আমি নিজের ঢাক নিজে পেটাতে পছন্দ করিনা : রনজয় ভট্টাচার্য

0
507

অর্পিতা দাস: ‘প্রেমে পড়া বারণ’ বলেও আসলে নিজের গানের মাধ্যমে প্রেমটা করতে শিখিয়েছেন তিনি। মনের বিশেষ করে মন খারাপের জন্মদিন উদযাপন করতে শিখিয়েছেন তিনি। আর এই ভাবেই একের পর এক গানে জয় করেছেন মানুষের মন, তিনি সংগীত শিল্পী রনজয় ভট্টাচার্য। ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিনে মুক্তি পেতে চলেছে রনজয় ও লগ্নজিতার নতুন সিঙ্গেল ‘ভালোবাসি তোমায়’। তাই এই ভালোবাসার গান থেকে জীবনের আসল গান নিয়ে খাসখবরের সঙ্গে আড্ডা দিলেন রনজয় ভট্টাচার্য।

প্রশ্ন: ২০২০ পেরিয়ে অবশেষে ২০২১- কেমন আছো?
রনজয়: হ্যাঁ এই সময়টা কাটিয়ে ভালোই আছি, সব ভালই চলছে। দেখা যাক, আশা করি নতুন বছরে সব ভালই হবে।

- Advertisement -

প্রশ্ন: বছরের শুরুতেই প্রেমের মাসে এক দারুণ উপহার দিতে চলেছ শ্রোতাদের, তাই তো?
রনজয়: একদম, বাংলাদেশের জনপ্রিয় লেখক ও কবি লাবু চৌধুরীর কথায় আমি সুর করেছি এবং আমি ও লগ্নজিতা দুজনেই গেয়েছি। ভারত-বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে কাজ। ভিডিওতেও দুজনেই আছি, শুটিং কলকাতাতেই হয়েছে। সবমিলিয়ে দারুণ এক্সাইটেড।

প্রশ্ন: প্রেমে পড়া বারণ, সানলাইট এর বিজ্ঞাপন এরপর ভালোবাসি তোমায়, তার মানে তো এবার রনজিত লগ্নজিতা জুটির হ্যাটট্রিক?
রনজয়: (হেসে) হ্যাঁ আমাদের হ্যাটট্রিক। ঘুরেফিরে হয়ে যায় আর কি। আর আমরা এক সঙ্গে যে কটা কাজ করেছি, মানুষ খুব অ্যাপ্রিশিয়েট করেছেন।

প্রশ্ন: তোমার বেশিরভাগ গান প্রেমের গান, তবে তার মধ্যে সুন্দর করে প্রেমের ব্যথাটাও বোঝানো হয়। রনজয় এর জীবনে প্রেম না ব্যথা কোনটা বেশি?
রনজয়: আমার জীবনে প্রেম প্রচুর, প্রেমে থাকাটাও প্রচুর এবং ব্যথাটাও প্রচুর। কারণ আমি সবসময় ফিল গুড জিনিসে বিশ্বাসী। হিংসা রাগ এসবের বদলে মানুষকে ভালোবাসবো, প্রেম‌ও করবো। আর ব্যথা ছাড়া প্রেমটা ঠিক হয় না তাই খুব অর্গানিক্যালি ঘুরেফিরে আমার গানে প্রেম-ব্যথা দুটোই আসে।

প্রশ্ন: কিন্তু প্রেম ছাড়া অন্য ধারার গান কি আমরা রনজয়ের থেকে পেতে পারি?
রনজয়: হ্যাঁ অবশ্যই পেতে পারো এবং পাওয়াই উচিত। এমনকি এরকম প্রচুর গান হয়ে রয়েছে, তবে দুর্ভাগ্যবশত সেই গানগুলো রিলিজ হয়নি। আমি সামনে বেশ কিছু ইন্টারেস্টিং কাজ করছি, যেমন ‘আবার বছর কুড়ি পরে- এর মিউজিক করছি। তবে আমি শুধুই প্রেমের গান বানাই এমনটা নয়, ইনফ্যাক্ট আগে আমার এক্সপেরিমেন্টাল জোন টাই বেশি ছিল। ঘটনাচক্রে প্রেমের গানগুলোই রিলিজ হয়েছে ও জনপ্রিয় হয়েছে। অন্যান্য গানগুলো আটকে রয়েছে। তবে শ্রোতাদের এই ধারণাটা আমায় ভাঙতেই হবে যে রনজয় মানেই প্রেমের গান, তাই আমিও খুব অপেক্ষা করছি যাতে ওই গানগুলো খুব তাড়াতাড়ি রিলিজ হয়।

প্রশ্ন: ‘হৃদপিণ্ড’ ছবি মুক্তির আগেই ‘মন কেমনের জন্মদিন’ গানটা দারুণ হিট। এমনকি এই গানটা শোনার পর অনেকে ছবির নাম জানতে পারছেন। তো রনজয়ের মন কেমনের জন্মদিন কবে?
রনজয়: (হেসে) আমার নিজের একটা জন্মদিন আছে, তবে আমার মন কেমন প্রতিদিনই হয়। তাই রোজদিনই আসলে আমার জন্য মন কেমনের জন্মদিন। আমাদের প্রত্যেকেরই রাগ দুঃখ এসবের সঙ্গে প্রায় প্রত্যেক দিনই কোনো না কোনো মুহূর্তে মন কেমন হয়, তাই রোজ‌ই মন কেমনের জন্মদিন।

