এগরা: পুলিশের তোলাবাজি থেকে বাঁচতে বেপরোয়া গতিতে পালাতে গিয়ে ৭ বছরের শিশুকে পিষে মারল পশু বোঝাই এক গাড়ি। এই ঘটনার পর উত্তেজিত স্থানীয় বাসিন্দারা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে। অবরোধ তুলতে এসে খণ্ডযুদ্ধ বাঁধে পুলিশ জনতার মধ্যে। পুলিশ লাঠিচার্জ করলে জখম হয়ে পড়েন বেশ কয়েকজন অবরোধকারী। এরপরই স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইঁট ছুঁড়লে তার আঘাতেও জখম হন বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মী।
ঘটনাটি ঘটছে পূর্ব মেদিনীপুর (Purba Medinipur) জেলার এগরা (Egra) থানার আলংগিরি এলাকায়। পুলিশ জানিয়েছে মৃত শিশু রাজদীপ ঘোড়াই, বয়স ৭। ঘটনার পর পুলিশ ঘাতক ছাগল গাড়িটি আটক করেছেন। গ্রেফতারও করেছেন চালককে। ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন কাঁথি মহকুমার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সহ বিশাল পুলিশ বাহিনী এবং জনপ্রতিনিধিরা। পুলিশ জনতার খণ্ডযুদ্ধে ৪ জন পুলিশ কর্মী এবং ১০ জনের বেশি অবরোধকারী জখম হয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার দুপুরে মৃত শিশুটি তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলংগিরিতে রাস্তার পাশের একটি মিষ্টির দোকানে দাঁড়িয়ে ছিল। সেই সময় ছাগল বোঝাই একটি পিকআপ ভ্যানকে তাড়া করছিল পুলিশ গাড়ি। পুলিশের তাড়া থেকে বাঁচতে দ্রুত গতিতে পালাতে গিয়ে গাড়িটি আচমকাই গতি বাড়িয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। রাস্তার পাশে থাকা শিশুটিকে পিষে দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তড়িঘড়ি স্থানীয়রা গাড়িটিকে তাড়া করে ধরেও ফেলেন।
এরপর উত্তেজিত জনতা ঘাতক গাড়ির চালককে মারধর করেন। গাড়িটিও ভাঙচুর করা হয়। এর মাঝে পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভে রাস্তায় অবরোধ শুরু করে এলাকা বাসিন্দারা। সেই অবরোধ তুলতে গিয়েই ধুন্ধুমার কান্ড বেঁধে যায় পুলিশের সঙ্গে। বিক্ষোভকারীদের ছোঁড়া ইঁটের আঘাতে জখম হন একাধিক পুলিশকর্মী। এলাকাবাসীদের অভিযোগ, পুলিশ বেআইনিভাবে গাড়ি আটকে টাকা তুলছিল। উত্তেজিত জনতার অবরোধ তুলতে গিয়ে ব্যাপক লাঠিচার্জও করেছে। এর জেরে আহত হয়েছেন একাধিক পুরুষ ও মহিলা।
অন্যদিকে পুলিশের দাবি, বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ করে ইঁট ছোঁড়ার জেরে একাধিক পুলিশ কর্মীও জখম হয়েছেন। পুলিশ বাধ্য হয়ে কাঁদানি গ্যাস ছুঁড়ে ছত্রভঙ্গ করেন। তারপরেই বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিয়েছেন পুলিশ। আলংগিরি গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, “এই দিন দুপুরে শিশুটি রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে ছিল। সেই সময় ছাগল বোঝাই একটি গাড়ি শিশুটিকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। আমরা গাড়িটিকে আটকে করেছি। চালককে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছি। সেই সময় জানতে পারি ওই গাড়িটি পুলিশের তাড়া খেয়ে পালাচ্ছিল। এরপরেই এলাকাবাসীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন।”
এই বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা আরও বলেন, “ঘটনার পরই বিভিন্ন এলাকা থেকে মহিলারা এসে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায়। সেই অবরোধ তুলতে গিয়ে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। পাল্টা পুলিশকে লক্ষ করে ইঁট ছোঁড়ে বিক্ষোভকারীরা। এর জেরে পুলিশ ও গ্রামবাসীদের বেশ কয়েকজন জখম হয়েছেন।”
এগরার বিধায়ক তরুণ কুমার মাইতি বলেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। পিকআপ ভ্যানটি বেপরোয়া গতিতে চলার জেরেই এই দুর্ঘটনা বলে প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জানতে পেরেছে। কিন্তু এই ঘটনায় রাস্তা অবরোধ করে আইন হাতে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন স্থানীয়রা।” আরও বলেছেন, “পাল্টা একাধিক গ্রামবাসীও গুরুতর জখম হয়েছেন। ঘাতক গাড়িটির পাশাপাশি চালককেও পুলিশ আটক করেছে। সেই সঙ্গে মৃত শিশুর দেহটিকে ময়না তদন্তে পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনায় আইন আইনের পথে কাজ করবে। তবে একই সঙ্গে তিন মাথার মোড় হওয়ায় এই গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আরও ট্রাফিক দেখভালের ব্যবস্থা যাতে করা যায় সেই বিষয়েও প্রশাসনকে গুরুত্ব সহকারে দেখতে বলা হয়েছে।”