জয়পুরে পর্যটক টানতে বিশেষ উদ্যোগ বাঁকুড়া প্রশাসনের

0
225

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাঁকুড়া: জল, জঙ্গল, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, প্রাচীন স্থাপত্য ভাস্কর্যের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে বাঁকুড়ার জয়পুর সমুদ্র বাঁধেও। যার টানে করোনা পরিস্থিতিতেও পর্যটকের ঢল নেমেছে এখানে। এই অবস্থায় আরও বেশী বেশী পর্যটক টানতে উদ্যোগী হয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। শনিবার নবতম সংযোজন হিসেবে এখানে নৌকাবিহারের উদ্বোধন করলেন স্থানীয় বিধায়ক ও রাজ্যের মন্ত্রী শ্যামল সাঁতরা।

প্রসঙ্গত, বাঁকুড়ার জয়পুর বললেই সবার প্রথমে চোখের সামনে ভেসে ওঠে ঘন শাল, মহুল, পিয়াশাল, বহেড়া, হরিতকির এক বিশালাকার জঙ্গল। ৬ হাজার ৩৩১ হেক্টর জায়গা নিয়ে এই বনাঞ্চলে ভাগ্য সহায় হলে দেখা মিলতে দলমার দাঁতালদের। তাছাড়া হরিণ, ময়ূর, বন শুয়োরদের অবাধ এই বিচরণ ক্ষেত্রে মন ভালো করা পরিবেশে কিছুটা সময় নিজের মতো করে কাটানোর সুযোগ মিলবে। পাশাপাশি এই জঙ্গলেই রয়েছে ওয়াচ টাওয়ার।

- Advertisement -

এখান থেকেই সহজেই দেখা মিলতে পারে জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানো ময়ূর আর হরিণ। এখান থেকেই খুব কাছেই রয়েছে বাঁকুড়া জেলার দ্বিতীয় বৃহত্তম জলাশয় সমুদ্র বাঁধ। প্রশাসনের উদ্যোগে এখন এই সমুদ্র বাঁধে শুরু হয়েছে বোটিং এর ব্যবস্থা। পর্যটকদের স্বাচ্ছন্দ্যের কথা ভেবে জয়পুর পঞ্চায়েত সমিতি তৈরি করেছে বনবিতান লজ। একই সঙ্গে রয়েছে সম্পূর্ণ গ্রামীণ পরিবেশে বনফুল রিসোর্ট। এখানে এসে পর্যটকরা উপভোগ করতে পারেন আদিবাসী নৃত্য, বাউল গান থেকে ক্যাম্প ফায়ার সবই।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি ইতিহাস প্রেমী মানুষ ঘুরে দেখছেন বেশ কিছু প্রাচীন মন্দির ও স্থাপত্য ভাস্কর্য৷ পাশাপাশি মল্লরাজাদের প্রাচীন রাজধানী প্রদ্যুম্নগড় ঘুরে দেখছেন পর্যটকরা। তাছাড়া এই এলাকায় মল্লরাজাদের তৈরি অসংখ্য টেরাকোটা সমৃদ্ধ মন্দির। পাশাপাশি রয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশদের তৈরি সুবিশাল রানওয়ে। ফলে জল, জঙ্গল, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, প্রাচীন স্থাপত্য ভাস্কর্যের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে বাঁকুড়ার জয়পুরে। যার টানেই চলতি মরশুমে পর্যটকের ঢল নেমেছে এখানে।

এখানে প্রথমবার সপরিবারে বেড়াতেএসে খুশি পর্যটক সোমা পর্ণা গুহ। এবিষয়ে তিনি জানালেন, ইট, কাঠ, পাথরের জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এসে একেবারে গ্রাম্য পরিবেশ পেয়ে একেবারে মুক্তির আনন্দ পেলাম। একদিকে ইতিহাস সমৃদ্ধ, অন্যদিকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মণ্ডিত এই এলাকায় ছুটির কটা দিন দারুণভাবে তারা উপভোগ করতে চান বলে জানান।

স্থানীয় বিধায়ক ও রাজ্যের মন্ত্রী শ্যামল সাঁতরা বললেন, “বিশ্ব পর্যটন মানচিত্রে না হলেও রাজ্য-দেশের মানচিত্রে জায়গা করে নিয়েছে জইপুর। বিস্তৃত বনভূমি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, মল্লরাজাদের অপরূপ কীর্তি, সমুদ্রবাঁধকে কেন্দ্র করে পর্যটন শিল্পের প্রসার ঘটেছে। আগে যেখানে সমুদ্র বাঁধের পরিধি ছিল ৭০ একর, এখন তা কমে হয়েছে ৫২ একর। যা ইতিমধ্যে সংস্কার করা হয়েছে ও বহুমুখী কাজে লাগছে”।

বিধায়ক আরও জানালেন, একদিকে বৈতলের কাছে ঝগড়াই মায়ের মন্দির, শ্যাম রায়ের মন্দির, সলদা অঞ্চলে গোকুল চাঁদের মন্দির, শিব মন্দির রয়েছে। এছাড়া রাজগ্রাম, রাউৎখণ্ড, জয়পুরের হাট তলা, দে পাড়া সহ প্রায় পুরো ব্লক এলাকা জুড়েই অসংখ্য প্রাচীন স্থাপত্য, ভাস্কর্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

আবার অন্যদিকে মল্ল রাজাদের বিভিন্ন কীর্তি, প্রাচীন রাজধানী প্রদ্যুম্নগড়কে কেন্দ্র করে অনেক মন্দির, পরিখা রয়েছে। সেকারণেই একদিনের জন্য জয়পুর ব্লক এলাকা ঘুরে দেখার ক্ষেত্রে ভ্রমণপিপাসু মানুষের কাছে অন্যতম পছন্দের জায়গা হিসেবেই চিহ্নিত হতে চলেছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।