বিপদের রাতে ফের অভিভাবিকার ভূমিকায় মমতাকে দেখল বাংলা

0
353

শঙ্খজিৎ বিশ্বাস, কলকাতা: একজন অভিভাবিকা যেভাবে বিপদের দিনে ঘর আগলান, সেভাবেই যাবতীয় প্রোটোকল ভেঙে নিজের জীবনের ঝুঁকি উপেক্ষা করে রাজপথে নামলেন তিনি। সোমবার রেলের দফতরে আগুন লাগার পর থেকেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত দমকল মন্ত্রী সুজিত বসুর কাছ থেকে যাবতীয় ঘটনার খোঁজখবর নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

সুজিত বসুর কাছ থেকে অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানির খবর পেয়ে ফোনেই মৃতদের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছেন। তবে অগ্নিকাণ্ডের ভয়াবহতা উপলব্ধি করে রাত ১১টা ১০নাগাদ ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং। সেখানে গিয়ে দমকল পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি উদ্ধারকাজের তদারকি করেন তিনি। এর পাশাপাশি অগ্নিকাণ্ডে মৃতদের পরিবারের কয়েকজনের সঙ্গে কথাও বলেন মুখ্যমন্ত্রী। কার্যত অভিভাবকের ভূমিকায় গোটা পরিস্থিতি সামলাতে দেখা যায় তাঁকে।

- Advertisement -

রেলের দফতরের সামনে থেকেই মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা করেন, অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের পরিবার পিছু ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। পাশাপাশি পরিবারকে একটি করে সরকারি চাকরি দেওয়ার আশ্বাসও দেন তিনি। এখানেই থেমে থাকেননি তিনি। রেলের দফতর থেকে সোজা হাজির হয়েছেন এসএসকেএম হাসপাতালে। সেখানে গিয়ে দ্রুত মৃতদেহগুলি ময়নাতদন্তের বিষয়ে কথা বলেছেন স্বাস্থ্য দপ্তরের আধিকারিকদের সঙ্গে।

এদিকে নিহতদের পরিবারকে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ত্রাণ তহবিল থেকে ২ লক্ষ টাকা করে সহায়তা অনুমোদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। পিএমও আজ সকালে ট্যুইট করে এ কথা জানিয়েছে।

ভোটের আবহে মমতার ক্ষতিপূরণ ঘোষণা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও অগ্নিকাণ্ডের পর তাঁর পুরো পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা ও ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়ে সমস্ত ঘটনার তদন্ত করার বিষয়টির প্রশংসা শোনা গিয়েছে বিভিন্ন মহলে। আশ্চর্যের বিষয়, খাস কলকাতায় এত বড় ঘটনা ঘটলেও ঘটনাস্থলে যাননি বিজেপির বড়-মেজো নেতারা। সিপিএম-কংগ্রেসও নীরব দর্শকের ভূমিকা নিয়েছিল। তবে ঘটনার গুরুত্ব উপলব্ধি করে মমতা নির্দেশেই সেখানে গিয়েছিলেন দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু ও পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। দীর্ঘক্ষন ঘটনাস্থলে থেকে পুরো ঘটনার তদারকি করেন তাঁরা।

ভোটের প্রচারে নিয়ম করে রাজ্যে আসছেন বিজেপির নেতারা। রাজ্যজুড়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন তাঁরা। কলকাতায় বিজেপির রাজ্য সদর দপ্তরও রয়েছে। সেখানে শহরে এত বড় ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর ঘটনাস্থলে গেরুয়া শিবিরের কাউকে দেখতে পাওয়া যায়নি। রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়াল এই ঘটনায় টুইট করেছেন সবকটি দেহ উদ্ধারের প্রায় ১ ঘণ্টা পর, রাত ১টা ১৯ মিনিটে। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টুইটে শোকজ্ঞাপন করেছেন মঙ্গলবার সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ অর্থাৎ মৃতদেহ উদ্ধারের প্রায় ৭ ঘণ্টা পর।

তবে রাত ১১টাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ঘটনাস্থলে গিয়ে রেলের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগরে দেন তিনি। রেলের ভূমিকা নিয়েও সরব হন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘রেলের তরফে কেউ আসেনি। একটা ম্যাপ চাওয়া হয়েছিল। কোনও সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। দুর্ঘটনা নিয়ে রাজনীতি করতে চাই না। রেলের জায়গা রেলের সবটাই। তাঁদের কেউ এসেছেন কিনা খোঁজ নিচ্ছিলাম। কিন্তু কেউ আসেননি।’ গতকাল বাংলা দেখল, তিন কুড়ি ছয় পেরিয়ে যাওয়া এক দায়িত্ববান মহিলাকে। যিনি যাবতীয় সমালোচনার উর্ধ্বে উঠে মানুষের জন্য নিজের জীবনের বাজি ধরতে কোনও পরোয়া করেন না।

প্রসঙ্গত, গতকাল সন্ধে ৬টা ১০-এ স্ট্র্যান্ড রোডে পূর্ব রেলের নিউ কয়লাঘাট বিল্ডিংয়ের ১৩ তলায় সিগন্যাল অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ও অ্যাকাউন্ট সেকশনে আগুন লাগে। দ্রুত তা ছড়িয়ে পড়ে। একে একে ঘটনাস্থলে যায় দমকলের ২৫টি ইঞ্জিন। রাত ২টো নাগাদ ১৩ তলায় ফের আগুন দেখা যায়। দু ঘণ্টার চেষ্টায় সেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এদিকে ওই বহুতলের লিফটে ঝলসে দমবন্ধ হয়ে মৃত্যু হয় মোট ৯ জনের। দুটি লিফট থেকে তাঁদের নিথর দেহ উদ্ধার হয়।

এই ঘটনায় মৃতরা হলেন রেলের ডেপুটি চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার পার্থপ্রতিম মণ্ডল, তাঁর নিরাপত্তারক্ষী আরপিএফ কনস্টেবল সঞ্জয় সাহানি, চার দমকল কর্মী গিরিশ দে, গৌরব বেজ, অনিরুদ্ধ জানা, বিমান পুরকায়েত, হেয়ার স্ট্রিট থানার এএসআই অমিত ভাওয়াল। ২ জনকে এখনও সনাক্ত করা যায়নি।

এর আগেও শহর কলকাতা সহ রাজ্যে ঘটে যাওয়া বড়োসড়ো বিপর্যয় বা দুর্ঘটনার পরপরই পথে নেমেছেন মমতা। আমফান থেকে কোভিড- বাংলার রাজপথে নেমে পরিস্থিতি সামলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কালকেও তার ব্যতিক্রম হল না।