মিলন পণ্ডা, দিঘা: সমুদ্র উপকূলে দুর্ঘটনা রুখতে এবার স্পিডবোট নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। দিঘা, মন্দারমণিতে দুর্ঘটনা এড়াতে এবার স্পিডবোটে নজরদারি চালানো হবে। এজন্য প্রাথমিকভাবে আটটি স্পিডবোট কেনা হচ্ছে। নুলিয়ারা স্পিডবোটে প্রতিটি ঘাটে নজরদারি চালাবেন।
পরপর সমুদ্রে ডুবে পর্যটক মৃত্যুর পর পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন সৈকতের পাশাপাশি জলপথেও নজরদারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে দুর্ঘটনায় অনেকটাই রাশ টানা যাবে বলে তারা মনে করছে। দুর্ঘটনা ঘটে গেলে উদ্ধারকাজেও গতি আসবে। জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা আধিকারিক মৃত্যুঞ্জয় হালদার বলেন, ‘‘আটটি স্পিডবোট কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মে-জুলাই মাস পর্যন্ত দিঘা ও মন্দারমণিতে স্নানে নেমে ১০জন পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে।’’
২৮ জুলাই দিঘার সমুদ্রে তলিয়ে উত্তর ২৪ পরগণার টিটাগড়ের বাসিন্দা দীপঙ্কর নন্দীর মৃত্যু হয়। তার আগে ২২ জুলাই শঙ্করপুরে পাথরের উপর দাঁড়িয়ে সেলফি তোলার সময় ভেসে যায় বাংলাদেশের চট্টগ্রামের বাসিন্দা বছর সতেরোর প্রিয়ন্তি পাটোয়ারি। পরে তার দেহ উদ্ধার হয়।
১৬ জুলাই মন্দারমণিতে সমুদ্রস্নানে নেমে দুর্গাপুরের তিন পর্যটক-সমর চক্রবর্তী, কৌশিক মণ্ডল ও ঋত্বিক গড়াইয়ের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনার আগের দিনই মন্দারমণিতে তলিয়ে হাওড়ার আন্দুলের বাসিন্দা অনুপম বর্মনের মৃত্যু হয়। এছাড়া, দিঘায় বেড়াতে এসে হুগলির এক পর্যটক উদয়পুরে সমুদ্রে তলিয়ে মারা যান।
১৬ জুন মন্দারমণির সমুদ্রে বিহারের মুজফ্ফপুরের মণীশ কুমার তলিয়ে যান। ১৪ জুন দিঘার জগন্নাথঘাটের কাছে সমুদ্রে তলিয়ে উত্তর ২৪ পরগণার মধ্যমগ্রামের কিশোর শুভজিৎ দে-র মৃত্যু হয়। এছাড়া, ২৫ মে দিঘায় ছত্তিশগড়ের বাসিন্দা বেদপ্রকাশ সাহু তলিয়ে মারা যান। পরপর সমুদ্রে তলিয়ে এতগুলি মৃত্যুর ঘটনায় সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
পুলিশ ও সিভিল ডিফেন্স ভলান্টিয়াদের দাবি, অনেক পর্যটক নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে উত্তাল সমুদ্রে নেমে পড়েন। অ্যাডভেঞ্চার আর সেলফির নেশায় জীবনে ঝুঁকি নেন। নেশাগ্রস্ত অবস্থায় সমুদ্রে নামার জেরেও দুর্ঘটনা ঘটছে। এসব কারণেই নুলিয়ারা স্পিডবোটে প্রতিটি ঘাটে নজর রাখবেন। সমুদ্রে নামতে নিষেধাজ্ঞার সময় কেউ জলে নামলে তাঁদের তুলে দেওয়া হবে। সাধারণত জুন থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত বঙ্গোপসাগর উত্তাল থাকে।
নিম্নচাপ ও কোটালের জেরে সমুদ্র ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। তাই এসময়ে দুর্ঘটনাও বেশি ঘটে। গত বছরও মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ১০জন পর্যটকের মৃত্যু হয়েছিল। ডিএসপি (ডিঅ্যান্ডটি) আবু নুর হোসেন জানান, দিঘার সি-হক ঘোলা ঘাট, ক্ষণিকা ঘাট, পুলিস হলিডে হোম ঘাট সহ প্রতিটি ঘাটে পর্যটকদের সচেতন করা হচ্ছে। সবসময় মাইকিং চলছে। সতর্কীকরণ বোর্ড লাগানো হয়েছে। মন্দারমণিতেও সচেতনতা প্রচার ও নজরদারি চলছে। পুলিশকর্মী ও নুলিয়াদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। পর্যটকদেরও সবসময় সতর্ক থাকতে হবে।