ঋষিগোপাল, পূর্ব বর্ধমান: একবিংশ দশকে দাঁড়িয়েও কুসংস্কারমুক্ত নয় সমাজ। এবার তাঁরই প্রমাণ পাওয়া গেল পূর্ব বর্ধমানে (Purba Bardhaman)। বছর উনিশের এক যুবককে ধারল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠল এক তান্ত্রিকের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটে পূর্ব বর্ধমান (Purba Bardhaman) জেলার গলসি বাজারের ল্যাওলাপুল এলাকায়।
স্থানীয় সূত্রে খবর, মিলন নাইয়া নামের এক তান্ত্রিক নিজেকে কালীরসাধক বলে দাবি করতেন। নানা রকম তন্ত্রসাধনা ও ঝাড়ফুকের কাজ করতেন তিনি। শনিবার রাতে জিত দানা (১৯) নামের এক কিশোর ওই তান্ত্রিকের বাড়ি গিয়েছিলেন। এরপর থেকেই খোঁজ মেলেনি ওই কিশোরের। রবিবার সকালে তান্ত্রিককে জিজ্ঞাসা করার পর জিতের নিথরদেহের খোঁজ মেলে। পাশে পড়ে থাকতে দেখা যায় মৃতের পোশাকগুলিও। খবর দেওয়া হয় স্থানীয় থানায়। পুলিশ এসে দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, মৃতের বাড়ি খেতুড়া গ্রামে। গত রবিবার ডিভিসি সেচখালের পাশে দয়ালপুর ও সারুলের মাঠে একটা ঝোপের পাশে কেটে নেওয়া ধান জমিতে জিতের নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায় উলঙ্গ অবস্থায়। মৃতের কপালে, বুকে ও পেটে একাধিক জায়গাতে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে দাবি তাঁদের। গলায় ফাঁসের চিহ্নও রয়েছে। স্থানীয় সূত্রে পাওয়া খবর, মৃতদেহ উদ্ধার হওয়া স্থানের কাছে ঝোপে একটা কালীর মূর্তি রয়েছে। বছরে একবার পুজো হয়। সেখানেই তন্ত্রসাধনা করতেন ওই তান্ত্রিক (Tantric)।
মৃতের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের বাবা সমীর দানা পুরুলিয়া একটি চালকলের কর্মী। জিত রাজমিস্ত্রীর যোগাদার ছিলেন। জিতের বাবা বলেছেন, “আমার স্ত্রী শারিরিক অসুস্থ ছিলেন। বছর খানেক আগে তাই ওই তান্ত্রিকের কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম তন্ত্রসাধনার জন্য। সেই থেকে ওই তান্ত্রিকের সঙ্গে আমাদের পরিচয়। তারপর থেকে প্রায়ই আমাদের বাড়িতে আসা যাওয়া করত।” মৃতের মা বলেন, “ওই তান্ত্রিকের চালচলন ঠিক মনে হয়নি। তাই বাড়িতে আসতে নিষেধ করেছিলাম। ছেলেকেও মেলামেশা করতে বারন করা হয়েছিল। আমার ছেলেকে ওই তান্ত্রিক খুন করে দিতে পারে স্বপ্নেও ভাবিনি।”
মৃতের মাসি রূপা গড়াই বলেছেন, “ওই তান্ত্রিকের কাছে আমরা গিয়েছিলাম। তখনই ওর কথায় সন্দেহ হয়। সেখানে তান্ত্রিকের সঙ্গে যে মহিলা ছিলেন, তাঁর মোবাইল যাচাই করে জানতে পারি জিতকে ওই মহিলা ঘটনার দিন রাতে ছয়বার ফোন করেছিলেন। তারপর তাঁদের চেপে ধরায় খুনের ঘটনার কথা জানতে পারি।” স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সবাই চাপ দিতেই তান্ত্রিক জানিয়ে দেয় জিতের দেহ কোথায় পড়ে রয়েছে। সেখানে গিয়ে তাঁরা প্রথমে পোশাকগুলি দেখতে পায়। তারপর খোঁজাখুঁজি করে মেলে দেহ।
পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, গলায় দড়ি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে জিতকে। গলায় ও দেহে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। খুনের পরে দেহ টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। জেলা পুলিশের এক আধিকারিকের দাবি, দেহ উদ্ধার হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে। তান্ত্রিকের বিষয় না অন্য কোন কারণ রয়েছে সেই সব দিকও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।