বৃদ্ধাশ্রমে দৃষ্টিহীন বৃদ্ধার জীবনকাহিনী শুনে আবেগপ্রবণ ‘বামাক্ষ্যাপা’

0
25

কলকাতা: করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হতেই সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন পর্দার ‘বামাক্ষ্যাপা’ ওরফে সব্যসাচী চক্রবর্তী। ইতিমধ্যেই ইয়াস বিধ্বস্ত এলাকায় ত্রাণ নিয়ে ছুটে গিয়েছেন তিনি। তেমনই রবিবার বারুইপুর ছাড়িয়ে দক্ষিণ বারাসতের বাজারের কাছে এক বৃদ্ধাশ্রমে তাঁর টিমের সঙ্গে গিয়েছিলেন অভিনেতা।

এদিনের অভিজ্ঞতা সকলের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন সব্যসাচী। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই সংক্রান্ত কয়েকটি ছবিও পোস্ট করেছেন তিনি। অভিনেতার কথায়, আবেগ জিনিসটি বাস্তবে খুব কঠিন। সেরকমভাবেই বাস্তব জীবনেও আমরা অনেক কিছু কঠিনের মুখোমুখি হই প্রতিদিন। তেমনই এদিন বৃদ্ধাশ্রমে এক মায়ের সঙ্গে আলাপ হয় তাঁর।

- Advertisement -

এদিনের এক বিশেষ ঘটনার কথাই তিনি তুলে ধরেছেন তাঁর ওয়ালে। লিখেছেন, ”বয়সের ভারে কিছুটা ন্যুব্জ হয়েছেন। সময়ের স্রোতে ধীরে ধীরে ক্ষয়ে গেছে তাঁর দৃষ্টিশক্তি। তবে চেহারাতে এখনো আভিজাত্য বজায় আছে। কালীঘাটে বাড়ি, ছেলে ভালো চাকরি করে, নিজের পরিবার নিয়ে থাকে। স্বাভাবিকভাবেই দৃষ্টিহীন মা কে নিয়ে বিড়ম্বনার শেষ নেই। চিকিৎসা করানোটাও একরকম পয়সা নষ্ট বৈকি। অতএব মায়ের ঠিকানা তাই বৃদ্ধাশ্রম’।

সব্যসাচী আরও লেখেন, ”আসলে আমি কখনও ভাবতেই পারিনি যে এরকম একটি ঘটনার সম্মুখীন হব। খুব ইচ্ছে করছিল নাম-ঠিকানা-পরিচয় সমেত এই লেখাটি লিখি, কিন্তু ভদ্রমহিলার মুখ চেয়ে তা আর লিখলাম না, ওনার মুখের ছবিটাও দিলাম না, সেই থেকে আমার বুকের কাছে কষ্টটা কিরকম দলা পাকিয়ে আছে । দৃষ্টি হারিয়েছেন অনেক দিনই, কিন্তু আমার গলা নাকি ওনার মুখস্থ”।

”নিয়ম করে প্রতিদিন আশ্রমের টিভিতে মহাপীঠ তারাপীঠ ‘শোনেন’। আমায় বললেন, “তোমার গলার স্বর আমার বুকে আছে বাবা”। শত বাধা দেওয়া সত্ত্বেও আমায় গড় হয়ে প্রণাম করলেন এবং উঠে যা বললেন তাতে আমরা কিছুক্ষন কথা বলতে পারিনি। বললেন, “আমার ছেলে বড় চাকরি করে, আমার যাতে কোনো কষ্ট না হয় তাই এখানে রেখেছে। খুব ভালো ছেলে আমার, ওকে একটু আশীর্বাদ করো বাবা”।

এরকম একজন মায়ের গল্প বলার পর তিনি এবার সকল মায়েদের উদ্দেশ্যে লিখলেন,” মা কাকে বলে জানো? এমন একটি মানুষ যার ওপর রাগ দেখানো যায়, অভিমান করা যায়, অপমান করা যায়, ‘তুমি ওসব বুঝবে না’ বলে পাশ কাটানো যায়, এমনকি অন্য কারোর ওপর জমা রাগ নির্দ্বিধায় তার ওপর বর্ষণ করা যায়”।

”প্রেমিকার কাছ থেকে ‘খেয়েছিস?’ শোনার জন্যে ছটফট করা যায়, কিন্তু একই কথা মা বললেই তিতিবিরক্ত হওয়া যায়। মা জিনিসটাই কেমন যেন আঠালো, চটচটে একটি বস্তু। ঝেড়ে ফেলতে চাইলেও যায় না, ঘেঁটি ধরে দূর করে দিলেও আবার বেড়ালের মতন ফিরে আসে। পা দিয়ে মাড়িয়ে চলে গেলেও উল্টে জিজ্ঞাসা করে ‘লাগেনি তো?’’

এখানে যাওয়ার পর অনেক কিছু অনুভব করলেন অভিনেতা। তিনি বৃদ্ধাশ্রমে আবার যাবেন এমনটাই ঠিক করেছেন। তবে পরের বার গেলে তাঁদের বেশ কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসের ব্যবস্থা করেই যাব জানিয়েছেন সব্যসাচী।