মিলন পণ্ডা, কাঁথি: সরকারি হাসপাতালে মিলছে না রক্ত৷ দ্বারস্থ হতে হচ্ছে বেসরকারি হাসপাতালের৷ একাধিক থ্যালাসেমিয়া রোগী রক্ত না পেয়ে সরকারি হাসপাতালের সুপারকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাল রোগী পরিবাররা৷ হাসপাতালে দালাল চক্র ও সুপারের মদতে এমনই কর্মকাণ্ড হচ্ছে বলে বিস্ফোরক দাবি করলেন বিজেপি নেতৃত্বরা।
বুধবার প্রয়োজনীয় রক্ত না পেয়ে কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে বিক্ষোভ দেখালেন থ্যালাসেমিয়া রোগীর পরিবাররা। অভিযোগ, রোগীদের অধিকাংশ শিশু। রক্ত না পেয়ে থ্যালাসিমিয়া শিশুরা আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। রক্তের সন্ধানে কয়েকদিন ধরে হাসপাতালে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন রোগীর আত্মীয় পরিজনেরা। রক্ত পাওয়ার আশায় খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছেন বহু রোগী পরিবাররা। সেখানেও কালোবাজারি করছে হচ্ছে।
অভিযোগ, পুরসভা থেকে রোগীদের থাকার জন্য ৩০ টাকা ধার্য করলেও সেটা বেড়ে ৫০ টাকা হয়েছে। এখানেও কোনো রশিদ দেওয়া হচ্ছে না। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, হাসপাতালে রক্ত রয়েছে কিনা জানতে ব্লাড ব্যাংকের আধিকারিক বলছেন সুপারের কাছে যান৷ হাসপাতালের সুপারে কাছে গেলে বলছে ব্লাড ব্যাংকের অধিকারীকের কাছে যান৷ এমন পরিস্থিতিতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন রোগীর আত্মীয় পরিজনেরা।
দীর্ঘদিন ধরে এমন হেনস্থা শিকার হয়ে সুপারের চেম্বারের সামনে বিক্ষোভ দেখান রোগী ও আত্মীয় পরিজনেরা। এমনকি রক্ত আনতে গেলেও রোগীও আত্মীয় পরিজনের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছেন। রক্ত পাওয়ার জন্য হাসপাতালের খোলা আকাশের নিচের দিন কাটাচ্ছেন একাধিক রোগীর পরিবার।
কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতি হলেন পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা শাসক। সম্পাদক হলেন কাঁথির মহকুমা শাসক সৌভিক ভট্টাচার্য। এদিন রোগীদের বিক্ষোভের সময় সুপারের পাশে বসেই রোগীদের বিক্ষোভ শোনেন।
রোগী আত্মীয় কবিতা মণ্ডল বলেন, ‘‘তিন চার দিন ধরে ঘুরছি। তারপরেও রক্ত পাচ্ছি না। ব্লাড ক্যাম্প হয়েছে শুনেছি। রাতে থাকার জন্য ৫০ টাকা করে নিচ্ছে। টাকার অভাবে আমরা বাইরে ঘুমাচ্ছি। টাকা নিচ্ছে কোনো রশিদ দিচ্ছে না।’’ অন্য এক রোগী আত্মীয়ের অভিযোগ, প্রতিদিন রক্তদান শিবির হচ্ছে, কিন্তু থালাসমিয়ার রোগীরাও ব্লাড পাচ্ছে না। দিনের পর দিন ঘুরছি, তারপরেও কোন রক্ত পাওয়া যাচ্ছে না৷
কাঁথি পুরসভার কাউন্সিলর তথা বিজেপি নগর মণ্ডলের সভাপতি সুশীল দাস বলেন, ‘‘সরকারি হাসপাতালে ব্লাড নেই৷ কিন্তু বেসরকারি নার্সিংহোমগুলোতে ব্লাড পাওয়া যাচ্ছে। কোথা থেকে পাচ্ছে? মহকুমা হাসপাতালে দালাল শুরু হয়েছে। হাসপাতালে দুর্নীতি হচ্ছে। কাঁথি ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে রক্ত অন্যত্র পাচার হয়ে যাচ্ছে। আমরা সরাসরি ব্লাড দেব৷’’
কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে সুপার অরূপ রতন করনের কথায়, ‘‘নন্দীগ্রাম থেকে ব্লাড এলেই মানুষকে পরিষেবা দেওয়া হয়। গরম থাকার কারণে ব্লাড এমনিতে একটু কম থাকে। কয়েকদিনের মধ্যে সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে৷’’ কাঁথি পুরসভার পক্ষ থেকে রাতে রোগী থেকে আত্মীয় পরিজন থাকার জন্য ৩০ টাকা করে ধার্য করেছিল। সেখানেও কালোবাজারি হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে হাসপাতালের সুপার বলেন, ‘‘এই অভিযোগটা পেলাম। পুরসভা পুরপ্রধানের সঙ্গে কথা বলছি। ৫০ টাকার পরিবর্তে ৩০ টাকা করা যায়। রশিদ ছাড়া যে টাকা নিচ্ছে সেটাও আমরা খোঁজ খবর করে দেখছি৷’’