সুমন বটব্যাল, কলকাতা: কেউ ডেলি প্যাসেঞ্জারি করেছেন৷ আরও একধাপ এগিয়ে কেউ কেউ টানা ৭দিন ধরে ঘাঁটি গেড়ে রয়েছেন৷ ষোলো আনার জায়গায় তদ্বিরে আঠারো আনা তোষামোদিতে পিছিয়ে নেই কেউই৷ উদ্দেশ্য একটাই, যদি শিকে ছেঁড়ে৷
হ্যাঁ, জীবনের পরীক্ষার লাস্ট মিনিট সাজেশনের মতোই আরও কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষায় মমতার দলের সৈনিকেরা৷ দলের তরফ থেকে আগাম জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সুপারিশ নয় যোগ্যতার নিরিখেই তৈরি হবে প্রার্থী তালিকা৷ ফলে কে থাকবেন আর কে বাদ পড়বেন তা নিয়ে শেষ মুহূর্তে কার্যত চরম উৎকন্ঠায় কেশপুর থেকে কাকদ্বীপ- আস্ত তৃণমূল সংসারটা৷
ইতিমধ্যে দলবদলেছেন বেশ কয়েকজন৷ কয়েকজন মারা গিয়েছেন৷ কয়েকজন শারীরিকভাবে অসুস্থ৷ নির্বাচিত বিধায়কদের মধ্যেই অন্তত ৩০ জন বাদ পড়তে পারেন, যাঁর মধ্যে সিংহভাগই রয়েছে দুই মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া এবং বর্ধমান জেলায়, বিশ্বস্ত সূত্রের খবর এমনটাই৷ প্রার্থী তালিকায় উঠে আসছে একঝাঁক তরুণ মুখ৷ থাকছেন টলিউডের একাধিক অভিনেতা-অভিনেত্রী, গায়ক, খেলোয়াড় থেকে বিশিষ্টজনেরা সকলেই৷ টিম পিকের বিশ্লেষণের ভিত্তিতে এবার জেলায় জেলায় একাধিক স্বচ্ছ মুখও দেখতে পাওয়া যাবে জোড়াফুলের প্রার্থী তালিকায়৷
দলীয় সূত্রের খবর, ভবানীপুর নয়, নন্দীগ্রাম থেকেই দাঁড়াবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তাঁর খাসতালুক ভবানীপুর থেকে দাঁড়াতে পারেন ৭৬ বছর বয়সী বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়৷ যদিও আরেকটি সূত্রের খবর, শোভনদেব দাঁড়াতে পারেন রাসবিহারী থেকে৷ সেক্ষেত্রে ভবানীপুরে প্রার্থী হতে পারেন দিদিমণির ঘনিষ্ট চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য৷
সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় থাকছেন পরিচালক রাজ চক্রবর্তী থেকে গায়িকা অদিতি মুন্সি, ক্রিকেটার মনোজ তিওয়ারি প্রমুখরা৷ হালিশহর থেকে দাঁড়ানোর সম্ভবনা রয়েছে ঘরের ছেলে রাজ চক্রবর্তীর৷ দলত্যাগী মন্ত্রী লক্ষ্মীরতন শুক্লার হাওড়া উত্তর কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হচ্ছেন লক্ষ্মীরই প্রাক্তন সতীর্থ মনোজ তিওয়ারি৷ নোয়াপাড়া থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী গায়িকা অদিতি৷ শোভনদেব শেষ মুহূর্তে মমতার কেন্দ্র ভবানীপুর থেকে প্রার্থী হলে রাসবিহারী থেকে লড়তে পারেন দেবাশিস সেন৷ নিজেদের খাসতালুক বিধাননগর থেকেই প্রার্থী হচ্ছেন সুজিত বসু৷ মদন মিত্র দাঁড়াতে পারেন পানিহাটি থেকে৷
দলীয় সূত্রের খবর, জেলায় জেলায়ও একাধিক আসনে রদবদলের সম্ভবনা রয়েছে৷ ছাত্র নেতা দেবাংশুর মতো একাধিক মুখও দেখা যাবে তেমনই বাদ পড়তে পারেন দুনৌকায় পা দিয়ে থাকা একাধিক বিধায়কও৷ ফলে কে থাকবেন আর কে বাদ পড়বেন, নতুন হিসেবে কাদের ঠাঁই হবে তালিকায় তা নিয়ে চরম উৎকন্ঠায় আস্ত দলটাই৷ একদা কেশপুরখ্যাত তৃণমূল নেতা মহম্মদ রফিক বলছেন, ‘‘সুসময়ে অনেকেই দলে নাম লিখিয়ে ক্ষীর খেয়ে চলে গিয়েছেন৷ আমি কিন্তু দলের দুঃসময়ে বরাবরই দলের পাশে থেকেছি৷ এবারেও থাকব৷ দলের ওপরে তো আর কেউ নয়৷’’
রফিকের না-বলা কথা, একান্তে বলছেন জেলায় জেলায় তৃণমূল নেতারা৷ কোথাও যেন একটা যোগ্য সম্মান না-পাওয়ার দুঃখ, ক্ষোভের সুর৷ দলনেত্রীর নির্দেশে চলছে সেই ক্ষোভ প্রশমনের কাজ৷ কিন্তু তালিকা প্রকাশের পর সেই ক্ষোভ আরও বড় আকার ধারণ করবে না তো? সংশয়ে ক্ষোদ শীর্ষ নেতৃত্বরাই৷