‘স্বামী অটো চালাত৷ তাতেই কোনওমতে আমাদের ৬টা পেট চলে যেত৷ এখন তো ও আর নেই৷ কি করে চলবে আমাদের পাঁচটা পেট?’’

গল্পটা এই রকম: গত বৃহস্পতিবার বামেদের ছাত্র যুব সংগঠন ‘নবান্ন চলো’ ডাক দিয়েছিল৷ গিয়েছিলেন মইদুল৷ সেখানে পুলিশের লাঠির ঘায়ে জখম হয়ে ঠাঁই হয়েছিল বেসরকারি হাসপাতালের বেডে৷ যমে-মানুষে লড়াইয়ের শেষ হয়েছে৷ যাঁদের মারের ঘায়ে তরতাজা ছেলেটার জীবনে ইতি পড়ে গেল, সেই পুলিশের শাস্তির দাবিতে সরব আস্ত গ্রামটা৷

একই সঙ্গে যাঁরা তাঁকে মিছিলে নিয়ে গিয়েছিল তাঁদেরও শাস্তির দাবি জানাচ্ছেন বাসিন্দারা৷ মইদুলের বন্ধু মুজিবর রহমান বলেন, ‘‘ পুলিশ যেমন খুন করেছে তেমনই যারা ওকে কলকাতায় নিয়ে গিয়ে মৃত্যুর কোলে ঠেলে দিয়ে বাড়ি চলে এসেছে তাঁরাও সমান দায়ী৷ ওঁদেরও শাস্তি চাই৷’’

গ্রামবাসীরা জানান, বছর দুয়েক আগে জয়পুর ব্লকের আমলাশোল গ্রামে রহস্যজনকভাবে খুন হয়েছিলেন মইদুলের দূর সম্পর্কের ভাই সাহিদুল৷ অটো চালিয়ে কোনওমতে সংসার চালাতেন মইদুল৷ সংসারটা চলবে কি করে? ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাক বামনেতারাও৷