সরস্বতীর আরাধনায় পুরোহিতের আসনে স্কুলের ২ ছাত্রী

0
231

খাস ডেস্ক: শিকল ভেঙে নিজেদের অধিকার কেড়ে নেওয়ার লড়াইটা কিন্তু কন্যাসন্তানদের জন্ম থেকেই করে যেতে হয়। আর প্রসঙ্গ যখন যে কোনও পুজো বা আরাধনা অথবা মন্ত্রোচ্চারণ সেখানে মহিলা পুরোহিতের সংখ্যা খুব একটা বেশি নয়। বেশ কয়েকবার বিয়ে বা কোনও পুজোয় মহিলা পুরোহিত পুজো করছেন তা শিরোনামে উঠে এসেছে। তবে এবার মহিলা পুরোহিত শুধু বললে চলবে না, এবার দুই ছাত্রী সিদ্ধহস্তে ঘন্টা বাজিয়ে, মন্ত্রোচ্চারণ করে নিজেদের স্কুলের পুজো(Saraswati Puja) নিজেরাই করল। পুজোর পরিবেশেই বড় হয়ে ওঠা এই দুই বোন হাওড়ার বালি বঙ্গশিশু বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী। এবার সেই স্কুলেই দেখা গেল লিঙ্গবৈষম্য ভেঙে ছাত্রীদের পুরোহিত হয়ে ওঠার ঘটনা।

- Advertisement -

আরও পড়ুন ‘আকাশ ভরা, সূর্য-তারা’, সরস্বতী পুজোর সকালে নিজের কলেজে সারপ্রাইজ ভিজিট মমতার

বৃহস্পতিবার সরস্বতী পুজোয়(Saraswati Puja) এই দুই ছাত্রীর মন্ত্রেই স্কুলের অন্যান্য ছাত্রী এবং শিক্ষিকারাও পুষ্পাঞ্জলি দিলেন। একদিকে পড়াশোনা অন্যদিকে বাবার কাছে পৌরহিত্যের শিক্ষা, মাঝেমধ্যে বাবার সঙ্গেই দুই বোন উত্তরীয় ঝুলিয়ে শাড়ি পরে সামিল হয়ে যায় কোনও পুজো বা শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠানে। শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠানে এই দুই বোনের গীতাপাঠ শুনে যদিও বাহবাই কুড়িয়েছে তারা। বড় বোন দেবদত্তা চলতি বছরেই মাধ্যমিক দেবে এবং ছোট মেয়ে দেবারতি সদ্য দশম শ্রেণিতে উঠেছে। পড়াশোনার মধ্যেও বাবার কাছে কিছু বছর আগে পৌরহিত্য শেখার আবদার করে বড় মেয়ে। এরপর থেকেই দিদি-বোনের পৌরহিত্য নিয়ে চর্চা শুরু হয় বাবার হাত ধরে।

এই দুই ছাত্রীর এহেন গুণের কথা আগেভাগে না জানলেও হোয়াটসঅ্যাপের ছবি দেখে স্কুলের শিক্ষিকারাও এ সম্পর্কে অবগত হন। ব্যস! মেয়েদের এই স্কুলের নিজেদের ছাত্রীই যখন পৌরহিত্য জানে তখন আলাদা করে পুরোহিতের কি প্রয়োজন! এরপরেই টিচার-ইন-চার্জ নবালী ভট্টাচার্যের সঙ্গে আলোচনা করে শিক্ষিকারা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন তাঁদের স্কুলের পুজোর পুরোহিত হবে এই দুই ছাত্রীই। সিদ্ধান্ত নেওয়া মাত্রই কথা বলা হয় দুই বোনের মা কৃষ্ণা চক্রবর্তীর সঙ্গে। তাদের মায়ের অনুমতি পাওয়ামাত্রই এ বছরে সরস্বতী পুজোর পুরোহিত এই ছাত্রীরাই হবে তার সর্বশেষ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে স্কুল কর্তৃপক্ষ।

কুসংস্কারাচ্ছন্ন এই সমাজে আশার আলো দেখাতে বহু মহিলা এখন এগিয়ে আসছে। তবে এবার এই স্কুলের এহেন ঘটনায় কিশোরীদের পুরোহিত হয়ে ওঠার ঘটনা যে আর পাঁচটা শিকল ভাঙার ঘটনার চেয়ে একটু আলাদা তা বোঝাই যাচ্ছে। লিঙ্গবৈষম্যের অভিশাপ যে ছাত্রীদের আর পিছিয়ে রাখছে না, এমনকি স্কুলের শিক্ষিকারাও যে আধুনিকতাকে সাদরে গ্রহণ করে মেয়েদের এগিয়ে আসার শক্তি দিচ্ছেন তার আদর্শ উদাহরণ এই ঘটনা। শুধুমাত্র সিলেবাসের শিক্ষাই নয়, ছাত্রীরাও একজন পুরুষের থেকে কোনও অংশে পিছিয়ে নেই সেই শিক্ষা দিয়ে উদাহরণ তৈরি করে নজির গড়লেন বালি বঙ্গশিশু বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকারা।