
মিলন পণ্ডা, কাঁথি: জমি সংক্রান্ত বিবাদকে কেন্দ্র করে সালিশি সভা বসিয়েছিলেন কাউন্সিলর৷ জরিমানা ধার্য করা হয়েছিল এক লক্ষ টাকা৷ সময় মতো টাকা দিতে না পারায় কাউন্সিলরের দাপটে ঘরছাড়া হতে হয়েছিল এক পরিবারকে৷ বিচারের আশায় আদালতের দুয়ারে হাজির হয়েছিল সংশ্লিষ্ট পরিবারটি৷ বিষয়টি শোনার পরই পুলিশকে পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতার হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থা৷ একই সঙ্গে ঘরছাড়া পরিবারকে ঘরে ফেরানোর জন্যও পুলিশকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি৷ কাঠগড়ায় কাঁথির তৃণমূল কাউন্সিলর অতনু গিরি৷ বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই কাঁথি শহরে ছড়িয়েছে ব্যাপক চাঞ্চল্য৷ শাসকের বিরুদ্ধে ‘সন্ত্রাসে’র অভিযোগে সরব হয়েছে গেরুয়া শিবির৷
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর নভেম্বর মাসে ৭ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা শেখ আমিরউদ্দিন কাঁথি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। লিখিত অভিযোগে তিনি পুলিশকে জানান, জমি বিবাদ কেন্দ্র করে অন্য একটি পরিবারের সঙ্গে ঝামেলা হয়। সেই ঝামেলা মেটাতে সালিশি সভা ডেকেছিলেন ৭ নং ওয়ার্ড়ে কাউন্সিলর অতনু গিরি। সালিশি সভাতে ১ লক্ষ টাকা জরিমানা করেন অতনু৷ সেই টাকা দিতে না পারায় ঘরছাড়া করে দেয়৷ মামলাকারী শেখ আমিনউদ্দিনের আরও অভিযোগ, ‘‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা বাড়ি দেওয়ার জন্য অতনু গিরি আমার স্ত্রীর কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা ঘুষ চেয়েছিল৷ টাকা দিতে পারিনি বলে আবাস যোজনার তালিকা থেকে নাম বাদ দিয়ে দেয়৷’’
এমন পরিস্থিতিতে সুবিচার চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এজলাসে মামলা করেন অভিযোগকারী। দ্রুত ওই পরিবারকে বাড়ি ফেরানোর নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি। সব রকমের সহযোগিতা করার জন্য কাঁথি থানার পুলিশকে নির্দেশ দেন। যদিও অভিযুক্ত তৃণমূল কাউন্সিলর অতনু গিরি বলেন, “এই অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যে। এই ঘটনার সঙ্গে আমি কোনভাবেই যুক্ত নয়।’’ বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি অসীম মিশ্র বলেন, “সংবিধান’কে মান্যতা না দিয়ে তৃণমূল নেতারা নিজেরাই মোড়লি শুরু করেছেন। এর প্রতিফলন কাঁথি পুরসভার এই ঘটনা। আসলে তৃণমূল দলটাই চলছে তোলাবাজি করে৷’’
বস্তুত, গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে কাঁথি পুরসভার পুরপ্রধান সৌমেন্দু অধিকারী সহ বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর তৃণমূল কংগ্রেসের বিজেপিতে যোগ দেন। তার মধ্যে কাঁথি পুরসভা ৭ নং ওয়ার্ড়ে কাউন্সিলর অতনু গিরি ছিল অন্যতম। কাঁথি পুরসভার কাউন্সিলর থাকাকালীন অতনু গিরি শুভেন্দু অধিকারীর ঘনিষ্ঠ বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি। কিন্তু বিজেপির ‘দুশো পারের’ স্বপ্ন পূরণ না হওয়ায় শুভেন্দু অধিকারীর হাত ছেড়ে আবারও তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করেন অতনু গিরি। অভিযোগ, তারপর থেকেই এলাকায় ‘দাদাগিরি’ শুরু করেছেন ওই কাউন্সিলর৷
আরও পড়ুন: শুভেন্দুর সঙ্গে বৈঠকে সত্যি কি ঘুচল অভিমান, নাকি তৃণমূলেই যাচ্ছেন হিরণ