EXCLUSIVE: শুভেন্দুর খাসতালুকে মস্তানি, মাইকে প্রচার করে তৃণমূল নেতা ও পরিবারকে বয়কট গ্রামবাসীদের

0
989

কাঁথি: তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যা। তাই এলাকায় চলছিল দাপাদাপি। অবশেষে রুখে দাঁড়ালেন গ্রামবাসীরা৷ রীতিমতো পঞ্চায়েত সদস্যা সহ তার দলবলের বিরুদ্ধে সামাজিক বয়কটের ডাক দিলেন কয়েক’শ গ্রামবাসী।

আরও পড়ুন: ‘অন্য ভোটে’ ল্যাম্প পোস্টই ভরসা : পাড়ায় পাড়ায় শোনানো হবে দিদির কথা

- Advertisement -

রীতিমতো মাইকে সেকথা প্রচারও করা হল গ্রামবাসীদের তরফে৷ চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কাঁথি দেশপ্রাণ ব্লকের সারদা গ্রাম পঞ্চায়েতের অযোধ্যাপুর এলাকায়। ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরই রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে। কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিজেপির স্থানীয় নেতৃত্বরা।

আরও পড়ুন: কামারহাটিতে বাড়ছে ডায়েরিয়ার প্রকোপ, চারজনের মৃত্যু, এলাকা পরিদর্শনে স্বাস্থ্যকর্তারা

সূত্রের খবর, কাঁথি দেশপ্রাণ ব্লকের অযোধ্যাপুর গ্রামের অনিমেষ গিরির ফার্নিচারের ব্যবসা রয়েছে। এলাকার তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী হিমাংশু কর অনিমেষবাবুর দোকান থেকে প্রায় ৮০ হাজার টাকার সামগ্রী ক্রয় করেন৷ প্রায় ১৫ হাজার টাকা বকেয়া ছিল৷ অভিযোগ, দীর্ঘদিন হয়ে গেলেও ধার শোধ করেননি পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী৷ শনিবার সেই টাকা চাইতে গেলে অনিমেষ গিরিকে বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ৷ এমনকি তার বাড়িতেও দলবল নিয়ে চড়াও হয় অভিযুক্ত পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী৷। গুরুতর জখম হয় ফার্নিচার দোকান ব্যবসায়ী অনিমেষ গিরি। স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবারের লোকেরা ছুটে এসে তাঁকে উদ্ধার করে কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করেন।

আরও পড়ুন: মেরি সহেলির দৌলতে ট্রেনেই জন্ম নবজাতকের, কৃতজ্ঞতায় বধূ সন্তানের নাম রাখলেন ‘রেল’

রবিবার বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়া জন্যই গ্রামে একটি সালিশি সভা ডাকেন গ্রামের মোড়ল কৌশিক পাল। মিটিংয়ে পঞ্চায়েত সদস্যা এবং তাঁর স্বামী তথা এলাকার তৃণমূল নেতা হিমাংশু কর উপস্থিত হননি বলে অভিযোগ৷ ফের মঙ্গলবার গ্রামে ডাকা হয় মিটিং৷ দ্বিতীয়বারও কেউ উপস্থিত হয়নি বলে অভিযোগ।

এরপরই গ্রামবাসীদের উপস্থিতিতে গ্রাম কমিটি আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয় যে তৃণমূলের ওই পঞ্চায়েত সদস্যা, তার স্বামী সহ বেশ কয়েকজনকে সামাজিক বয়কট করা হবে৷ সেই মতো বুধবার অযোধ্যাপুর গ্রাম সংসদ এলাকায় মাইকিং করে প্রচার চালানো হয়। ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরই শুধু অযোধ্যাপুর নয় কাঁথি দেশপ্রাণ ব্লকের শুরু হয়েছে উত্তেজনা।

আক্রান্ত ব্যবসায়ী অনিমেষ গিরি বলেন, “গত কয়েক মাস আগে তৃণমূলের নেতা হিমাংশু কর দোকান থেকে ফার্নিচার সামগ্রী ক্রয় করেছিলেন৷ ১৫ হাজার টাকা বকেয়া ছিল৷ সেই টাকা তো দেননি উলটে টাকা চাইতে গেলে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে। বেধড়ক মারধর করে। কাঁথি হাসপাতালে চিকিৎসা করায়৷ এরপর গ্রাম্য সালিশি সভায় অভিযোগ জানিয়েছিলাম৷’’

গ্রামবাসীর পক্ষে পরিতোষ ভূঁইয়া বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে গ্রামের একাধিক নারকীয় অত্যাচার চালাচ্ছে পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী সহ তার দলবল। যেকোনও কিছুতেই লোকজন নিয়ে এসে বেধড়ক মারধর শুরু করে গ্রামবাসীদের। অযোধ্যাপুর বাজারে এক ব্যবসায়ী টাকা চাইতে গেলে মারধর ও অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে। এরপর গ্রামে বিচার দেন ওই ব্যবসায়ী। কিন্তু গ্রাম্য সালিশি সভায় উপস্থিত হয়নি পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী সহ বাকিরা। গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে সামাজিক বয়কট করা হয়েছে।আমাদের সকলের কাছে ওরা ক্ষমা চেয়ে মুচলেখা না দেওয়া পর্যন্ত এই বয়কট জারি থাকবে৷’’

গ্রামের মোড়ল কৌশিক পাল বলেন, “ওই তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে আগেও একাধিক অভিযোগ রয়েছে৷ তাই গ্রামবাসীদের সিদ্ধান্ত মতে তৃণমূল নেতা হিমাংশু কর, তাঁর পঞ্চায়েত সদস্যা স্ত্রী সহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে কিছুদিনের জন্য মেলামেশা বন্ধ করা হয়েছে৷’’ সামাজিক বয়কটের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা হিমাংশু শেখর কর। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘ব্যক্তিগত গণ্ডগোল হয়েছিল। সালিশি সভা ডেকেছিল। গ্রামবাসীদের সম্মান করি। ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠান থাকায় মিটিংয়ে উপস্থিত হতে পারিনি।’’

কাঁথি দেশপ্রাণ ব্লকের সরদা গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধান রাজেশ মাইতি অবশ্য বলেন, “গ্রামের মোড়ল বিজেপি সর্মথক। গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি হয়ে প্রচার করেছে৷ এটা সম্পন্ন রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। বিজেপি চক্রান্ত৷” অন্যদিকে বিজেপির কাঁথি সংগঠনিক জেলার সভাপতি অনুপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এলাকায় মানুষকে সাধুবাদ জানাই। কাঁথি দেশপ্রাণ ব্লকের তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী মানুষের উপর অত্যচার করছিলেন। তাই সাধারণ মানুষ একজোট হয়েছেন। কাঠমানি ও অসামাজিক কাজকর্মের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন৷’’