প্রশ্ন: চাকরি ছেড়ে হঠাৎ করেই গানের জগতে আসা, এই সময়টা আসার জন্য প্রত্যেকের জীবনেই একটা কাজ ক্লিক করতে হয়, তোমার ক্ষেত্রে জীবনে সেটা কোন কাজ?
রনজয়: অবশ্যই ‘সোয়েটার’- এর ‘প্রেমে পড়া বারণ’। কারণ এই গানটার পর আমার পরিচিতি বেড়েছে, এই গান এর আগেও আমি বোম্বাইতে বেশ কিছু কাজ করেছি। তবে তখন সেগুলো তেমনভাবে মানুষের কাছে না পৌঁছালেও সোয়েটার এর পর থেকে অনেক বেশি পরিচিতি পাচ্ছে। তাই অবশ্যই সে দিক থেকে ‘সোয়েটার’।

প্রশ্ন: এই যে এত রকমের গান তুমি সমানভাবে ভালবেসে তৈরি করেছো, কিন্তু শ্রোতাদের কাছে শুধু তোমার প্রেমের গানগুলোই পৌঁছচ্ছে বা শ্রোতারা পছন্দ করছেন। এই ব্যাপারটা নিয়ে কি তোমার আফসোস আছে?
রনজয়: হ্যাঁ এই ক্ষেত্রে আমি দর্শকদের কিছু কথা বলতে চাই। আমার অনেক কিছু দেওয়ার আছে, শুধুমাত্র প্রেমের গান বানানোর জন্য আমি মিউজিক করতে আসিনি। অন্যান্য গান গুলো হয়তো সেই ভাবে সকলের কাছে পৌঁছায়নি, তবে প্রেম বাদে অন্য ধারার গান শ্রোতারা নিশ্চয়ই শুনতে পাবেন। আশা করি নিরাশ হবেন না এবং এ প্রেমের গান গুলোর মতই বাকি গান সকলে খুব ভালোবাসবেন।

প্রশ্ন: কিন্তু মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য এখন পাবলিসিটি বা প্রমোশনের দরকার হয়, নিজের গানগুলোর ক্ষেত্রে সে দিক থেকে তোমার নিজের কি কোন কমতি আছে বলে মনে হয়?
রনজয়: প্রথমত, কিছু ছবিতে আমি অন্য ধারার মিউজিক করেছি কিন্তু সেগুলো মুক্তি পায়নি। দ্বিতীয়তঃ পাবলিসিটির ক্ষেত্রে আমি নিজের সিঙ্গেল গুলো সেভাবে প্রমোশন করিনি। কারণ আমি একটু ল্যাদখোর বলতে পারো। ফিল্ম এর ক্ষেত্রে সেটা এমনি হয়ে যায়। কিন্তু নিজের কাজগুলোর ক্ষেত্রে মনে হয়, এত কষ্ট করে গান বানালাম সেটা আবার লোকেদের কাছে নিজেকেই বলতে হবে? নিজের ঢাক নিজে পেটানো আমার খুব একটা পছন্দের নয়। তবে একথা সত্যি এখন প্রমোশনটা দরকার হয় ইনফ্যাক্ট ওটাই হয়তো বেশি দরকার হয়। তাই ভেবেছি এবার সিরিয়াসলি চেষ্টা করে নিজের কাজগুলো একটু প্রমোশন করব, দেখা যাক কতটা পারি (হাসি)।

প্রশ্ন: এখন তো বিভিন্ন জায়গায় তোমার‌ই কাজ। ছোটপর্দার হারানো সুর, বড়পর্দা, জী বাংলা অরিজিনালস, বিজ্ঞাপন- সবক্ষেত্রেই বিস্তৃতি ছড়িয়ে ফেলেছ।
রনজয়: (হাসি) সেটা করছি, আসলে মিউজিকই তো করছি। ভালো কাজের ক্ষেত্রে আমি এটা ভাবি না যে কোথায় করছি, হারানো সুরে রাজি হওয়া সেই কারণেই। কারণ ওটা পুরো মিউজিক্যাল। সাধারনত সিরিয়ালে এরকম কাজ পাওয়া যায়। আমার কাছে কোয়ালিটিটা ম্যাটার করে, মিউজিক রিলেটেড যে কোনো ভালো কাজ- সেটা যদি বিজ্ঞাপন এমন কি শর্ট ফিল্ম‌ও হয় আমি করব।

প্রশ্ন: তবে তুমি যে বললে তুমি একটু ল্যাদখোর, একের পর এক এত কাজ, এখন কি ল্যাদ খেতে পারছো?
রনজয়: সত্যিই এখন কাজ প্রচুর বেড়েছে। একটা কথা ঠিক ২০২০ সকলের খুব খারাপ কেটেছে, আমরা এত মানুষ কে হারিয়েছি, তবে আমার কাজের ক্ষেত্রে এই সালটা খুব ভালো। মাঝে চার-পাঁচ মাস আমার কোন কাজ ছিল না, তবে সেপ্টেম্বরের পর থেকে খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। তাই ২০২০- এর শেষটা থেকে এখনও বেশ ভালোই কাটছে, আশা করছি বাকি সময়টা ভালোই কাটবে।

প্রশ্ন: একদম, ২০২০- এর মত কঠিন সময় যখন আমরা পেরিয়ে এসেছি, পরের বাকি দিনগুলো নিশ্চয়ই খুব ভালো কাটবে।
রনজয়: (হেসে) সত্যিই তাই, টাচউড। আমিও আশা করি এভাবেই ভালো থেকে কাজ করে যেতে পারবো এবং সবাই ভালো থাকবেন।