দার্জিলিং: নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৩ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে দার্জিলিং-এ এই দিনটি পালন করলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিনের এই অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে তিনি ঐক্যের বার্তা দেন। এদিন তাঁর বক্তব্য জুড়ে ছিল শুধুই নেতাজি। পাশাপাশি নেতাজির ফাইল নিয়ে কেন্দ্রের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
নেতাজির জন্মদিনে দার্জিলিং-এ আসতে পেরে তিনি আনন্দিত। তিনি বলেন, “আমাদের সরকার ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর আমাদের চিন্তায় ছিল যে, নেতাজি দার্জিলিং এবং কার্শিয়াংয়ে বহু দিন ছিলেন। তাহলে আমরা কেন শুধু কলকাতাতে তাঁর জন্মদিন পালন করব। সেই জন্য আমি চার বছর পাহাড়ে এসে এই দিনটি উদযাপন করি। পাহাড়ে এই অনুষ্ঠান পালন করতে আমার খুব ভালো লাগে, কারণ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু স্বাধীনতার আগে জরুরি জাতীয় সেনা বাহিনী তৈরি করেছিলেন। আজ সেনা আমাদের কাছে গর্বের বিষয়। তাই এই কৃতিত্বের প্রথম ভাগিদার অবশ্যই নেতাজি। সেই সময় আমাদের গোর্খারা নেতাজির সঙ্গ দিয়েছিল। গোর্খা আর্মিরা সেইসময় থেকে আজও দেশের জন্য লড়ে যাচ্ছেন। নেতাজিকে স্বাধীনতা সংগ্রামে পূর্ণ সহযোগিতা করেছিলেন। সেইজন্যই পাহাড়ে নেতাজির জন্মদিন পালন খুব উল্লেখযোগ্য।”
নেতাজির জন্মদিন উপলক্ষ্যে পাহাড়ে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে এসে মমতা পাহাড়ের সংস্কৃতি ও শিল্পীদের মুক্ত কন্ঠে প্রশংসা করলেন। পাশাপাশি তিনি নেতাজির মতাদর্শ তুলে ধরলেন। নেতাজির মতো নেতার আদর্শকে মাথায় রাখতে বললেন তিনি। নেতাজির প্রসঙ্গ বলতে গিয়ে তিনি নেতাজির ‘ধর্ম নিরপেক্ষ’ সত্ত্বার কথা মনে করিয়ে দিলেন। নেতাজি সবার কথা বলেছিলেন। এই প্রসঙ্গে তিনি দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেন। এই সময় দেশে ধর্মকে কেন্দ্র করে বিভাজন বেশ প্রকট হয়ে উঠেছে। এই অবস্থা বিরোধিতা করে নেতাজির মতাদর্শ তুলে ধরেন মমতা।
নাম না করে বিজেপি সরকারকে এক হাত নেন তিনি। তিনি জানান, হিন্দু ধর্ম পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে আছে। সেখানে দাঁড়িয়ে আজ দেশে যা চলছে তা হিন্দু ধর্মের নামে অপমান। আমি হিন্দু বলে কি অন্য র্মের পরব আমরা কি উদযাপন করব না? দেশের নেতা এমনই হওয়া উচিৎ, যিনি দেশের সব মানুষকে নিয়ে দেশকে নেতৃত্ব দেবেন। যিনি সব ধর্মের মানুষকে সন্মান দেখিয়ে তাঁদের সঙ্গে নিয়ে চলেন তিনিই দেশের নেতা। সেই প্রসঙ্গে মমতা নেতাজির উদাহরণ তুলে ধরেন। দেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে লড়াই করার যে মতাদর্শ নেতাজি তুলে ধরেছিলেন, সেই কথাই মনে করিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
তারপর তিনি সরাসরি বিজেপি সরকারকে আক্রমণ করেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘নেতাজি যে পরিকল্পনা কমিশন তৈরি করেছিলেন স্বাধীনতার আগে, বিজেপি সরকার এসে তা তুলে দিল। এখন তো রাজ্য সরকারের কথা বলার কোনও জায়গাই নেই। এরপরই তিনি সরব হন নেতাজির জন্মদিনকে জাতীয় ছুটি হিসেবে পালন করার দাবিতে। নেতাজির ফাইল নিয়ে মোদি সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন মমতা। আজ পর্যন্ত মোদি সরকার নেতাজির ফাইল বিশ্ববাসীর সামনে আনতে পারেনি।
এদিনের মঞ্চ থেকে তিনি ফের একবার সিএএ এবং এনআরসি ইস্যু নিয়ে সোচ্চার হলেন। এই নিয়ে তিনি নেতাজির প্রসঙ্গ টেনে আনেন। তিনি বলেন, ‘নেতাজি স্বাধীনতার জন্য রক্ত চেয়েছিলেন, আর দেশে বর্তমানে সিএএ এবং এনআরসির মতো ইস্যুতে রক্ত ঝরছে সাধারণ মানুষের।’ এই মঞ্চ থেকে তিনি নেতাজি, গান্ধীজি-র মতো দেশ প্রেমিকরা যে রাস্তা দেখিয়েছেন সেই রাস্তায় চলার আহ্বান জানান মমতা।