জলের দরে ওষুধ বিক্রি করে ‘গরিবের মসিহা’ হয়ে উঠেছেন মনোজ

0
109

নিজস্ব সংবাদদাতা,কলকাতা: এক পাতা (স্ট্রিপ) প্যান ডি’র বাজার দর ১৪০ টাকা! চাইলে আপনি সমপরিমাণ কম্পোজিশনের ওষুধ পেতে পারেন মাত্র ২০ টাকায়৷ নাহ্, কোনও হেঁয়ালি নয়৷ খোদ কলকাতার বাঙ্গুর অ্যাভিনিউয়ের নিউ সুপার মার্কেটে মনোজ বেরিওয়ালের ওষুধ দোকানে গেলেই মিলবে এই পরিষেবা৷ শুধু গ্যাস, অম্বল নয়৷ সুগার, ব্লাড প্রেসার থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় প্রতিটি ওষুধই নাম মাত্র মূল্য এখান থেকে পাওয়া যাচ্ছে৷ দোকানের নাম, ‘‘প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় জনওষুধি কেন্দ্র’৷

মনোজবাবুর দাবি, ‘‘টানা ২ বছর ধরে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ এই প্রকল্প থেকে আমি মানুষকে পরিষেবা দিয়ে চলেছি৷ ভাল সাড়াও পাচ্ছি৷’’ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কোনও ঝুঁকি কি নেই? মনোজবাবু জানাচ্ছেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত তেমন কোনও খবর নেই৷’’ পাল্টা সওয়াল করেছেন, ‘‘বাজারে জিনিস কিনতে গেলে মানুষের হাত পুড়ছে৷ তাঁদের তো শারীরিক সুস্থতা নিয়ে প্রয়োজন৷ প্রধানমন্ত্রীর এই নয়া প্রকল্পের ওষুধ নাম মাত্র মূল্যে খেয়ে মানুষ তো সুস্থ হয়ে উঠছে৷’’

- Advertisement -

আরও পড়ুন:আচমকায় পদত্যাগ বাবুলের, জোর জল্পনা রাজ্য রাজনীতিতে

তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘ব্র্যাণ্ড তো খাবে না, মানুষ তো ওষুধ খাবে৷’’। দাবি করেছেন, তাঁর অধিকাংশ ক্রেতা দিন দুঃখী থেকে পেনশনাররা৷ বলছেন, ‘‘আজও বহু মানুষ আছেন, যাঁদের জীবনধারণ নির্ভর করে সঞ্চিত পুঁজির সুদের ওপর৷ অথচ প্রতি বছরই ব্যাংকের সুদের হার কমছে৷ ফলে অতিরিক্ত হাজার টাকাও ওই মানুষগুলোর কাছে পাহাড় প্রমাণ বোঝার সমান৷’’

‘প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় জনওষুধি কেন্দ্র’ থেকে নাম মাত্র মূল্যে পাওয়া যাচ্ছে নিত্য প্রয়োজনীয় ওষুধ৷ উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, ভ্লিনি জেল ৩০ গ্রামের দাম ১৩০টাকা৷ সম পরিমাণ কম্পোজিশনের ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ২২ টাকায়। প্যারাসিটামলের দাম যেখানে ২৫ টাকা, সেখানে মাত্র ১২ টাকায় মিলছে সম পরিমাণ কম্পোজিশনের ওষুধ। ক্ষেত্র বিশেষে একেকটি ওষুধের ক্ষেত্রে বাজারের চেয়ে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ কম দামেই মিলছে ওষুধ৷ স্বাভাবিকভাবেই, এলাকায় রাতারাতি ‘গরিবের মসিহা’ হয়ে উঠেছেন মনোজ বেরিওয়াল৷

স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, করোনাকালে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দাম ক্রমশ বেড়েই চলেছে। এমনকি হু হু করে বাড়ছে পেট্রোপণ্য ও রান্নার গ্যাসের দাম। সেখানে মনোজবাবুর এই ওষুধ কেন্দ্র এলাকার অনেকের মানুষের কাছেই হয়ে উঠেছে ‘ত্রাতা’৷ ভি.আই.পি বাজারের বাসিন্দা সুনীল শর্মা বলেন, ” আগে যেখানে ওষুধ বাবদ তাঁর ১৫০০ টাকা খরচ হতো, এখন প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় জনওষুধি প্রকল্পের সুবাদে মাসিক ৭০০টাকা লাগছে।”

আরও পড়ুন:বাংলার সঙ্গে ছিল আত্মিক টান, বাংলা শিখেছিলেন প্রয়াত দিলীপ কুমার

মনোজবাবু জানান, বিগত ২ বছর ধরে তিনি এই ব্যবসা করে চলেছেন। বর্তমানে কলকাতার প্রায় ১৩৮টি জায়গায় এমন ওষুধের দোকান রয়েছে। হাঁটি হাঁটি পা পা করে আর্তের সেবায় পথচলার শুরুটা অবশ্য হয়েছিল হাওড়ার লিলুয়া থেকে৷ এখন সেখানে ‘গরিবি মসিহা’র দেখাশোনা করেন মনোজ-ঘরণী৷

মনোজবাবুর কথায়, ‘‘বরাবরই ভিতর থেকে মানুষের জন্য কিছু করার তাগিদ অনুভব করতাম৷ কিন্তু এমনটা যে করতে পারব, তা কল্পনাও করিনি৷ কারণ, শুরুতে আমিও বিশ্বাস করতে পারিনি যে, এতো কম পয়সায় একই কম্পোজিশনের ওষুধ দেওয়া যায়৷ কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর প্রকল্পের দৌলতে সেই অসাধ্য সাধন হয়েছে৷ আজ শুধু আমি নই, যাঁরা যাঁরা এই পরিষেবা নিয়েছেন তাঁরা সকলেই এটা বিশ্বাস করেন৷’’

আরও পড়ুন:মোদীর মন্ত্রিসভায় মন্ত্রিত্ব পেতে চলেছেন বাংলার দুই সাংসদ

একুশের বঙ্গ দখলের জন্য সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল গেরুয়া শিবির৷ পেট্রোপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের অগ্নিমূল্যের প্রেক্ষিতে বারে বারে মোদী সরকারের জনবিরোধী নীতি নিয়ে সরব হয়েছিল তৃণমূল৷ সেখানে এমন একটি জনহিতকর প্রকল্পের কথা মোদী সরকার প্রকাশ্যে আনলেন না কেন? কেনই বা এই প্রকল্পকে পারতপক্ষে রাখা হয়েছে লোকচক্ষুর অন্তরালে? উঠে আসছে এমনই হাজারো প্রশ্ন৷ মনোজবাবু অবশ্য এসব বিতর্কে ঢুকতে নারাজ৷ তাঁর কথায়, ‘‘আমি বাপু অত সব জানি না, বুঝি না৷ মানুষকে ভালবাসি, মানুষের পাশে থাকতে ভালবাসি৷ আমি আমার কাজটুকুই করছি৷ এর বেশি কিছু বলতে পারব না৷’’