বাঘ বন্দী খেলা : সরকার, জনগণ ও মিডিয়া

0
411

নীল: আমাদের দেশের করোনার মোকাবিলাকে অনেকটা লোকালয়ে বাঘ বের হওয়ার সাথে তুলনা করা যায়। বাঘ শিকারের অতীত অভিজ্ঞতা কারোর নেই, সেই ক্ষেত্রে কার কি ভূমিকা হতে পারে:

কেন্দ্রীয় সরকার: সবাইকে ঠিক সময়ে জানিয়েছে জঙ্গল থেকে হিংস্র বাঘ রেরিয়েছে বলে তারা জানতে পেরেছে, তাই সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যতদিন পর্যন্ত বাঘ কাউকে সামনে না পেয়ে, না খেতে পেয়ে শুকিয়ে মারা না যাবে, ততদিন কারো বাড়ি থেকে বের হওয়া নিষেধ।

- Advertisement -

রাজ্য সরকার: কোনো বাঘ বের হয়নি, ওটা বাঘ নয় বন বিড়াল, ভয় নেই গরমেন্ট আপনাদের পাশে আছে, কিন্তু তাও সাবধানের মার নেই ঘরে থাকুন। আপানাদের জন্য কন্টেনমেন্ট খাঁচা করে দেওয়া হয়েছে বাঘ যতদিন না ধরা পড়ে আপনারা নিজেরাই ওতে বন্দী থাকুন।

জনগন: ঘরে থেকে বাঘ নিয়ে পড়াশোনা করছে। বাঘ কি রকম, বাঘের পূর্বপুরুষ কারা, বাঘ কি ধরনের মানুষ খেতে পছন্দ করে, কি ভাবে কেউ কেউ বাঘের মুখে পড়েও বেঁচে গিয়েছিল, কোথায় কোথায় বাঘের উপদ্রব বেশী হচ্ছে, কেন বাঘ মারার বন্দুক আবিষ্কার করা যাচ্ছে না ইত্যাদি। কিছুদিন পরে যখন তাদের এলাকাকে বাঘের উপদ্রবের ভিত্তিতে নানা ভাবে ভাগ করা হল তখন:

গ্রীনজোন: এদের বাড়ির চারপাশে বাশের পুরানো বেড়া দেওয়া আছে, তাই এরা ভাবছে বাঘ এদের বাড়িতে ঢুকতে পারবে না, তাই এদের খুব মজা।

অরেঞ্জজোন: এরা এক ঝলক বাঘ দেখেছে কিন্তু তারপরই বাঘ কোথায় যেন পালিয়ে গেছে, তাই এরা কি করবে বুঝতে পারছে না।

রেডজোন: এরা বাঘের গায়ের বোটকা গন্ধ টের পাচ্ছে, বুঝছে বাঘ আশেপাশেই আছে কিন্তু বাঘ ঠিক কোথায় তা জানে না ফলে চরম আতঙ্ক।

মিডিয়া: সারাদিন দেখাচ্ছে বাঘ এই জায়গা থেকে ওই জায়গায় চলে গেল। কাকে কাকে খেল আর সন্ধ্যাবেলা কিছু শিকারী এবং কিছু সর্বজ্ঞ, গল্প দাদুদের নিয়ে আলোচনায় বসছে যে কি কি করতে হবে, কেন বাঘ ধরা পড়ছে না ইত্যাদি।

রাজনৈতিক নেতা: কেন্দ্রীয় সরকারের সমর্থক নেতারা বলছে বাঘ ঠিক কোথায় দেখা গিয়েছিল সেই তথ্য রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় সরকারকে দিচ্ছে না, ফলে উপযুক্ত জায়গায় টোপ বসানো যাচ্ছে না, শিকারী টোপ বসাতে গেলেও ওদের গাইড করছে না, বাঘের টোপ হিসাবে যে হাস-মুরগি পাঠানো হয়েছিল তা রাজ্য সরকার বেচে দিয়েছে।

রাজ্য সরকারের সমর্থক নেতারা বলছে কেন্দ্রীয় সরকার প্রচুর সংখ্যায় টোপের বন্দোবস্ত করছে না কেন? যে হাস-মুরগি গুলো টোপ হিসাবে পাঠানো হয়েছে তারা দুর্বল, ফলে বাঘ ওগুলো খাচ্ছে না, বাঘ মারতে উপযুক্ত বন্দুক পেতে এত দেরি হচ্ছে কেন?

প্রধানমন্ত্রী: শিকারীর বন্দোবস্ত করে দেশের মানুষকে বাঁচানোর জন্য প্রাণপনে চেষ্টা করে যাচ্ছেন, দেশের মানুষের মানসিক শান্তির জন্য মাঝে মাঝে বলছেন বাঘ তাড়ানোর জন্য বাড়িতে লাইট জ্বালিয়ে রাখতে, কাসর ঘন্টা বাজাতে।

মুখ্যমন্ত্রী: বাঘ নিয়ে খুব চিন্তিত, অনেক সময় খালি হাতেই বাঘ মারতে বেড়িয়ে পড়ছেন, পরে অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে।

রাজ্যপাল: দিনরাত শুধু বাঘ নিয়ে চিঠি লিখে চলেছেন এবং বলছেন উনি চান বাঘ মারা পড়ুক এবং বাঘ মারার ক্ষেত্রে তিনি সাহায্য করতে চাইলেও কেউ তাকে ব্যবহার করছেন না।

মুখ্যসচীব: প্রতিদিনই বিকালে বলছেন বাঘ অমুকের পা খেয়ে নিয়েছে, তমুকের হাত খেয়ে নিয়েছে কিন্তু একটা পা, একটা হাত বাদেও আক্রান্ত ব্যক্তিরা খুশী, সুস্থ আছেন এবং বলছেন এই আধখাওয়া মডেলই নাকি দেশের সেরা।

আই সি এম আর: রোজ শুধু গ্রাফ বানাচ্ছে আজ কত জনকে বাঘে খেল, কতটা খাওয়ার পর আর বাঘের খবার ইচ্ছে চলে যাবে, রোজ বাঘের যাত্রা পথের নকশা করে চললেও বাঘকে কি করে মারা হবে সে নিয়ে কোনো দিশা দিতে পারছে না।

এই কাল্পনিক সংলাপ দেখে নিশ্চই আমাদের প্রশাসন, নেতা, মন্ত্রী এবং বাকিদের বাঘ মারার প্রস্তুতি নিয়ে একটু ধারনা হল এবং আশা করি করোনা নিয়েও এনাদের এ যাবৎ করা উদ্যোগের চিত্র খানিকটা পরিষ্কার হল, তাই বাঘ মারার মতো যখন করোনা নিয়েও কারো কোনো সঠিক প্রস্তুতি নেই, অভিজ্ঞাতা নেই তখন কি করলে আপনি বাঘের পেটে, মানে করোনার কবলে পড়বেন না তা নিজেই ঠিক করুন।