
মিলন পণ্ডা, কাঁথি: একসময় দুই মেদিনীপুর সহ সারা রাজ্য দাপিয়ে বেরিয়েছেন৷ বয়সের ভারে, চিকিৎসকের পরামর্শে এখন অবশ্য দিনভর বাড়িতেই থাকেন৷ একুশের বিধানসভা প্রাক্কালে প্রকাশ্যে বলেছিলেন, মেজো ছেলেকে নিয়ে তাঁর গর্বের কথা৷ সেই মেজো ছেলেকে নিয়ে সোমবার দিনভর হাজারও কটুক্তি শুনতে হল শিশির অধিকারীকে৷ তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের ঘোষণানুযায়ী, এদিন সকাল থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত দফায় দফায় কাঁথি শহরে অধিকারী নিবাস শান্তিকুঞ্জে ‘গেট ওয়েল সুন’ শুভেন্দু (Suvendu Adhikari) স্লোগান নিয়ে হাজির হয়েছিলেন তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা। পূর্ব মেদিনীপুরের পাশাপাশি পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পূর্ব বর্ধমান সহ একাধিক জেলা থেকে তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা হাজির হয়েছিলেন শান্তিকুঞ্জের সামনে৷ পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশ বাধ্য হয় ‘শান্তিকুঞ্জে’র ৫০ মিটার দূরে ব্যারিকেড তৈরি করতে৷। তবু ভেসে আসতে থাকে, হাজারও কটুক্তি, সঙ্গে ‘সুস্থতা’র প্রার্থনা!
শুভেন্দু বাড়িতে ছিলেন না৷ তবে এসব কটুক্তি শুনতে হয়েছে প্রবীণ রাজনীতিক, শুভেন্দু পিতা শিশিরবাবুকে৷ ঘটনায় যারপরনাই বিরক্ত শুভেন্দুর সেজো ভাই, ‘অফিসিয়ালি’ তমলুকের তৃণমূল সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী৷ ‘খাসখবর’কে বললেন, ‘‘গোটা ৩০-৪০ টা ছেলে দিনভর চ্যাংড়ামি ও অসভ্যতা করল৷ আমাদের এলাকার মানুষ এসব সহ্য করে না৷ পাড়ার মেয়েরা আমাদের সম্মতির অপেক্ষায় ছিল৷ ওরা বেরিয়ে আসতে চেয়েছিল৷ ঝেঁটিয়ে বিদায় করে দিত৷ আমরা মানা করেছি। আমরা কোনও যুদ্ধে যাব না৷’’ স্পষ্ট করেছেন, ‘‘যেতে হলে আইনের পথে যাব। মহামান্য আদালতের প্রতি আমাদের আস্থা রয়েছে৷’’ তবে এই বিষয়ে এখনও মেলেনি শুভেন্দুর (Suvendu Adhikari) কোনও প্রতিক্রিয়া৷
যদিও পরিস্থিতির জন্য শুভেন্দুকেই দায়ী করছে শাসকদল৷ কাঁথি সংগঠনিক জেলা যুব তৃনমূলের সভাপতি তথা কাঁথি পুরসভার উপ পুরপ্রধান সুপ্রকাশ গিরি বলেন, “প্রতিদিন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে দেখি, সারা বাংলা জুড়ে একটা লোক পাগলামি করে বেড়াচ্ছে। যিনি আবার পাগল, তিনি আবার আমাদের এলাকার লোক! তাই ওঁর (শুভেন্দু) পাগলামি বন্ধের ট্রিটমেন্ট আমরা শুরু করেছি!’’ কটাক্ষের সুরে বলেছেন, ‘‘কিন্তু উনি ট্রিটমেন্ট নিতে রাজি নন৷ তাই বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন!’’ বস্তুত, শুধু কাঁথি নয়, এদিন রাজ্যের জেলায় জেলায় শুভেন্দুর ‘সুস্থতা’ কামনা করে তৃণমূলের তরফে স্থানীয় থানার পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে ‘গেট ওয়েল সুন’ শুভেন্দু গ্রিটিংস! যা দেখে বিজেপি নেতৃত্বর প্রশ্ন, ‘‘গাঁন্ধীগিরির পথের সংজ্ঞা যদি এটা হয়, তাহলে তৃণমূলের কাছে হিংসার সংজ্ঞা কি?’’ জবাবে সুপ্রকাশের শ্লেষ, ‘‘ওঁর সুস্থতা চেয়ে গোলাপই তো দিচ্ছি৷ আর কাঁটা ছাড়া গোলাপ কি ভাল লাগে!’’
আরও পড়ুন: দিদির জমানা: গণতন্ত্রকে কীভাবে বিকৃত করতে হয়, কলেজেই শুরু সলতে পাকানোর পাঠ