
সুমন বটব্যাল ও পলাশ নস্কর, কলকাতা: ‘কেশপুর লাইন’, ‘পাঁশকুড়া লাইনে’র পর এবারের পঞ্চায়েত ভোটে হিট হতে পারে পূর্ব মেদিনীপুরের ‘নন্দকুমার লাইন’৷ বড় কোনও অঘটন না ঘটলে আগামী বছরের গোড়ায় অনুষ্ঠিত হতে চলা রাজ্যের ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে দেখা মিলতে পারে নয়া রাজনৈতিক সমীকরণ৷ ইতিমধ্যেই বিজেপির কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) যার নামকরণ করে দিয়েছেন, ‘‘নন্দকুমার লাইন!’ তৃণমূলকে হঠাতে সিপিএমের সঙ্গে জোট বাঁধার ইঙ্গিত দিয়েছেন৷ লক্ষ্মীবারের সকালে নিউটাউন ইকোপার্কে প্রাতঃভ্রমনে এসে সেই ইঙ্গিত সামনে এনেছেন মেদিনীপুরের সাংসদ, ‘‘নন্দকুমারে মানুষ দেখিয়ে দিয়েছে কি করতে পারে। পাবলিক বিরুদ্ধে চলে গিয়েছে।’’
তাহলে কি নন্দকুমার লাইনেই শাসককে তখত থেকে উৎখাতের পরিকল্পনা? মুচকি হেসে নীরব থেকেছেন দিলীপ৷ টেলিফোনের ওপার থেকে দলের প্রথমসারির আরেক নেতার জোরাল সমর্থন, ‘‘দিলীপদা ভুল কিছু বলেননি৷ উনি সাধারণ কর্মীদের সঙ্গে থেকেই আজও সংগঠন করেন৷ নিজের মতো করে জেলায় জেলায় সফর সারছেন৷ ফলে নীচুতলার কর্মীদের মনের ভাবটা উনি অনেকের থেকে ভাল বোঝেন!’’ অর্থাৎ, প্রকাশ্যে জোট না হলেও জেলায় তস্য ব্লকের তস্য গ্রাম পঞ্চায়েতে নীচুতলার অ-তৃণমূল কর্মীরা একত্রিতভাবে জোট বেঁধে শাসকের বিরুদ্ধে একক প্রার্থী দাঁড় করালে তাতে যে দলের বিশেষ আপত্তি থাকবে না, প্রাতঃভ্রমণের ফাঁকে কৌশলে সেকথাটাই দলীয় কর্মীদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন দক্ষ রাজনীতিক দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)৷
দিলীপের কন্ঠে শুভেন্দুর খাসতালুক পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমারের নাম কেন? কেনই বা ‘নন্দকুমার লাইন’ এর নামকরণ? জানতে হলে, ফিরতে হবে চলতি বছরের ৬ নভেম্বরে৷ পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমার ব্লকের চকসিমুলা গ্রাম পঞ্চায়েতের বহরমপুর কো-অপারেটিভ এগ্রিকালচার ক্রেডিট সোসাইটি লিমিটেডে রবিবার ছিল পরিচালন সমিতির নির্বাচন৷ শাসককে কুপোকাত করতে এখানে বিজেপি ও সিপিএম যৌথভাবে পশ্চিমবঙ্গ সমবায় বাঁচাও সমিতি গঠন করে৷ মোট ৬৩ টি আসনের মধ্যে আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৫২টি আসনে জিতেছিল পশ্চিমবঙ্গ সমবায় বাঁচাও সমিতির সদস্যরা। রবিবার ১১টি আসনে ভোট হয়৷ ফল প্রকাশের পর দেখা যায় সেখানেও বিরোধীদের জয় জয়কার৷ সূত্রের খবর, তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীরা মোট ৪৬ টি আসনে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। তবে ভোটের আগেই তাঁদের ৩৫জন প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন৷ ঘটনার নেপথ্যে উঠে আসছে বিরোধীদের এককাট্টা হওয়া বনাম শাসকের গোষ্ঠী কোন্দল৷
একান্ত আলাপচারিতায় দিলীপ ঘনিষ্ঠরা বলছেন, জেলায় জেলায় পঞ্চায়েতের টিকিট পাওয়ার জন্য শাসকের অন্দরে ইতিমধ্যেই চোরাস্রোত বইতে শুরু করেছে৷ এমন আবহে শাসকের অন্দরের ক্ষোভের ফসলকে ঘরে তুলতে হলে দল, মত নির্বিশেষে শাসকের বিরুদ্ধে মানুষের জোট প্রয়োজন৷ নন্দকুমারে সেটা হয়েছিল বলেই শাসক খাতাই খুলতে পারেনি৷ শুভেন্দুর খাসতালুকের ওই উদাহরণ মুখে বলা যতটা সহজ, কার্যক্ষেত্রে তা বাস্তবায়িত করা যে অনেক কঠিন, সেটাও মানছেন নেতারা৷ তবে, ‘শত্রুর শত্রু, আমার মিত্র’ বহুল ব্যবহারে জীর্ণ প্রবাদকে হাতিয়ার করে যদি এসপার, ওসপার করা যায়! সেই আশাতেই নতুন করে বাংলা দখলের স্বপ্ন দেখছেন গেরুয়া শিবিরের নেতারা৷
আরও পড়ুন: কয়লা-গরু ‘পাচার’ মসৃন করতে পর্যাপ্ত উপঢৌকনের বিনিময়ে পুলিশি সাহায্যের নালিশ, উদ্বেগে শাসক
https://play.google.com/store/apps/details?id=app.aartsspl.khaskhobor