রুপোলি পর্দার সিধুজ্যাঠা রিয়েল লাইফে কমিউনিস্ট সমর্থিত সাংসদ

0
344

খাস খবর ডেস্ক: তখন তো উইকিপিডিয়া নেট যুগ নয়। তাই এ যুগের মত গুগল সার্চ করে সব তথ্য হাতের মুঠোয় চলে আসত না। আর ফেলুদাকেও তথ্যের জন্য যেতে হতো সিধু জ্যাঠার কাছে। সোনার কেল্লা ছবির সেই সিধু জ্যাঠাকে নিশ্চয়ই সকলের মনে আছে। শুধু সিধু জ্যাঠার ভূমিকা কেন সত্যজিৎ রায় তাঁর বেশ কিছু ছবিতে ওই অভিনেতাকে ব্যবহার করেছেন। যেমন গুপী গাইন বাঘা বাইন ছবিতে জাদুকর কিংবা সীমাবদ্ধ ছবিতে স্যার বরেন রায় ৷ ছোট ছোট এই চরিত্রগুলি দর্শকের মনিকোঠায় আজও রয়়ে গিয়েছে।

ওই অভিনেতা হারিন চট্টোপাধ্যায় নামে পরিচিত হলেও, তাঁর পুরো নাম হরীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়৷ তাছাড়া বেশ কিছু জনপ্রিয় হিন্দি ও বাংলা ছবিতে তাঁকে দেখা গিয়েছে৷ এই বহুমুখি প্রতিভাধর মানুষটির সঙ্গে কমিউনিস্টদের সংযোগ ছিল নিবিড়৷ রিয়েল লাইফে একসময় সাংসদ হয়েছিলেন তিনি।

- Advertisement -

একেবারে প্রথম যুগের আইপিটিএ-র সাংগঠনিক কাজে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা নিয়েছিলেন এই মানুষটি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৫১ সালে প্রথম লোকসভা নির্বাচনে কমিউনিস্টদের সমর্থনে তৎকালীন অবিভক্ত মাদ্রাজ প্রদেশের বিজয়ওয়ারা কেন্দ্র থেকে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন হারিন চট্টোপাধ্যায়৷ তিনি ১৯৫২থেকে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত প্রথম লোকসভার সদস্য হয়েছিলেন৷ আজ তাঁর জন্মদিন৷

১৮৯৮ সালের ২ এপ্রিল তাঁর জন্ম হয়৷ পরিবারের অন্যান্য সদস্যেরাও ছিলেন বিখ্যাত৷ বাবা অঘোরনাথ চট্টোপাধ্যায় হলেন ভারতের প্রথম ডি.এস.সি। একদিকে বড় ভাই ছিলেন কমিউনিস্ট বিপ্লবী বীরেন চট্টোপাধ্যায় আবার দিদি হলেন কংগ্রেস নেত্রী ও কবি সরোজিনী নায়ডু। হরীন্দ্রনাথ বাল্যবিধবা কৃষ্ণা রাওকে বিয়ে করেছিলেন, তিনিই পরবর্তীকালে পরিচিত হয়েছিলেন সমাজসেবিকা কমলাদেবী চট্টোপাধ্যায় নামে।

হরীন্দ্রনাথ বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। মাত্র দশ বছর বয়েসে ক্ষুদিরামের ফাঁসির প্রেক্ষিতে ইংরেজি কবিতা ‘ডাইং পেট্রিয়ট’ রচনা করেন। উচ্চশিক্ষার জন্যে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে যান, সেসময় কেম্ব্রিজে নিয়ম ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি না থাকলেও মেধা প্রমানিত হলে ডক্টরেট ডিগ্রির গবেষনার অনুমতি দেওয়া হবে।

প্রতিভাবান হরীন্দ্রনাথ তার ‘ফিস্ট অফ ইয়ুথ’ কাব্যগ্রন্থের জন্যে গবেষনার সুযোগ পান। তার কবিতার প্রশংসা করেছিলেন স্বয়ং কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। হিন্দিতে লেখা তাঁর ছোটদের কবিতা আজও শিশুপাঠ্য। আবার তিনি অনুবাদও করেছিলেন গান কবিতা৷ বিখ্যাত ‘ইন্টারন্যাশনাল’ সংগীতের হিন্দি তর্জমা করেছিলেন, লিখেছিলেন সিনেমার প্রচুর গান। যৌবনে একটি সিনেমা পরিচালনা করেছিলেন তিনি। ব্রিটিশ শাসনের অবসানে গণনাট্য সংঘে তাঁর সৃষ্টি, “সূর্য অস্ত হো গয়া” আজও লোকের মুখে মুখে ফেরে।

বম্বেতে থাকাকালীন চিত্রপরিচালক হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর নিবিড় বন্ধুত্ব ছিল। সেই সুবাদেই বহু ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। তাঁর অভিনীত হিন্দি ছবিগুলির মধ্য রয়েছে- আশীর্বাদ, সাহেব বিবি অউর গুলাম, রাত অউর দিন, তেরে ঘর কে সামনে, চল মুরারী হিরো বননে, বাবুর্চি, গৃহপ্রবেশ ইত্যাদি। এছাড়া আজাদ নামে একটি ছবির প্রযোজনাও করেছিলেন তিনি। ১৯৯০ সালের ২৩ জুন তাঁর জীবনাবসান হয়। তার আগে ১৯৭৩ সালে তিনি পদ্মভূষণে সম্মানিত হন৷