
তিমিরকান্তি পতি, বাঁকুড়া: আমের জন্য আর মালদহ, মুর্শিদাবাদের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় না বাঁকুড়ার মানুষকে। আম উৎপাদনে এখন স্বয়ং সম্পূর্ণ রুখা শুখা লাল মাটির এই জেলা। বরং স্বাদে, গন্ধে মালদহ, মুর্শিদাবাদের আমকে পিছনে ফেলে এখন সামনের সারিতে এই জেলার আম।
স্থানীয় বাজারগুলি সহ সমগ্র জেলা, রাজ্যের চাহিদা মিটিয়ে গত কয়েক বছর ধরে দেশের বিভিন্ন অংশে পৌঁছে যাচ্ছে এখানকার উৎপাদিত আম। বর্তমানে বাঁকুড়া-১, রানিবাঁধ, রাইপুর, সিমলাপাল, হিড়বাঁধ, ছাতনা, বিষ্ণুপুর ও শালতোড়ার পতিত জমি আর কংসাবতী সেচ খালের দু’পাশে লাগানো গাছ থেকে উৎপাদিত আম্রপালি, হিমসাগর, চৌসা, মল্লিকা, ল্যাংড়া এখন রসনাপ্রিয় বাঙালির পছন্দের শীর্ষ তালিকায় রয়েছে।
জেলা উদ্যান পালন দফতর সূত্রে খবর, বিকল্প কৃষি ব্যবস্থার কথা ভাবতে গিয়ে ২০০৯-১০ সালে রুখা, শুখা লাল মাটির এই জেলায় পরীক্ষামূলকভাবে আম্রপালি আমের চাষ শুরু হয়। তারপর ধীরে ধীরে সেই সংখ্যা বাড়তে থাকে। বর্তমানে এই জেলায় সাড়ে পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে আমের বাগান রয়েছে। চলতি বছরে ২২০০ হেক্টর জমিতে আম্রপালি ও ২০০ হেক্টর জমিতে হীমসাগর, মল্লিকা, ল্যাংড়া জাতের আম চাষ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ৬০০ হেক্টর জমিতে বেশী চাষ হয়েছে। চলতি বছরে বাগানগুলিতে প্রচুর পরিমানে গাছে মুকুল এসেছে। সব ঠিকঠাক থাকলে দেড় লক্ষ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হতে চলেছে বলে জানানো হয়েছে।
দেড় বিঘা জমিতে আমের বাগান রয়েছে সিমলাপালের মাচাতোড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের জামকানালী গ্রামের গোরাচাঁদ সিংহমহাপাত্রের। তিনি বলেন, আম চাষের সেরকম খরচ নেই, প্রকৃতি সহায় থাকলে যথেষ্ট লাভজনক এই চাষ। চলতি বছরে অতিরিক্ত কুয়াশার কারণে কিছু সমস্যা হচ্ছে৷ তবে এখনও মোটের ওপর ভাল ফলন দেখা যাচ্ছে৷
জেলা উদ্যান পালন দফতরের ফিল্ড অফিসার সঞ্জয় সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘আম উৎপাদনে বাঁকুড়া জেলা দেশের মধ্যে প্রথম হবে, এই ভাবনা আমাদের কল্পনার মধ্যেও ছিল না। কিন্তু বর্তমানে সেই অসম্ভব সম্ভব হয়েছে। একাধিকবার দিল্লির আম মেলায় বাঁকুড়ার আম প্রথম স্থান অধিকার করেছে। এবারও দিল্লি, কলকাতার পাশাপাশি উত্তরবঙ্গ আম মেলাতেও যোগদানের আমন্ত্রণ এসেছে।’’ একই সঙ্গে জেলা, রাজ্য, প্রতিবেশী রাজ্যগুলির চাহিদা মিটিয়ে জাপানেও আম রফতানির বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে বলে তিনি জানান।
আরও পড়ুন: ‘কেঁচো খুড়ুন, অনেক কেউটে আছে’ শুভেন্দুর চাকরি বিক্রি নিয়ে বিস্ফোরক সুপ্রকাশ