Durga Puja 2021: সখীবেশে মায়ের আরাত্রিক করেছিলেন পরমহংসদেব, তাঁরই কথায় মাকে বিসর্জন দিতে মনস্থ করেন রানীর জামাই

এ পুজো হয়েছিল খোদ রানী রাসমণির জানবাজারের বাড়ীতে। তখন আর রানীমা ইহজগতে নেই। সাল ১৮৬৪। প্রথমে আসতে না চাইলেও রানীর সেজো জামাই মথুরবাবু বলতে গেলে একপ্রকার জোর করেই ঠাকুরকে নিয়ে আসেন। এরপর নাকি ঠাকুর দুর্গাপুজো, কালীপুজো— শেষে সেই জগদ্ধাত্রী পুজো অবধি কাটিয়ে দক্ষিণেশ্বরে ফিরে যান।

0
146

বিশ্বদীপ ব্যানার্জি: যে কালী সেই দুর্গা! তফাৎ করবে কে? করেছিলেন— স্বয়ং রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব নাকি করেছিলেন। না না, অন্য কোনও ব্যাপার নয়। তিনি ছিলেন শ্যামা মায়ের কোলের ছেলে। তাই উমা রূপের পুজো দেখতে প্রথমে তাঁর মন চায়নি।

এ পুজো হয়েছিল খোদ রানী রাসমণির জানবাজারের বাড়ীতে। তখন আর রানীমা ইহজগতে নেই। সাল ১৮৬৪। প্রথমে আসতে না চাইলেও রানীর সেজো জামাই মথুরবাবু বলতে গেলে একপ্রকার জোর করেই ঠাকুরকে নিয়ে আসেন। এরপর নাকি ঠাকুর দুর্গাপুজো, কালীপুজো— শেষে সেই জগদ্ধাত্রী পুজো অবধি কাটিয়ে দক্ষিণেশ্বরে ফিরে যান।

- Advertisement -

ঠাকুরের এই পুজো দেখা নিয়ে একটি ঘটনা লোকমুখে খুব শোনা যায়। দুর্গাপুজোর দশমীর দিনকার ঘটনা‌। মথুরবাবুকে ঠাকুর বলতেন তাঁর রসদদার। সেই মথুরবাবু অর্থাৎ রানীর সেজো জামাই মথুরামোহন বিশ্বাস দশমীর দিন কিছুতেই প্রতিমার বিসর্জন দিতে চাইছিলেন না। এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য ছিল— “আমার সেই ক্ষমতা আছে যে সারাবছর মায়ের নিত্যসেবা করতে পারি। তাহলে কেন মাকে বিসর্জন দিয়ে উৎসবের আবহ এক লহমায় শেষ করে দেব?”

আরও পড়ুন: সিংহবাহিনী দুর্গা স্বয়ং এসেছিলেন জয়রামবাটীর মাটিতে, জেনে নিন সে জ্যান্ত দুর্গার কীর্তি

মথুরবাবু সকলের হর্তা কর্তা বিধাতা। তাঁকে ঘাঁটায় কার সাধ্য? তবু সবাই বারবার বোঝাতে লাগলেন, এ মোটেই উচিত কার্য হচ্ছে না। শাস্ত্রমতে দেবীর নিরঞ্জন বাধ্যতামূলক। কিন্তু মথুরবাবুও তেমন একগুঁয়ে। তিনি কিছুতেই সেসব যুক্তি মানবেন না। তখন এগিয়ে এলেন তাঁর বাবা (ঠাকুরকে ইষ্ট মানতেন বলে তাঁকে “বাবা” বলেই সম্বোধন করতেন মথুরবাবু)। তিনি বললেন, “চিন্তা কোরোনি গো, সেজোবাবু। কে বলেছে মায়ের সত্যি সত্যি বিসর্জন হয়ে যাচ্ছে? এতদিন তো তিনি মূর্তি হয়ে ঠাকুরদালানে তোমার পুজো নিলেন। এবার তিনি তোমার হৃদয়ে অবস্থান করে তোমার অন্তরের পুজো নেবেন।”

বলাই বাহুল্য, ঠাকুরের এ কথায় শান্ত হয়েছিলেন মথুরবাবু। ফলে আর কোনও বাধা থাকে না প্রতিমা নিরঞ্জনে। কথিত, এই পুজোতে ঠাকুর মা দুর্গার সখীর বেশও ধারণ করেছিলেন। এবং সেই বেশেই চামড় দুলিয়ে মায়ের আরতি করেন।

এই পুজো কিন্তু আজও হয়ে আসছে। এবং এর অন্যতম এক বৈশিষ্ট্য হল, এখানে মাকে অন্নভোগ দেওয়া হয় না। লুচি-মিষ্টির নৈবেদ্য সাজানো হয়। এছাড়াও তিনদিন ধরে কুমারী পুজোর চল রয়েছে। ১৭৯০ সালে এই পুজো প্রথম শুরু হয়। রানী রাসমণির শ্বশুরমশাই প্রীতরাম দাস জানবাজারের বাড়ীতে এই পুজো শুরু করেন। রাসমণির স্বামী বাবু রাজচন্দ্র দাসের নামে বাবুঘাটের নামকরণ হয়। পিতার মৃত্যুর পর সেই তিনি পুজোর দায়িত্ব নেন।

এ পুজোতে একসময় ছাগবলি হত। কিন্তু ২০০৩ থেকে সে প্রথা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন কেবল চালকুমড়ো এবং আখ বলি দেওয়া হয়। এছাড়া আরও এক চমকপ্রদ আচার দেখা যায় জানবাজার রাজবাড়ীতে। পুজোর সময় এখানে প্রথমে মহিলাদের খাওয়ার নিয়ম। তাঁদের খাওয়া হয়ে গেলে তবেই শেষ ব্যাচে পুরুষরা খেতে বসেন।